প্রতিবেদন : বন্ধুকৃত্য! ফের আদানিদের হাতে জলের দরে প্রাকৃতিক সম্পদ তুলে দিল মোদি সরকার। লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার মাত্র চারদিন আগে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের তীব্র আপত্তি অগ্রাহ্য করে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের (এপিএল) সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাহান এনারজেন লিমিটেডকে (এমইএল) মধ্যপ্রদেশের ‘মারা টু মহান’ কয়লা ব্লক (Coal Block) বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক। এই ব্লকে ৯৯৫ মিলিয়ন টন কয়লা রয়েছে বলে অনুমান ভূতাত্ত্বিক রিপোর্টে। গত ১২ মার্চ কয়লা মন্ত্রক আটটি কয়লাখনির জন্য ই-নিলাম পরিচালনা করে। এই খনিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় কয়লাখনি ‘মারা টু মহান’ পেয়েছে আদানির সহযোগী সংস্থা। পরিবেশ সংক্রান্ত আপত্তি উড়িয়ে ‘বন্ধু’ আদানিদের যথেচ্ছ মুনাফা লোটার সুযোগ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। আদানিদের এই সংস্থা নামমাত্র ৬ শতাংশ রাজস্ব ভাগের শর্তে ৯৫৫.৯৬ মিলিয়ন টন মজুতের কয়লা খনি (Coal Block) জিতেছে৷ পরিবেশ মন্ত্রক এতদিন এই কয়লা ব্লকটির নিলামে অনুমতি দেয়নি গভীর অরণ্য অঞ্চলটির সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে। এমনকী নিজস্ব বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শও অগ্রাহ্য করেছিল পরিবেশ মন্ত্রক। পরিবেশ মন্ত্রকের বিরোধিতা সত্ত্বেও কয়লা মন্ত্রকের ‘মারা টু’ ব্লক নিলামের সিদ্ধান্তের মূল কারণ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের একটি সমিতি, যার অন্যতম সদস্য মোদিবন্ধু আদানি গোষ্ঠী।
আরও পড়ুন-ভারতের চার হাজার বর্গমিটার এলাকা দখল করেছে চিন, প্রতিবাদে আন্দোলন পরিবেশকর্মী সোনমের
দেশের অন্যতম গভীর জঙ্গল এবার কেটে সাফ হয়ে যাবে আদানিদের কয়লাখনি তৈরির জন্য। কেন্দ্রের পরিবেশ দফতরের নিয়মকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্বাচনের আগে মধ্যপ্রদেশের নিষিদ্ধ এলাকার কয়লা ব্লক আদানিদের হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্র। এমনকী এর পিছনে কেন্দ্রের আমলাদের সংগঠনেরও বিরাট হাত রয়েছে বলে উঠে আসছে। বিরোধী দলের রাজনীতিকদের মতে, ইলেক্টোরাল বন্ডে শেল কোম্পানির মাধ্যমে বিজেপিকে ঢালাও অর্থ সাহায্য দেওয়ার বিনিময়ে আদানিকে ভোটের আগে বিজেপির উপহার।
মধ্যপ্রদেশের গভীর অরণ্য এলাকার মারা-২ মাহান কয়লা ব্লক নির্বাচন ঘোষণার কয়েকদিন আগে আদানি গোষ্ঠীর মাহান ইনারজেন লিমিটেডের হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। অথচ কেন্দ্রের কয়লা ব্লক নিয়ে উপদেষ্টা সংগঠন সেন্ট্রাল মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইন ইনস্টিটিউট দেশের ১৫ কয়লা ব্লক এলাকায় কয়লা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরিবেশ দফতরের নিষেধাজ্ঞার জেরেই কেন্দ্রের কয়লা ব্লক উপদেষ্টা সংস্থা মধ্যপ্রদেশের সিঙ্গরৌলি এলাকার এই কয়লা ব্লক সহ ১৫টি ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু আদানি গোষ্ঠীর মোহে অন্ধ বিজেপি এই সিদ্ধান্ত রিভিউ করার চেষ্টা করে। পাশাপাশি কেন্দ্রের আমলাদের সংগঠনের তরফে থেকে সিএমপিডিআই-এর কাছে ফের দরবার করা হয় এই কয়লা ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলনে অনুমতি দেওয়ার জন্য। ২০২৩ সালের অক্টোবরে এই সংস্থা নিজেদের রিভিউতে ফের সেই নিষেধাজ্ঞাই জারি রাখে। এরপরই প্রশ্ন ওঠে, পরিবেশ দফতর ও কেন্দ্রীয় পর্যালোচনা সংস্থার নিষেধাজ্ঞা টপকে কীভাবে কয়লা ব্লকের মালিকানা পেল আদানি গোষ্ঠী? পরিবেশ বা পরিবেশের উপর নির্ভরশীল সাধারণ মানুষের কথা যে কেন্দ্রের মোদি সরকার কোনওদিন ভাবে না তা লাদাখে পরিবেশ রক্ষায় প্রায় একমাস ধরে অনশন আন্দোলনের ঘটনাতেই স্পষ্ট। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রক মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলমহালের স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকার নস্যাৎ করে এবার আদানির ঝুলিতে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ তুলে দিল বিজেপি-বন্ধুর হাতে।