প্রবীর ঘোষাল, দোহা: মঙ্গলবার রাতে খেলা শুরু হওয়ার ঢের আগে থেকেই লুসেইল স্টেডিয়াম এবং দোহা চলে গিয়েছিল এই গ্রহের ফুটবলের বিস্ময় নক্ষত্র লিওনেল মেসির দখলে। সকাল থেকেই দেখছিলাম, কাতার বিশ্বকাপ কতটা মেসি-ময় (Messi Magic) হয়ে উঠেছে। রাস্তায় রাস্তায় আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সি পরে কাতারে কাতারে মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাতে হয় মেসির ছবি, নয় তো সে দেশের নীল-সাদা পতাকা। এরা যে সবাই মারাদোনার দেশের মানুষ তা কিন্তু নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা। স্রেফ মেসির টানে এসেছেন কাতার বিশ্বকাপ প্রত্যক্ষ করতে। বুধবারও সারাদিন রাস্তাঘাটে উন্মাদনা দেখা গিয়েছে। যেন আর্জেন্টিনা কাপ জিতেই গেছে।
মেট্রোতে চেপে স্টেডিয়ামে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম, আমাদের কামরায় এক মহিলার ওপর বেশ কিছু ব্যক্তি ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কী ব্যাপার? লেবাননের জেসমিন বিয়ে করেছেন কেরলের আবু বকরকে। তাদের মোবাইলে সদ্য তোলা মেসির সঙ্গে ছবি। আর যায় কোথায়। সেই ছবি দেখতে হুড়োহুড়ি। দু’দিন আগে খেলার মাঠেই এক মুহূর্তের জন্য মেসিকে সামনে পেতেই ক্যামেরাবন্দি করেছেন। জেসমিন দম্পতির দাবি, স্বপ্নের মানুষকে পেয়ে গেছি, আর আল্লার কাছে কিছু চাওয়ার নেই।
স্টেডিয়ামের লাগোয়া বিশাল ফ্যান জোন। আলোর রোশনাই বিভিন্ন ব্যান্ডের গান-বাজনা আর মানুষের উন্মাদনার মিলে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ। সেখানেও সব যেন মেসিরই হাতের মুঠোয়। ক্রোয়েশিয়ার দেখতে দেখতে তিনটি বিশ্বকাপে তাক লাগানো খেলা হয়ে গেল। কিন্তু ফ্যান জোনে দেখলাম, লুকা মদ্রিচের সমর্থকরা হাতে গোনা মাত্র। ঘুরে বেড়ানো জনতার মাঝে বরাহনগরের সুমন কুণ্ডু আর খড়দার উজ্জ্বল মণ্ডল মজা করে বললেন, আসলে ব্রাজিলের যেসব সমর্থক এখনও দোহায় আছে, তারাই ক্রোয়েশিয়ার জন্যে আশায় বুক বেঁধে বসে আছে।
আরও পড়ুন-সৌদি-হারের পর সব ম্যাচই ছিল ফাইনাল
বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে স্টেডিয়ামে ঢুকেও একই দৃশ্য দেখলাম। হাজার হাজার মেসি (Messi Magic) ভক্ত দু’হাত নাচিয়ে ‘আমরা করব জয়’ গোছের গান নিজেদের ভাষায় গেয়েই চলেছে। ব্যান্ড মিউজিক বাজছে সমানে। শুরুর বাঁশি বাজার এক ঘণ্টা আগে গা ঘামাতে সদলবলে মাঠে এলেন মেসি। সকলের গায়ে সাদা গেঞ্জি। গ্যালারির গর্জন শুনে ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকরা একেবারেই কুঁকড়ে গেল। আর্জেন্টনার জার্সি গায়ে চাপিয়ে যখন মেসিরা ঢুকলেন, দলের সমর্থকরা সেই যে নাচা-গানার গতি বাড়িয়ে দিল, সেটা শেষ হল সমাপ্তির বাঁশি বাজার পর। মেসি-ম্যাজিকে আছন্ন হয়ে রইল স্টেডিয়াম। মাঠ থেকে বেরবার সময় দেখা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অন্যতম কর্তা রাজা গুহের সঙ্গে। রাজাদের চার-চারটে বিশ্বকাপে মেসির খেলা দেখা হয়ে গেল। তাঁদের আফসোস, এই শেষ! ফুটবলের রাজপুত্রকে ভবিষ্যতে আর কোনও বিশ্বকাপে দেখা যাবে না।