প্রতিবেদন: অপারেশন সিঁদুরে খতম হওয়া জঙ্গিদের দেহ পাকিস্তানের পতাকায় মুড়ে সেদেশের সেনাবাহিনী কেন শেষকৃত্য সম্পন্ন করল? এর থেকেই কি আরও স্পষ্ট হল না সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ? বৃহস্পতিবার এই প্রশ্ন তুলল ভারত। পাক সেনার তত্ত্বাবধানে নিহত জঙ্গিদের শেষকৃত্যের ছবি তুলে ধরে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি বৃহস্পতিবার তীব্র কটাক্ষ করলেন পাকিস্তানকে। লক্ষণীয়, বুধবার পাকিস্তানের মুরিদকেতে নিহত জঙ্গিদের দেহ শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যায় পাক সেনার পদস্থ কর্তারা। কফিনগুলি ছিল পাকিস্তানের জাতীয় পতাকায় মোড়া। লাহোর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বেশ কয়েকজন জঙ্গির শেষকৃত্য হয়। এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র ধিক্কার জানায় বিভিন্ন মহল। হাফিজ সইদের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়ার সদস্যরাও এই শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-‘মিশনে যাচ্ছি’, শহিদ হলেন ল্যান্সনায়েক দীনেশ শর্মা
উত্তেজনার উৎস পহেলগাঁওই, বিদেশসচিব এদিন জানান, পহেলগাঁও হামলাই ছিল প্রকৃত উত্তেজনার সূচনা। পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় বাহিনীর পাল্টা অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার এই বার্তাই দিল ভারত সরকার। কূটনৈতিক মহলের ভাষায়, এই অসামান্য প্রতিক্রিয়া মূলত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের নতুন কৌশলের প্রতীক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, অপারেশন সিঁদুর-এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে কেবল জঙ্গি পরিকাঠামোকেই নিশানা করা হয়েছে। মিশ্রির সাফ কথা, এই অভিযান ছিল উত্তেজনাবিহীন, নিখুঁত ও পরিমিত।
ছড়ানো হচ্ছে মিথ্যা তথ্য
তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে সীমান্তের ওপার থেকে প্রচুর মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তবে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, পহেলগাঁও হামলাই ছিল আসল উত্তেজনার সূচনা। আর তার জবাব দিয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী, তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েই। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের লক্ষ্য করে চালানো নৃশংস জঙ্গি হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান। সেই ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর, বুধবার ভোররাতে ১টা ৪ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনী একযোগে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে অন্তত নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হানে। এই অভিযানকেই বলা হচ্ছে ‘অপারেশন সিঁদুর’।
আন্তর্জাতিক চুক্তি
লঙ্ঘন পাকিস্তানের
ভারতের বিদেশসচিব জানান, পাকিস্তান একাধিকবার সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছে, যা একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, নিলম-ঝিলম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারত হামলা চালিয়েছে বলে পাকিস্তানের তরফে যে দাবি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি স্পষ্ট করে দেন, পাকিস্তান যদি এই অপপ্রচারের অজুহাতে ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তার সব দায়ভারই ইসলামাবাদকে বহন করতে হবে। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার প্রসঙ্গ তুলে মিশ্রি বলেন, ভারত সেই সময় পাকিস্তানকে বিস্তৃত তথ্য, প্রমাণ এবং অভিযুক্তদের পরিচয় দিয়েছিল। মামলা দায়ের হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হয়নি। তিনি জানান, পাঠানকোট হামলার তদন্তেও ভারত পাকিস্তানকে নজিরবিহীন সহযোগিতা করে। তদন্তকারীদের সরেজমিন পরিদর্শনের সুযোগ, ডিএনএ নমুনা, সন্ত্রাসবাদীদের ঠিকানা, এমনকী জইশ-ই-মহম্মদের হ্যান্ডলারদের নামও তুলে দেওয়া হয়—তবুও কোনও তদন্ত এগোয়নি। এই প্রেক্ষাপটে বিদেশসচিবের কটাক্ষ, “এই অভিজ্ঞতা মোটেই আশাপ্রদ নয়। পাকিস্তান যেভাবে ‘যৌথ তদন্তে সহযোগিতা’র কথা বলে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।” বিদেশসচিব সরাসরি বলেন, পাকিস্তান এখনও জাতিসংঘ-নিষিদ্ধ হাফিজ সাঈদ ও মাসুদ আজহারের মতো সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিয়ে চলেছে। তাঁর মন্তব্য, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজেরাই কখনও কখনও তাঁদের দেশের সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার কথা যতটা স্পষ্ট করে বলেছেন, সেটা সম্ভবত বিশ্বের আর কেউই বলেননি। সাফ বোঝা যাচ্ছে, পহেলগাঁও হামলার পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে অপারেশন সিঁদুর কেবল কূটনৈতিক বার্তাই নয়, বরং ভারতের পাল্টা কৌশলের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনাও।