ঘটনা ১ : বছর আটের তিন্নি ওর মা আর দিদার সঙ্গেই থাকে। রিমা একটি সরকারি স্কুল শিক্ষিকা। বাড়িতে বয়স্কা মা। তাঁর কাছেই তিন্নিকে রেখে বেরোতে হয় কারণ রিমা সিঙ্গল মাদার। তিন্নি ছোট থেকে দেখেছে ওর বাবা নেই। বাবাকে কোনওদিন চোখেই দেখেনি। মা আর দিদাই সব। সবার তো বাবা আছে তবে ওর কেন নেই! এই প্রশ্ন ওর মনে সারাক্ষণ। সারাটা দিন তিন্নির যেন কাটে না। স্কুল থেকে ফিরে বাড়ি জুড়ে সে শুরু করে দামালপনা। তবু ভাল লাগে না তার। দিদুন সারাক্ষণ বকতে থাকে। সবিতা দেবী পেরে ওঠেন না ওইটুকু বাচ্চার সঙ্গে। ভয়ঙ্কর কিছু দুষ্টুমি করে ফেলে। ইদানীং তিন্নির নতুন একটা স্বভাব হয়েছে ওর দিদুনের ফোন থেকে একটা পর একটা ফোন করতে থাকে যাকে-তাকে। ওদের অনেক আত্মীয়স্বজনের কাছে ফোন চলে যায় একাধিকবার, তাঁরা কখনও হাসে, কখনও-বা বিরক্ত হন। এক জায়গায় স্থির হতে পারে না সে। কিছু না কিছু করতেই হবে। বই দেখলে ছুটে পালায়। রেজাল্ট খুব খারাপ। খাতা ইনকমপ্লিট। মেরে-বকে কিছুই হয়নি। জেদ বাড়ছে দিনে দিনে। রিমা বুঝে পায় না কী করবে!
আরও পড়ুন-ভাল থাকার পাসওয়ার্ড
ঘটনা ২ : পর্ণমিতা ছোট থেকেই চুপচাপ। কোনও কথা বেরোয় না ওর মুখ থেকে। বাবা যখন নেশা করে এসে মায়ের সঙ্গে মারপিট করত অন্য ঘরের দরজা ফাঁক করে দেখত সে। ভয়ে কাঁপত। একবার বাবার হাতের সামনে পড়ে গিয়েছিল, তখন সপাটে একটা ঘুসি চালিয়েছিল বাবা একদম বুকে। কিছুক্ষণ দমটা আটকে গিয়েছিল। মা তড়িঘড়ি জল এনে মুখ-চোখে দিয়েছিল। একটা সময় মায়ের ওপর রাগটা বাবা ওর ওপর দিয়ে মেটাত। প্রতি রাতে বাবা মারধর করত আর সকালে নেশা কাটলে একটা চকোলেট দিত। সেই যে পর্ণমিতা চুপ, আজও মুখটা ওর খোলেনি। কেউ কিছু বললে ও ঘামতে থাকে। বাবাকে একটা সময় ছেড়ে দিয়েছিল মা। এরপর মা পর্ণমিতাকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে মানুষ করেছে। কোনও অভাব রাখেনি কিন্তু সেই দুঃসহ দিন ও ভুলতে পারে না। স্কুলে টিচাররা ক্লান্ত হয়ে যেত ওর নিশ্চুপতায়। একটা সময়ের পরে কাউন্সেলিং করাতে হয়। তারপর একটু স্বাভাবিক হল বটে তবে আজও কোনও পরিস্থিতিতেই ওর মুখ থেকে শব্দ বেরোয় না। কিছু ওষুধ চলে ওর। যা ওকে প্যানিক-মুক্ত রাখে। কিন্তু বেশি কোনও চাপ হলেই প্যানিক অ্যাটাক আসে। মাথা দিয়ে নাক দিয়ে গরম ভাপ বেরোয়। চোখ দিয়ে জল পড়ে। হার্টবিট বেড়ে যায়। গা-হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
ঘটনা ৩ : বছর ৪৫-এর যূথিকা। বাড়ির সব দায়-দায়িত্ব তারই। ছ’টায় উঠে বরের অফিসের টিফিন করে। তারপরেই ছেলের কলেজের টিফিন করতে হয়। এক-একদিন এক-একরকম টিফিন চাই তাদের। পছন্দ না হলে বিপদ। পুরোটা ফিরিয়ে নিয়ে চলে আসে। যাওয়ার সময় খেয়ে বেরোয় ওরা, সেখানেও একপ্রস্থ রান্না করতে হয় তাঁকে। পঁচিশ বছর একসূত্রে চলছে। বাড়িতে রয়েছে যূথিকার বয়স্ক বাবা-মা। বাবা অসুস্থ। তাঁদের সারাদিনের সব দেখভাল যূথিকাই করে। ছেলে-বর বেরিয়ে গেলে বাবাকে নিয়ে চলতে থাকে অক্লান্ত পরিশ্রম। এত করেও তুষ্ট নয় যূথিকার স্বামী অর্ণব। ছেলেরও মার প্রতি রাতদিন অভিযোগের পাহাড়। পান থেকে চুন খসলে বাবা, মাও ছেড়ে কথা বলে না। সারাদিন পর যখন রাতে শুতে যায় সে তখন বিরক্তি জুড়ে থাকে শরীর মনে, কোনও কিছুতেই শান্তি লাগে না। হাসতে ইচ্ছে করে না। রাতে অর্ধেক দিন সে খায় না। ইদানীং আরও বাড়ছে এই সমস্যা। মাথা জ্বলে, শরীর জ্বালাপোড়া করে, শুলেও ঘুম হয় না। ডাক্তারের কাছে গেছিল যূথিকা কেউ কোনও রোগ ধরতে পারেনি। এক অন্তহীন বিষণ্ণতা ওকে চেপে ধরেছে।
ঘটনা অনেক, কারণ একটাই, আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের মান নিম্নগামী। তারা অবসাদ, বিষণ্ণতার শিকার। আট থেকে আশি, শিশুকন্যা থেকে মধ্যবয়সি, বৃদ্ধা— সব বয়সের মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা পুরুষদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের অন্বেষণ আজও সোনার পাথরবাটি। কেমন সেই রেশিও একবার দেখে নিলেই চিত্রটা পরিষ্কার হবে।
কী বলছে গবেষণা
গবেষণা অনুযায়ী ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সি যাঁরা একবার হলেও নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই নারী। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির মেয়েদের মধ্যে নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। শিশু থেকে পরিণত— প্রতিটা বয়সের মেয়ে যাঁরা শারীরিক বা যৌন হিংসার শিকার হয়, সমীক্ষা অনুযায়ী তাঁদের ৭৮ শতাংশের বেশি আজীবন ট্রমা বা আঘাত থেকে বের হতে পারেন না এবং এঁদের মধ্যেই অনেকেই পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডারে ভোগেন।
শিশু বয়সেও বড় হয়ে শারীরিক ও যৌননির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ বা প্রতি তিনজনের একজন নারী আত্মহননের পথ বেছে নেন। আর প্রতি পাঁচজনে একজন বা ২২ শতাংশ নিজের কোনও না কোনও ক্ষতি করে বসেন। অথনৈতিক ভাবে পশ্চাদপদ নারী বা দরিদ্র নারীদের মধ্যে ২৯ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা বিত্তশালী নারীদের মধ্যেও আছে তবে তুলনায় কম। গবেষণায় উঠে এসছে কালো এবং এশীয় নারী অনেক বেশি বর্ণ বৈষম্যের শিকার ফলে এই নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সামাজিক কুসংস্কার ও বর্ণবাদ মেন্টাল ডিজ়অর্ডার বাড়িয়ে তোলে। ২৯ শতাংশ কালো, ২৪ শতাংশ এশীয় এবং ২৯ শতাংশ মিশ্র-বর্ণের নারীদের এমন ডিজঅর্ডার দেখা যায়। সমীক্ষা এও বলছে সাদা ও ব্রিটিশ নারী সেই তুলনায় মানসিক সমস্যায় কম ভোগেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাদের ক্ষেত্রে এই হার ১৬ শতাংশ। ন্যাশনাল মেন্টাল হেল্থ সার্ভে অনুযায়ী অ্যাংজাইটি ডিজ়অর্ডার ও ডিপ্রেশন পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে অনেকটাই বেশি, প্রায় তিন থেকে চার গুণ।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার হয়ে চলেছেন মহিলারা। কী ডাক্তার কী ইঞ্জিনিয়ার, কী অধ্যাপক বা পেশাদার— এমন নারী এদেশে কম রয়েছে যাঁদের সন্তানের মা হওয়ার খেসারত দিতে হয়নি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫৫%, চিনে ৬১% মহিলা রোজগেরে কিন্তু ভারতে মাত্র ২১% শতাংশ মহিলা রোজগেরে। অধিকাংশ ভারতীয় নারী বিয়ের পর কর্মজগৎ থেকে সরে গিয়ে বেতনহীন শ্রমিক হিসেবে সংসার এবং সন্তানের জোয়াল টেনে চলেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী বিবাহ-পরবর্তীতে পুরুষের কেরিয়ারগ্রাফ মহিলাদের চেয়ে অনেক উঁচুতে। এই চিত্রের বিরাট কিছু পরিবর্তন হয়নি। আমাদের দেশে শিশুশ্রম আইনত অপরাধ হলেও তা অবাধে চলে। রেশিও বলছে, শিশুশ্রমে শিশুকন্যার চাহিদা এক্ষেত্রে বেশি। দিন যতই বদলাক, মেয়েরা নিজেদের যতই আধুনিক ভাবুন না কেন, গোড়ায় গলদ হয়েই রয়েছে।
বয়ঃসন্ধিতে
দ্য ল্যানসেট পত্রিকার সমীক্ষা অনুযায়ী বয়ঃসন্ধিকালে অথবা বয়ঃসন্ধি পেরোনোর সময় মানসিক অবসাদ গ্রাস করছে কিশোর-কিশোরীদের। বিশেষ করে মেয়েদের কারণ। এই সময় তাঁদের বড় ধরনের হরমোনের পরিবর্তন হয়। সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, বয়ঃসন্ধির মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে বেশি অবসাদে ভুগছে। এর কারণ যে শুধুই ব্যক্তিগত জীবনের ঝড়ঝাপটা, তা নয়। শারীরিক কারণও রয়েছে। কিশোরীদের মধ্যে ‘মুড ডিজ়অর্ডার’-এর সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। মনখারাপ জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে তা চিকিৎসার পরিভাষায় ‘ডিপ্রেসিভ ডিজ়অর্ডার’-এ পরিণত হয়। এই সময় মেয়েদের শরীরে হরমোনাল ইমব্যালেন্স চলতে থাকে। মেনার্ক অর্থাৎ প্রথম মাসিকচক্র শুরু হওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে মানসিক সমস্যা কমবেশি আসতে শুরু করে যা পরিবার গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। এর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় নানা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। বয়ঃসন্ধিতে পিএমএস বা প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোমে ভোগে অনেক মেয়েই। এই সময় বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, সামাজিক ভয় এবং আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়। যা কারও সঙ্গেই শেয়ার করতে পারে না তারা। ঋতুস্রাব নিয়ে চলতে থাকা ট্যাবু ভেঙে বেরতে পারেননি অনেকেই।
আরও পড়ুন-ডিএম-দের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যসচিব
বিবাহ-পরবর্তীতে
বিয়ের পর একটা নির্দিষ্ট সীমা পেরোলেই এখনও এই সমাজে অধিকাংশ পরিবারে মেয়েদের সন্তানধারণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে শারীরিক অবস্থার তোয়াক্কা না করে সন্তানধারণে জোর দেওয়া হয়। সন্তান ধারণের এবং জন্মের সঙ্গে সঙ্গে ধরেই নেওয়া হয় সন্তানের জন্য মেয়েটিরই সব দায়। এর সূত্র ধরেই সন্তানের জন্মের পর মায়েদের পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন খুব বড় আকারে দেখা দেয়। তখন মানসিক অবসাদে ভোগেন অনেকেই। অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে পোস্টপার্টাম সাইকোসিসে পরিণত হয়। কারণ দেখা যায় যে সেই সন্তানটির জন্ম দিতে মেয়েটি তৈরিই ছিল না। এর ফলে পরিস্থিতির এই আমূল বদল মেনে নিতে পারে না। সুইসাইড বা আত্মহত্যার প্রবণতা, সদ্যোজাত শিশুকে হানি করার প্রবণতা তৈরি হয়। এই পরিস্থিতি মানসিক স্বাস্থ্যের পরিপন্থী হয়ে ওঠে। যাঁরা চাকরিরতা তাঁদের এই সময় পরিবার, সন্তান ও কর্মজগতের মধ্যে ব্যালেন্স করতে গিয়ে, সবদিকের দায়িত্বপালন, আর্থিক এবং সামাজিক প্রত্যাশার চাপে অবনতি ঘটে মানসিক স্বাস্থ্যের।
ঋতুবন্ধে
আরও গুরুতর মানসিক সমস্যা তৈরি হয় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। এই পর্বে মেনোপজ একটা বড় ধাক্কা বলা যায়। কারণ মহিলাদের গোটা জীবন জুড়ে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ইস্ট্রোজেন হরমোনের বড়ধরনের ভূমিকা থাকে। যে হরমোন তাঁদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেনোপজের পরে এই ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ কমে যায় যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে নারী শরীরে। যে রোগগুলো আটকে দিত ইস্ট্রোজেন তারা আগল খোলা হয়ে যায়। এই কারণেই হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়ার মতো মনের রোগ মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় একটা বয়সে পরে।
লিঙ্গ সাম্যের অভাব
সামাজিক বৈষম্য, পরিবেশগত বৈষম্য, শারীরিক বৈষম্য, মহিলাদের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ, ভেদাভেদ, শারীরিক নির্যাতন, উৎপীড়ন এই বিষয়গুলোই মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে দু’ভাবেই প্রভাব ফেলে। বাড়িতে, বাড়ির বাইরে, চাকরির জায়গায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হন মহিলারা। আসলে মহিলারা যে কোনও আর্থ সামাজিক পরিবেশেই থাকুক না কেন, তাঁরা কমবেশি গৃহহিংসার শিকার, যৌন হয়রানির শিকার। শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের শিকারও হতে হয় তাঁদের।
এখনও এদেশের বহু মহিলা নিজেদের বক্তব্য রাখতে পারে না। শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা থাকলেও মন খুলে কথা বলার অনুমতি নেই ফলে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। এর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার দৌরাত্ম্যে বেশ কিছু নতুন সমস্যা যোগ হয়েছে যার খুবই গভীর প্রভাব পড়ে মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। যেমন ট্রোল করা, বডি শেমিং করা, ধর্ষণের হুমকি বা স্টক করা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে অনলাইনের গণ্ডি পেরিয়ে এই বিষয়গুলি বাস্তব জীবনে ঢুকে পড়েছে। এর শিকার সব থেকে বেশি হন মহিলারা।
আরও পড়ুন-ডিএম-দের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যসচিব
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে
মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সবচেয়ে জরুরি হল পরিবারের এবং সমাজের সচেতনতা। শিশুবয়স থেকে বাড়ির মেয়েকে মন খুলে কথা বলতে শেখাতে হবে। কারণ সামাজিক চাপ, কুসংস্কার সর্বপ্রথম বাবা এবং মার থেকেই সন্তানের মধ্যে আসে। একটা উদার পরিবেশ দেওয়া পরিবারের কর্তব্য। মাসিকচক্র নিয়ে ছুঁতমার্গ, সোশ্যাল ট্যাবু থেকে শিশুকন্যাকে দূরে রাখুন।
সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানো, একে অপরের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা, নিজের সমস্যা বলতে এবং বোঝাতে পারা জরুরি। নতুন কিছু শেখানো যা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। মস্তিষ্কের নিউরনের সংযোগ শক্তিশালী করে এবং মানসিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। কাজেই সবার আগে পরিবারকে সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে।
শৈশব থেকেই পরিবারে পুরুষ সদস্যর পাশে লিঙ্গ সাম্যের অনুভব, নিরাপত্তার বোধ একটি মেয়েকে মনের দিক থেকে শক্তিশালী করে তোলে। ভাই, বোন আলাদা নয় তারা মানুষ। সমান যত্ন, সমান ব্যবহার একটি পুত্রসন্তানের পাশে কন্যাসন্তানেরও প্রাপ্য। বাড়ির ভাল খাবারটা, বড় মাছটা শুধু পুরুষদের পাতে নয় মেয়েদের পাতেও পড়া উচিত— এই ক্ষুদ্র বদল থেকেই অনেক বড় বদল আসবে।
নিজের একটা জগৎ গড়ে তুলুন। কারও জন্যই নিজের অস্তিত্ব যেন হারিয়ে না যায়। কর্ম মানুষকে অনেক বড় বড় মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় তাই নিজের পছন্দের কাজটি খুঁজে নিন। দশটা-পাঁচটার চাকরি না-ও করতে পারেন কিন্তু স্বাবলম্বী হওয়া জরুরি। আর্থিক স্বাধীনতা মনের জোর বাড়ায়। সেই সঙ্গে কাজের চাপ, টার্গেট, সময় মতো অ্যাচিভ করার আনন্দ, পজিটিভ চাপ— এই চাপ নেওয়া কর্মহীন হয়ে বসে থাকার চেয়ে ঢের গুণ ভাল।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন একটি শক্তিশালী কৌশল। নিয়মিত মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশা কমায় বা হ্রাস করে। মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন হল একটা মানসিক প্রশিক্ষণ যা কোনও ব্যক্তির মনের দৌড় কমাতে সাহায্য করে। নেগেটিভিটি সরিয়ে মনকে সেই মুহূর্তে শান্ত এবং সংযত করে। মন ঠিক সেই মুহূর্তে আটকে যায় অতীত বা ভবিষ্যতে ঘোরাঘুরি করে না। খুব গভীরে তিনবার শ্বাস নিয়ে এই মেডিটেশনে বসতে পারেন। আর কিছুই দরকার নেই। রোজ পাঁচমিনিট অভ্যেস করতে করতে বাড়ানো যায়।
লাইফস্টাইল মডিফিকেশন অর্থাৎ সকাল থেকে রাত— সঠিক নিয়মে চলা, পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া, হাঁটা বা দৌড়নো, যোগাসন, এক্সারসাইজ আপনার রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে যত স্বাভাবিক রাখবে তত মানসিক প্রশান্তি বাড়বে। সবচেয়ে জরুরি হল যে কোনও মানসিক সমস্যা যদি গুরুতর মনে হয় অবশ্যই মনোবিদের পরামর্শ নিন।