সংবাদদাতা, তমলুক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর স্যাঙাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে বাংলার ইতিহাস বা সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই পরিচিত নন, তার অজস্র নমুনা গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে পেয়েছে বাংলার মানুষ। মুখ খুললেই ভুল বকেছেন দুজন। শান্তিনিকেতনকে রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান বানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের বসার চেয়ারে গিয়ে বসে পড়েছেন! এবার লালকেল্লায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মস্থান অসমে বলে উল্লেখ করলেন মোদিজি।
আরও পড়ুন : ‘মাতঙ্গিনী হাজরা অসমের?’ প্রধানমন্ত্রীকে তোপ কুণাল ঘোষের
এমন আনাড়ি মন্তব্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে গোটা রাজ্যে। প্রবল ক্ষুব্ধ মেদিনীপুর জেলা। পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি ও মাতঙ্গিনী হাজরার যেখানে জন্ম, সেই এলাকার বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র মোদির বক্তব্যে তীব্র কটাক্ষ করলেন। বললেন, বিেজপি নানাভাবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করছেন। এটা গোটা পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে যেমন কলঙ্কজনক অধ্যায়, গোটা দেশের কাছেও তাই। আমরা অখণ্ড মেদিনীপুরবাসী হিসাবে কষ্ট পাচ্ছি। মা মাতঙ্গিনী জন্মেছিলেন এই মেদিনীপুরে। তিনি নাকি অসমের! মোদিজি স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বদলে দিলেন! তমলুকের বানপুকুরের পাড়ে যেখানে ব্রিটিশের গুলিতে মাতঙ্গিনীদেবীর মৃত্যু হয়েছিল, সেই রক্ত রাঙ্গামাটি, আজও বিপ্লবের ইতিহাসের স্মৃতি বহন করছে। সেখানে রয়েছে মাতঙ্গিনীদেবীর স্ট্যাচু। রয়েছে শহিদস্তম্ভ। তাই প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে অবিভক্ত মেদিনীপুরবাসীদের হৃদয় রীতিমতো জ্বলছে।’
আরও পড়ুন : সাফল্যের পালক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুলিতে, টুইট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মাতঙ্গিনীর বংশধর রাজেশ হাজরা মোদিজিকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৮৭০ সালের ১৯ অক্টোবর, তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুরের তমলুক থানার হোগলা গ্রামে জন্ম মাতঙ্গিনীর। পিতা ঠাকুরদাস মাইতি ও মাতা ভগবতী দেবী। গান্ধীবাদী ছিলেন বলে জেলায় ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তমলুক থানার সামনে ইংরেজ পুলিশের গুলিতে প্রয়াত হন ৭৩ বছরের মাতঙ্গিনীদেবী। এহেন প্রাণের মানুষকে ‘অসমের’ বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করায়, প্রবল ক্ষুব্ধ মানুষ।