বেশিরভাগ ‘বাজি’ই তিনি জিতে ফেরেন। ভাগ্য নয়, মনের জোরই মূলধন। ব্যক্তিগত জীবনের নানা ওঠাপড়া যেমন সামলে নেন তেমনই কর্মজগতেও কামাল করেন আকাশছোঁয়া আত্মবিশ্বাসে। সাংসদ ও অভিনেত্রী— দুই ভূমিকাতেই সমান দড় মিমি চক্রবর্তী তাই আক্ষরিক অর্থেই আধুনিক নারীর সংজ্ঞা। মিমির সঙ্গে অকপট আলাপচারিতায় প্রীতিকণা পালরায়
আরও পড়ুন-মানুষের শরীরে বসল শূকরের কিডনি
দশ বছর পার হল ইন্ডাস্ট্রিতে। মানুষ ‘পুপে’র কথা বেশি বললেও আকাশ বাংলায় ‘চাম্পিয়ন’ দিয়ে আপনার অভিনয় কেরিয়ার শুরু। সেখান থেকে টালিগঞ্জের অন্যতম সেরা হিরোইন। একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজের কেরিয়ার গ্রাফ নিজের কতটা পছন্দ?
মিমি : দেখুন, আমি যাকে বলে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছি। যেখান থেকে আমি এসেছি, যেভাবে আমি আমার কেরিয়ার শুরু করেছি আর তারপরে যা যা আমি পেয়েছি বা অ্যাচিভ করেছি অবশ্যই এখনও অবধি, তাতে আমি খুবই খুশি। জীবনে পছন্দ-অপছন্দের থেকেও খুশি থাকার প্রশ্ন বেশি মানে রাখে আমার কাছে। আর যেটুকু বা যতটুকু কাজ এখনও অবধি আমি করতে পেরেছি তার জন্যেই তো এত মানুষ আমায় চেনেন ও জানেন। তার মানে আমার কাজ এতগুলো বছর ধরে মানুষ দেখছেন ও মনে রেখেছেন। এটাই তো বিরাট পাওয়া। আমি সবচেয়ে কৃতজ্ঞ ঈশ্বরের কাছে। একই সঙ্গে এই দশ বছরে আমার সমস্ত ভাল-খারাপ মানুষের সামনেই ঘটেছে। তাঁরা আমার পাশে থেকেছেন, আমায় ভালবেসেছেন। আমার ফ্যানদের কাছেও তাই আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। আর আমার বাবা-মা। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁরা আমার সঙ্গে থেকেছেন। সব মিলিয়ে আমি খুশি আর সেটাই আসল আমার কাছে।
আরও পড়ুন-ইবি কর্তার প্রোফাইল ক্লোন, যুবক গ্রেফতার
মফস্বলের সাদামাটা মেয়েটা কলকাতার কলেজে পড়তে এসেছিল। খানিকটা কৌতূহলের পাল্লায় পড়েই প্রথমে মডেলিং ও তারপর রুপোলি পর্দার সঙ্গে পরিচয়। আর রুপোলি পর্দা এনে দিল আরও বৃহৎ রাজনৈতিক ক্ষেত্র। দুই জগতেই জয়ীর মুকুট। কখনও মনে হয়েছে আপনার জীবন নিয়েও দিব্যি একটা সিনেমা বানানো যায়?
মিমি : আসলে গ্রাম, মফস্বল বা শহর কোনওটাই মেজর ফ্যাক্টর বলে আমি মনে করি না। আসল ব্যাপারটা হল কাজের প্রতি অনেস্টি ও ডেডিকেশন। আরও একটা ব্যাপার প্যাশন। এই ফ্যাক্টরগুলো এক জায়গায় হলে আপনি কোথা থেকে এসেছেন তার থেকেও প্রাধান্য বেশি পায় আপনি কী কাজ করছেন। আমার ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে। তবে আমার জীবন নিয়ে সিনেমা বানানো যায় কি না তা আমি বলতে পারব না, যাঁরা সিনেমা বানান তাঁরা বলতে পারবেন ভাল। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আমি এখনও তেমন কিছু অর্জন করে উঠতে পারিনি, আমার চেয়ে আরও অনেক গুণী মানুষ আছেন এ দেশে, যাঁদের জীবন অনেক বেশি ইন্সপায়ারিং। আর আমি খুব ভেবে বা মেপে চলি না জীবনে। জীবন যেভাবে চালায় সেভাবেই এগোই। আরও অনেক কাজ বাকি।
সাবলীল অভিনয়ের জন্য মিমির খ্যাতি। পুপে, দোলা, রিয়া, দুর্গা, মঞ্জরী, ঊর্মি— নিজের অভিনীত কোন চরিত্র সবচেয়ে পছন্দ?
মিমি : আমার পক্ষে এটা বলা খুব শক্ত। সব চরিত্রই আমি সমান অনুভূতি নিয়ে আত্মস্থ করি। তবে যে চরিত্র দুটোর জন্য আমার পরিচিতি ও খ্যাতি, সেই ‘গানের ওপারে’র পুপে ও ‘বোঝে না সে বোঝে না’র রিয়া আমার কাছে স্পেশাল। আমার কেরিয়ারের ক্ষেত্রে এ দুটোই মাইলস্টোন। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ না হলে আমাকে কেউ মেনস্ট্রিম কমার্শিয়াল হিরোইন হিসেবে হয়তো ভাবতই না।
কিন্তু মেনস্ট্রিম কমার্শিয়াল হিরোইনদের ক্ষেত্রে একটা অন্য সমস্যাও তো হয়। একটা ট্যাগ পড়ে যায়, অন্য ধারার ছবির ক্ষেত্রে যা অন্তরায়। এই দুই ধরনের ছবিতে অভিনয় নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কীরকম?
মিমি : দেখুন, প্রথম কথা আমি এই ‘স্ট্রিম’ ডিফারেন্সটা মানিই না। প্রযোজকরা ছবি বানান লাভের আশায়। যে ছবি সেই ব্যবসা দেয়, রেভিনিউ দেয়, সেটাই কমার্শিয়ালি সাকসেসফুল ছবি। এবার যদি নিজের কথা বলি, তাহলে বলতে হয়, আমি শুরু করেছি ‘গানের ওপারে’ দিয়ে, তারপর আমি করেছি, ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’, ‘প্রলয়’, ‘কী করে তোকে বলব’,’ যোদ্ধা’, ‘খাদ’, পোস্ত । বর্তমানে যে ছবিগুলো করছি বা করেছি, তার মধ্যে ‘বাজি’ যেমন আছে, ‘খেলা যখন’ও আছে। এরপরেও যদি কেউ বলে কমার্শিয়াল ও অন্যধারার ছবির হিরোইনদের মধ্যে ভাগ আছে তাহলে সেটা দুর্ভাগ্য। আমরা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা হলাম জলের মতো, যে পাত্রে ঢালা হয় তার আকার ধারণ করি। ডিরেক্টররা আমাদের জন্য যে চরিত্র ভাবেন বা সে চরিত্রকে যেমন দেখতে চান, আমরা তাই হয়ে উঠি। যেভাবে গাইড করেন তাই ডেলিভারি করি। মানুষ পর্দায় আমাদের দেখেন ঠিকই কিন্তু আমরা ডিরেক্টরের নির্দেশমতোই চলি। আর আমি যতটা ভালবেসে কোনও চ্যালেঞ্জিং চরিত্র করি ততটা আনন্দ করেই কিন্তু মেনস্ট্রিম ছবি করি। আজ যত মানুষ অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে চেনেন তা কিন্তু ওই কমার্শিয়াল ছবির জন্যই।
‘বাজি’ সফল হওয়ায় সেই মুকুটে আর এক পালক বোঝাই যাচ্ছে। এবার ‘খেলা যখন’-এর চ্যালেঞ্জিং চরিত্রটা নিয়ে কিছু বলুন।
মিমি : ‘খেলা যখন’-এর জন্য আমি রেডি ছিলাম দু’বছর আগে। নানা বাধাবিপত্তিতে ছবিটা হয় না। কোভিড একটা অন্যতম কারণ। পরে অনেক চেঞ্জ হয়েছে, আমি আর অরিন্দমদা এক রয়ে গেছি। গল্পটা প্রথম যখন শুনিয়েছিলেন আমায় অরিন্দমদা, তখনই আমার মনে হয়েছিল ‘ঊর্মি’ চরিত্রটা দারুণ চ্যালেঞ্জিং। অনেক ভেবেছি, অনেকটা সময়ও পেয়েছি ‘ঊর্মি’র সঙ্গে থাকার। তারপর শুট শুরু হওয়ার পর নিজের ক্ষমতার একশোভাগেরও বেশি দিয়েছি। বাকিটা দর্শক বলবেন। তবে এটুকু বলতে পারি, আমার কেরিয়ারে এরকম চরিত্র এই প্রথম। আর আমি খুব লাকি যে এই চরিত্রটার জন্য অরিন্দমদা আমার কথা ভেবেছেন কারণ টালিগঞ্জে মহিলাকেন্দ্রিক ছবি হাতেগোনা তৈরি হয়। তেমন একটা ছবির অংশ হতে পেরে আমি সত্যি কৃতজ্ঞ।
অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি আপনার একটা অন্যদিকও বেশ জনপ্রিয়। সেটা সাংসদ বা জননেত্রী হওয়ার কারণে নয়, মানুষ হিসেবেই একটা প্রতিবাদী চরিত্র আছে আপনার। ডিপ্লোম্যাটিক্যালি এড়িয়ে যেতেই পারেন কিন্তু তা না করে আপনি স্পষ্টবক্তা। এটা সত্যি তো?
মিমি : প্রতিবাদী কি না বলতে পারব না কিন্তু মানুষ হিসেবে ঠিককে ঠিক আর ভুলকে ভুল বলতে আমার বাধে না। এই স্বভাবটা সত্যিই আছে। কারণ আগেই বলেছি, আমি যে কাজই করি, সততার সঙ্গে করি। যেটা মনে হয় বলা দরকার বলে দিই। আগেও বলেছি এখনও বলি, ভবিষ্যতেও তাই বলব। এবার সেটা আমার প্রতিবাদ না সততা তা আমি জানি না। কিন্তু মিমি চক্রবর্তী ওটাই।
অভিনেত্রী, গায়িকা, সাংসদ, মা-বাবার আদুরে কন্যা, কোন ভূমিকায় সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ?
মিমি : একজন নির্ভেজাল ভাল মানুষের ভূমিকায়।
রোজ ঘুমোতে যাওয়ার আগে আয়নার মিমিকে কী বলেন?
মিমি : আমার বেডরুমে কোনও আয়নাই নেই!