অপারেশন সিঁদুরে খতম হয়েছে কান্দাহার বিমান অপহরণকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড

দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রউফ আজহার ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে। কান্দাহার বিমান ছিনতাইয়ের সময় রউফের বয়স ছিল মাত্র ২৪।

Must read

আশিস গুপ্ত: অপারেশন সিঁদুরের সবচেয়ে বড় সাফল্য নিশ্চিত হল বৃহস্পতিবার, যখন সরকারি শীর্ষ গোয়েন্দা সূত্রে জানানো হয়েছে যে পাক পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মহম্মদের ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় খতম হয়েছে কুখ্যাত জঙ্গিনেতা আব্দুর রউফ আজহার। এই রউফ হল জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ছোট ভাই। এই ব্যক্তিই ১৯৯৯ সালের কান্দাহার বিমান ছিনতাইয়ের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাত। এই অভিযানে তার মৃত্যু নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর এক ঐতিহাসিক সাফল্য।

আরও পড়ুন-অপারেশন সিঁদুর দেখে পাক শেয়ার বাজার ধসের মুখে

দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রউফ আজহার ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে। কান্দাহার বিমান ছিনতাইয়ের সময় রউফের বয়স ছিল মাত্র ২৪। সেই সময় থেকেই সে সক্রিয়ভাবে ভারতবিরোধী জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত ছিল। ছিনতাইয়ের মাধ্যমে তারা দাদা মাসুদ আজহারকে ভারতের জেল থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা রউফেরই করা। সে ছিল গোটা পরিকল্পনার মাথা। সেই অপারেশনের ফলে কেন্দ্রের তৎকালীন বাজপেয়ী সরকার ভারতীয় পণবন্দিদের বাঁচাতে জঙ্গিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। রউফ জইশের অপারেশন হেড হিসেবে ২০০১ সালের সংসদ হামলা, ২০০৩ সালের নাগরোটা সেনা ঘাঁটি, ২০১৬ সালের পাঠানকোট এয়ার বেস এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিল। এইসব হামলায় অসংখ্য ভারতীয় নাগরিক ও সেনা নিহত হন। কুখ্যাত জঙ্গি আজহারের প্রতিটি কার্যকলাপ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নজরে থাকলেও এতদিন সে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আইএসআই-এর মদতে নিরাপদে বহাল-তবিয়তে ছিল বলে অভিযোগ। মাসুদ আজহারের অসুস্থতার পর থেকেই জইশের পুরো অপারেশনাল নেতৃত্ব নিজের হাতে তুলে নেয় রউফ। পাকিস্তানে সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর সে আফগানিস্তানে গিয়ে তালিবান ও অন্যান্য ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে জইশকে নতুন করে শক্তিশালী করার কাজ শুরু করে। বাহাওয়ালপুরে জইশের মূল প্রশিক্ষণ ঘাঁটিটি তারই তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হত। অপারেশন সিঁদুরে সেই ঘাঁটিতে বিমান হামলার সময়ই এই জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। এই সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জঙ্গি দমন অভিযানের একটি যুগান্তকারী অধ্যায় সূচিত হল। সূত্রমতে, বহু বছর ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে রউফ আজহারের অবস্থান ও তৎপরতা নিয়ে তথ্য বিনিময় চলছিল, তবে তাকে খতম করার সুযোগ এবারই প্রথম তৈরি হয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলি মনে করছে, রউফের মৃত্যুর ফলে জইশ-এর অভ্যন্তরীণ সংগঠন এবং নেতৃত্বের কাঠামোয় বড় ধাক্কা লাগবে, এবং তা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ও সংগঠনগুলির মনোবলেও আঘাত হানবে। এই ঘটনাকে ঘিরে ইসলামাবাদে অস্বস্তি বাড়ছে। কারণ রউফ আজহারের মৃত্যু শুধু এক জঙ্গি নেতার নিধন নয়, বরং পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি কাঠামোর এক গভীর ফাটলের ইঙ্গিতও বহন করছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা একে এক ‘ডিক্যাপিটেশন স্ট্রাইক’ বা নেতৃত্ব নিধন অভিযানের সার্থক নিদর্শন বলেই বিবেচনা করছেন। এই অভিযানে প্রমাণ হল যে, ভারত এখন কেবল প্রতিরক্ষামূলক নীতি নয়, বরং আক্রমণাত্মক কৌশলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। রউফ আজহারের মৃত্যুর পর দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এটা নিশ্চিত, ভারতের
জঙ্গি দমন অভিযানের ইতিহাসে অপারেশন সিঁদুর এক নতুন মাত্রা এনে দিল, এবং জইশ-এর মেরুদণ্ডে বড়রকমের চিড়
ধরিয়ে দিল।

Latest article