না মোদি-শাহ-বিজেপি-র নিজেদের বদলানোর কোনও দরকার নেই। কারণ, ৪০০ পার যে হবে না, সে তো একপ্রকার জানাই ছিল। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর আবেগের আবহ ছাড়া, আর কোনওবারই কোনও দলই ৪০০ ছোঁয়ার সম্ভাবনা স্বপ্নেও দেখেনি। তবু মোদি-শাহ-বিজেপি একটা অলীক চূড়ায় ওঠার খোয়াব বাজারে ভাসিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। তাতে কী? স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয়। সব সময় স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় না। তা বলে স্বপ্ন দেখা ও দেখানো বন্ধ করতে হবে, এ কেমন কথা! সুতরাং মোদিজির ভোলবদলের কোনও দরকার নেই।
না, মোদি-শাহ-বিজেপির নিজেদের বদলানোর কোনও দরকার নেই। কেন থাকবে? গত ১০ বছর ওঁরা কেন্দ্রে রাজ করেছেন বলেই না কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও প্রকার দোলাচলচিত্ততা দেখা যায় না। নোটবন্দি থেকে প্রতিবাদী কণ্ঠকে জেলবন্দি, কোনও সিদ্ধান্তই লৌহ কাঠিন্যহীন নয়। একেবারে অটল, প্রশ্নাতীত, সংশয়াতীত। নাৎসি জার্মানিতে হিটলারের সিদ্ধান্তগুলোও তো এমনটাই ছিল। একেবারে নড়চড় হত না সেগুলোর। প্রশ্ন করার জায়গা দেওয়া হত না।
আরও পড়ুন-বেনজির! ১৯৮৪ ও ২০১১-র দুই বিশ্বকাপার সংসদে টিম তৃণমূলে
আজ থেকে নয় দশক আগে নাৎসি জার্মানিতে শহুরে সম্পন্ন মানুষেরা সেসব সিদ্ধান্ত উদ্বাহু হয়ে সমর্থন করতেন। মোদিজিদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হচ্ছে। সুতরাং, ভোলবদল নিষ্প্রয়োজন।
না, মোদি-শাহ-বিজেপির নিজেদের বদলানোর কোনও দরকার নেই। তেলেঙ্গানা, ওড়িশাতে বিধানসভায় সরকার গড়েছে বিজেপি। কেরলে একটা আসন পেয়েছেন। এই রূপেই তো এত সাফল্য! তবে আর ভোল বদলানাের দরকার কী? তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ যে মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে আবার, তা নিয়ে ভাবার দরকার নেই।
না, মোদি-শাহ-বিজেপির নিজেদের বদলানোর কোনও দরকার নেই। মোদি গ্যারান্টি যে শূন্য কলসি, ফাঁপা আওয়াজ, সে তো মানুষ বুঝেই গিয়েছেন। মানুষ তো জেনেই গিয়েছেন, প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা ঢুকবে, এটা বড় জুমলা। আর মোদিজি যখন ৪০০ পারের কথা বলেছেন, তখন সেটা বিজেপির আসন সংখ্যা নয়, পেট্রোলের লিটার পিছু দাম আগামী দিনে কী হবে, তার অনুমান, তখন আর নতুন করে ঝুটো প্রতিশ্রুতি দিলে ক্ষতি বৃদ্ধি নতুন করে কী-ই বা হবে? সুতরাং ভোল বদল অপ্রয়োজনীয়।
তবু, তবুও দু-তিনটে কথা বলা দরকার।
(১) রাজস্থানের বংশওয়ারা। সেখানেই এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারকালে নরেন্দ্র মোদি প্রথম বললেন, বিরোধীরা যদি এবারের লোকসভা ভোটে জেতে, তাহলে তারা হিন্দুদের যাবতীয় সম্পত্তি কেড়েকুড়ে নিয়ে সেসব তাদের দিয়ে দেবেন যাদের ছেলেমেয়ের সংখ্যা বেশি। সেই সম্পত্তির মধ্যে হিন্দু নারীদের মঙ্গলসূত্রও থাকবে।
এরকম ন্যক্কারজনক ঘৃণাভাষণ সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু রাজস্থানের ওই কেন্দ্রে বিজেপি জেতেনি। জিতেছে ভারত আদিবাসী পার্টির প্রার্থী। ওই দলটি ইন্ডিয়া ব্লকের সদস্য।
এরপরেও যদি মোদি-শাহ-বিজেপি নিজেদের বদলাতে না চায়, ক্ষতি কী তাতে!
(২) গুজরাতের বংশকণ্ঠতে মোদি ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করে বলেছিলেন কংগ্রেস জিতলে আপনাদের যে দুটো করে মহিষ আছে, তার একটি কেড়ে নিয়ে চলে যাবে।
মানুষ সে-কথা এতটাই বিশ্বাস করেছেন যে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ওই প্রার্থীর নাম জ্ঞানীবন ঠাকোর।
২০০৯-এর পর এবারই প্রথম গুজরাতে একটা লোকসভা আসন বিজেপির ঝুলিতে গেল না।
এরপরেও, সত্যি বলছি, মোদি-শাহ-বিজেপির নিজেদের বদলানোর দরকার নেই। এরকম যত থাকবেন, তত আরও পতন সুনিশ্চিত হবে।
আগাম অভিনন্দন রইল।