গত ৪২ বছরে ভারতের অর্থনীতি এতটা খারাপ কখনও হয়নি। শুধু খারাপ বললেও বোধহয় কম বলা হবে। পেট্রােল, ডিজেল, গ্যাস এবং ভােজ্য তেলের ক্রমবর্ধমান দাম তার সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি (PRICE HIKE) যেহারে বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বেকারত্ব এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে ভারতবর্ষের যুবসমাজ আজ দিশাহীন। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বেকারত্বের হার ৭.৫% এ পৌঁছেছে। মুদ্রাস্ফীতি বিপদসীমা ছড়িয়ে গিয়েছে। আর কেন্দ্রের বিজেপি সরকার শুধুমাত্র ধর্মীয় হানাহানি, সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি ও প্রতিহিংসার রাজনীতিতে ব্যস্ত ও মত্ত। এই ভয়ঙ্কর মুদ্রাস্ফীতির হার যে কতটা সাঙ্ঘাতিক আকার ধারণ করেছে তা আমরা এই পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারব।
সামগ্রিকভাবে, জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১২ এপ্রিল, ২০২২-এ প্রকাশিত অল ইন্ডিয়া কনজিউমার ইন্ডেক্স (CPI) অনুসারে ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে ভোক্তা খাদ্যের মূল্য ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। দেশের খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার CPI অনুযায়ী মার্চ ২০২২ এ বেড়ে ৬.৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে। যা ফেব্রুয়ারিতে ৫.৮৫ শতাংশ ছিল। এটি ১৬ মাসের মধ্যে সর্বােচ্চ। ২০২১ সালের মার্চ মাসে গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য ভােক্তা খাদ্য মূল্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৩.৯৪ শতাংশ। এটি ২০২২ সালের মার্চ মাসে ৮.০৪ শতাংশে পৌঁছেছে। একইভাবে গ্রামীণ ভারতের জন্য CPI ও ২০২১ সালে ৪.৬১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭.৬৬ পৌঁছেছে ২০২২-এর মার্চে।
মার্চ মাসে গ্রামীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতিও ফেব্রুয়ারি ২০২২-এর একটা বড় বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে। যা মার্চ মাসে ৮.০৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ৫.৮১ শতাংশ ছিল।
২০২২ সালের মার্চ মাসে সমগ্র ভারতের জন্য ভোক্তা খাদ্য মূল্যের মূল্যস্ফীতি (গ্রামীণ ও শহর সহ) ৭.৬৮ শতাংশে পৌঁছেছে যা ২০২১ সালের মার্চ মাসে ৪.৮৭ শতাংশ ছিল।
তেল ও তৈলজাত দ্রব্য, শাকসবজি এবং মাংস ও মাছের মূল্যবৃদ্ধি (PRICE HIKE) মূলত এই মূল্যস্ফীতির কারণেই হয়েছে। বছরের পর বছরের তুলনা দেখলে বোঝা যায় যে তেল এবং তৈলজাত দ্রব্যের দাম ১৮.৭৯ শতাংশ বেড়েছে শুধুমাত্র এক বছরে। ভোক্তা খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যে এটি সর্বোচ্চে মূল্যবৃদ্ধি।
শাকসবজি ১১.৩৪ এবং মাছ ও মাংস ৯.৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া জ্বালানি ও আলোর সেগমেন্ট বেড়েছে ৭.৫২ শতাংশ। পোশাক এবং অন্যান্য ৯.৪০ শতাংশ। আবাসন ৩.৩৮ শতাংশ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি আট মাসের উচ্চতায় পৌঁছেছিল। এপ্রিল মাস আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। অথচ দেশের নেতিবাচক অর্থনীতির মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম। নীতি আয়োগের CEO অমিতাভ কান্তও বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ খুব কম রাজ্যের মধ্যে রয়েছে, সেগুলি মোট রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (GSDP) ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আরবিআইয়ের (RBI) তথ্য আরও নিশ্চিত করেছে যে মহামারী চলাকালীন অন্যান্য যে কোনও রাজ্যের তুলনায় বাংলার আর্থিক ব্যবস্থাপনা অনেক ভাল। তথ্য দেখায় যে ১২টি রাজ্যের এই বিষয়ে নেতিবাচক বৃদ্ধির সংখ্যা ছিল। তারমধ্যে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা সহ অন্যান্য রাজ্যও আছে। আরবিআই-র তথ্য অনুযায়ী নেট মাথাপিছু বৃদ্ধিতে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে রয়েছে।
সুতরাং কেন্দ্রের এই ব্যর্থ অর্থনীতির ফলে দেশ এক গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির হাল ভাল। তাই আজও বলতে হয়, ‘আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা ভাবেন আগামিকাল ভারতবর্ষ তাই ভাববে।’ আসুন, সবাই মিলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলি।
“যখন হয় স্বৈরাচারী সরকার
প্রতিবাদ তখন একমাত্র প্রতিকার।”