যৎকিঞ্চিৎ

পরিমাণের চেয়ে মানের উপর ফোকাস করাই মিনিমালিজম। অযথা ভারী পোশাক, গয়নার ওজনভারে ভারাক্রান্ত না হওয়াই মিনিমালিজম। ত্বক চুল, মেক-আপ থেকে শুরু করে পোশাক, গয়না, এ-যুগের সবকিছুরই মূলমন্ত্র মিনিমালিজম। যার অর্থ একটুও বাড়তি নয়, সৌন্দর্যের সরল, স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ। লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

মিনিমালিস্ট মেক আপ! সে আবার হয় না কি! শব্দটা যখন মেক আপ তখন তা ‘মিনিমাল’ বা ‘নামমাত্র’ বা ‘যতটা না হলেই নয় ততটা’ এমন শব্দবন্ধের কোনও জায়গা নেই। মেক আপ তো মেক আপই তার আবার মিনিমাল কী? বিয়ে হোক বা উৎসব অনুষ্ঠান রোজ রোজ তো আসে না, এক-আধবারই তো সাজে মানুষ তাই না। সামনেই পুজো। সেই মহা উৎসবের আলোর ঝলকানি, লক্ষ্য ভিড়ের মাঝে যদি আমাকে চেনাই না গেল তাহলে আর নতুন জামা, জুতো, সাজগোজ গয়নায় লাভ কী!

আরও পড়ুন-প্রথমবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মহালয়া

এই তো সেদিনের কথা। ২০২২-এ বিয়ের সানাই বেজেছিল বলিউডের কাপুর আর ভট্ট পরিবারে। আলিয়া ভট্টের বিয়ের সাজটা এখনও স্মৃতিতে বেশ তাজা। ভারী সুন্দর সেজেছিলেন আলিয়া। ওই যেন কিছুই সাজেননি অথচ সবটাই সেজেছেন এমন একটা বিষয়। নো মেক আপ লুকে নয়, নিজেকে দিয়েছিলেন মিনিমালিস্টিক ওয়েডিং লুক। আসলে নো মেক আপ লুক কথাগুলোর মধ্যে একটা কোথাও মেক আপ-মেক আপ বিষয় রয়েছে। আলিয়ার এই ইউনিক লুকটা ঠিক তা নয়। স্মার্ট, এলিগ্যান্ট, ছিমছাম মিষ্টি একটা সাজ। সেই সাজে কোথাও কোনও লুকোচুরি নেই। এর পিছনে কিন্তু মেক-আপ আর্টিস্টের হাতযশ ছিল না মোটেই। আলিয়া নিজেই এমন শর্তে কনে সেজেছিলেন। মিনিমাল মেক আপ, আর্দি কালার প্যালেট, সূক্ষ্ম, নিখুঁত, লাইট ওয়েট, মিনিমাল ডিজাইনের জমকালো ব্রাইডাল লেহেঙ্গায় কনে সাজই ছিল আলিয়ার প্রথম শর্ত। আলিয়ার মেক আপ আর্টিস্ট পুনিত যখন তাঁকে সাজানোর জন্য দুটো ঘণ্টা সময় চেয়েছিলেন আলিয়া সটান না করে দিয়েছিলেন। আলিয়ার কথায়, তিনি বিয়ের দিনে সাজগোজে সময় নষ্ট না করে চিল করতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ বিয়ের দিনটা রিল্যাক্স মুডে সেলিব্রেট করতে চেয়েছিলেন। বিয়েটা তাঁর সাজগোজ বা পোশাকের প্রদর্শনী ছিল না। ছিল তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত, বিশেষ ভাল লাগার দিন। তাই সেই বিশেষ দিনে দু’-তিনঘণ্টা মেক আপ-এ সময় ব্যয় করে অযথা বিয়ের দিনটাকে হেকটিক করে তুলতে চাননি। তাঁর মতে, সৌন্দর্যে বহিঃপ্রকাশ সবসময় সহজ স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আলিয়ার জীবনের মূলমন্ত্রই হল, যেটা করতে হবে সেটা দ্রুত করে ফেলো। কোনওকিছুতেই খুব বেশি সময় দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি নন। আসলে এর পিছনে একটা গুরুতর কারণও রয়েছে। শৈশব থেকেই আলিয়া একটি বিশেষ মানসিক সমস্যার শিকার যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডার বা এডিডি। যে কারণে ছোট থেকেই তিনি কোনও কাজ স্থিরভাবে করতে বা একটানা বসে মনোযোগ দিয়ে কিছু করতে পারতেন না। এডিডি যাঁদের থাকে তাঁদের মধ্যে অস্থিরতা, চঞ্চলতা, অন্যমনস্কতা, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা না করতে পারা, আবেগপ্রবণতা, বিলম্ব অথবা হাইপারাক্টিভিটি ইত্যাদি খুব কমন উপসর্গ। ফলে তিনি তাঁর এই সমস্যার মোকাবিলা করিন নিজের মতো করেই। যে কোনও কাজ দ্রুত সঙ্গে করার অভ্যেস তাঁকে এই সমস্যায় বেগ পেতে দেয়নি। তাই বিয়ের দিনটাও যাতে তাঁর কাছে অস্বস্থিরতার, অধৈর্যের না হয়ে যায় সেই সঙ্গে বিশেষ দিনের প্রতিটা মুহূর্তকে আরও বেশি স্মরণীয় করে তুলতে পারেন সে-বিষয়ে লক্ষ্য রেখেছিলেন। আর সেই কারণেই তাঁর মিনিমাল ড্রামাটিক লুক মুগ্ধ করেছিল সকলকে।

আরও পড়ুন-গ্রাহক স্বার্থে বিজ্ঞপ্তি পরিবহণ দফতরের আরটিও, এআরটিওতে এবার পুজোয় চালু ওয়ার্ক ফ্রম হোম

মিনিমাল সাজ বা মেক আপ আলিয়ার ভট্টের ব্যক্তিগত পছন্দ হলেও অনেকেই হয়তো এই বিষয় দ্বিমত পোষণ করবেন। নিজের বিয়েতে, উৎসবে, অনুষ্ঠানে সাজতেগুজতে দু’ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা দিতে অনেকেই প্রস্তুত। কিন্তু সাজগোজ, মেক-আপ, স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার— সবক্ষেত্রেই মিনিমালটাই এখন ট্রেন্ডে। চুটিয়ে সাজ আর না, এখন সাজ-পোশাক, গয়না, মেক আপ হবে মিনিমাল। বিয়ের কনে মানেই ভারী সাজ, চড়া মেক-আপ, বিপুল পরিমাণ ওজনের লেহেঙ্গা আর ভারী ভারী গয়নার ভারে ন্যুব্জ, গলদঘর্ম হয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসা বা পার্টি, উৎসব অ্যাটেন্ড করার চেয়ে নিজেকে স্বচ্ছন্দ রেখে সাজগোজ করাটাই এখন মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছেন আধুনিকারা।
সাজ বা মেক-আপ সেটাই যেটা আপনি ক্যারি করতে স্বচ্ছন্দ। ভারী, চড়া মেক-আপ, ভারী গয়না, আর বেশ ওজনদার পোশাক পরলেই সাজ সম্পূর্ণ হয় না বরং ওটা নিজের ব্যক্তিত্বের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়ারই নামান্তর। নিজের ব্যক্তিসত্তার বাইরে গিয়ে মুহূর্তে ট্র্যাডিশনাল আধুনিক চটকদার কনে বা কন্যা হয়ে ওঠাটা জরুরি নয়, মেক আপ আর সাজের এই চোখ ঝলসে যাওয়া জমকালো ছবিটার উল্টো পিঠেই রয়েছে মিনিমালিস্টিক সাজ।

আরও পড়ুন-ছবি বিতর্কে সাসপেন্ড প্রান্তিক, রাজন্যা

মিনিমালিজম অর্থাৎ সাজকে, মেক-আপকে, নিজের যত্ন-আত্তিকে সরলীকরণ করে তোলা।
যেমন স্কিন মিনিমালিজম। এটি হল আপনার রোজকার স্কিন কেয়ার রুটিনকে সরল করে তোলা। পরিমাণের চেয়ে মানের উপর ফোকাস করা। তাই প্রথম শর্ত হল যা কিছু হবে সবটাই হবে হালকা অর্থাৎ লাইট ওয়েট এবং ন্যাচারাল লুকিং। লাইট ওয়েট যে কোনও সামগ্রী দিয়ে ত্বক পরিচর্যা করলে ত্বকও থাকবে হালকা এবং স্বাভাবিক।
নিজের স্বাভাবিক চেহারাকে এক রেখে শুধু মুখ বা চেহারার বিশেষত্বকে হাইলাইট করে তোলা। মেক-আপ হবে এমন যেটা মুখের স্বাভাবিক টেক্সচারকে ঠিক রাখবে। একটা হালকা ময়েশ্চারাইজার যা ত্বকে মিলিয়ে যাবে তার ওপর মেক-আপ লাইট বেস, লুজ পাউডার। নাক আর চিকবোন, জ লাইনে সামান্য, ব্লাশ অন দিয়ে হাইলাইট করে দেওয়া।
মুখের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হল চোখ। চোখটাকে ঠিক মতো ডিফাইন করলেই কেল্লাফতে। তবে অবশ্যই মিনিমাল আই মেক আপই ট্রেন্ডে। আইশ্যাডো দিয়েই চোখ শার্প লুক দিতে পারেন যত বেশি আর্দি টোন ব্যবহার করবেন তত মিনিমাল হবে চোখের লুক। যেমন বেজ, লাইট ব্রাউন, গোল্ডেন আন্ডার টোন ইত্যাদি। সঙ্গে মাসকারা ব্যস। আই লাইনার বা মোটা চওড়া কাজল জরুরি নয়। পরিবর্তে সরু আইলাইনার টেনে দেওয়া যেতে পারে চোখের ওপরে।

আরও পড়ুন-শহরের পুজো মণ্ডপ পরিদর্শন শুরু করল কলকাতা পুলিশ

পোশাক অনুযায়ী আইশ্যাডো, লিপস্টিক, মাস্কারা। বিয়ের কনের এগুলোর সঙ্গে থাকবে ছিমছাম কনেচন্দন। এবার শাড়ি বা লেহেঙ্গার সঙ্গে মানানসই একটা স্টেটমেন্ট জুয়েলারি পিস। হাতে একটাই ব্যাঙ্গেল বা চূড়। প্রচুর গয়না থাকলেও সাজের সঙ্গে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পরাই হল মিনিমালিজম।
ঠোঁটে লিপস্টিকের রং এই আসল মিনিমালিস্টিক টাচ জরুরি। গাঢ় আই মেকআপ আর হালকা ঠোঁট বা হালকা চোখ গাঢ় ঠোঁট এই কনসেপ্ট আর নেই। এখন ওভার অল নো মেক-আপ লুক যা আসলেই একটা মিনিমাল মেক আপ। বাড়তি সাজ নয়, পোশাকও নয়, গয়নাও নয়, যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু— সেটাও নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী এবং রুচি অনুযায়ী সহজ করে নিজেকে উপস্থিত করা— এটাই মিনিমালিজমের আসল কথা।

Latest article