কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে বিদেশে আলু পাচার হয়েছে। নভেম্বরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এই বেআইনি কর্মকাণ্ডে মদত রয়েছে কেন্দ্রের। এছাড়াও আলু গিয়েছে বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও স্টোর মালিকের কাছেও। মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় বিস্ফোরক এই অভিযোগ করেছেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্না। আলু-সংক্রান্ত বিষয়ে বলতে উঠে একের পর এক ভয়ঙ্কর তথ্য তুলে ধরেছেন মন্ত্রী। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন বেআইনিভাবে আলু (Potato) মজুত করলে রাজ্য সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে। বাইরে আলু পাচার রুখতে এবার সারপ্রাইজ ভিজিটে যাবেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। প্রয়োজনে রাতপাহারা দেবেন আলু পাচার রুখতে। ইতিমধ্যেই তিনি সারপ্রাইজ ভিজিটে বেরিয়ে পড়েছেন। তবে কোথায় হানা দেবেন, কখন হানা দেবেন সে-সব তথ্য গোপন রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিধানসভায় আলু নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর ক্ষোভের কথা চেপে রাখেননি।
এদিন মন্ত্রী জানান, ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর ৮ লক্ষ ৪৩ হাজার ২৯৪ মেট্রিক টন আলু (Potato) বাইরে চলে গিয়েছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে রাজ্যে। রাজ্যকে বিপাকে ফেলতে একশ্রেণির আলু ব্যবসায়ী ধর্মঘট চালাচ্ছেন। মন্ত্রীর অভিযোগ, ভিন রাজ্যে আলু নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মবিরতির নামে রাজ্য সরকারকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে আলু ব্যবসায়ীরা। রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে মালদহের মাইতাপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি, কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা দিয়ে ব্যাপক আলু বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে এবং প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী, পেছনে বিজেপি ও সিপিএমের কিছু নেতা কর্মবিরতির নামে রাজ্যের মানুষকে বিপাকে ফেলতে চাইছে। বেচারাম মান্নার কথায়, রাজ্য সরকার জনগণের স্বার্থে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে কোনও কড়া সিদ্ধান্ত নিতে বদ্ধপরিকর। ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলির ৪০টি হিমঘরে কার আলু কতটা পরিমাণ মজুত আছে, সে-ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে। কর্মবিরতি মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারের সমস্ত দফতর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের ২৬ টাকা প্রতি কেজি পাইকারি হারে আলু দেওয়ার কথা বললেও তারা দেয়নি। হুগলি এবং বর্ধমান জেলা থেকে কলকাতায় বড়-বড় ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা, ফোন নম্বর এবং চালান পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন- ভারী বৃষ্টি তামিলনাড়ুতে, জারি ‘হলুদ’ সতর্কতা, মৃত ১০
মন্ত্রী তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ৬ লক্ষ ২ হাজার মেট্রিক টন আলু গচ্ছিত আছে। ২০২৪-এ আলুর উৎপাদন ৫৮ লক্ষ ৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। তাঁর সংযোজন, ঘূর্ণিঝড় ডানা ও দুর্যোগের জন্য নতুন আলুর চাষ ১৫ দিন পিছিয়ে গিয়েছে। জানুয়ারির ১০-১৫ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মন্ত্রীর আবেদন, এদিন থেকে ৪০-৪৫ দিন পুরনো আলু চালাতে হবে। ১৮ হাজার মেট্রিক টন আলুর জোগান দরকার প্রতিদিন। কলকাতায় খরচ হয় ৫০০০ মেট্রিক টন। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে গড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে। শীতকালীন সবজি থাকে তাই। আরও একটি ভয়াবহ তথ্য হল, কৃষকদের কাছ থেকে ৬৫০ টাকা করে প্যাকেট কিনে ১০০০-১০৭০ টাকা করে বিক্রি করছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভ করতে চাইছে। এ জিনিস বরদাস্ত করা হবে না। প্রশাসন তার মতো করে কড়া ব্যবস্থা নেবে।