প্রতিবেদন: ক্ষমতায় থাকার লোভ সামলানো বড় কঠিন। অন্তত নরেন্দ্র মোদির পক্ষে। বিজেপি তাই নীরবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের ব্যাপারে টিডিপির সুদৃঢ় অবস্থান। এই নিয়ে আপত্তি করলে পাছে সমর্থন তুলে নেন টিডিপি-সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু, তাই ভয়ে টুঁ শব্দটি করছে না তারা। মোদি-শাহ খুব ভালভাবেই বুঝে গিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁদের ওজর-আপত্তিকে মোটেই পাত্তা দেবেন না চন্দ্রবাবু নাইডু। লক্ষণীয়, অন্ধ্রপ্রদেশে মুসলমানদের জন্য শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণব্যবস্থার কোনওরকম পরিবর্তন ঘটানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তেলেগু দেশম পার্টির সাধারণ সম্পাদক লোকেশ নাইডু। ভাবী মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর ছেলে লোকেশের যুক্তি, প্রায় দুই দশক ধরে এই প্রথা চলে আসছে এবং এটা মোটেই কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের তুষ্টকরণের জন্য নয়। এই নীতির লক্ষ্য, রাজ্যের মুসলমানদের দারিদ্র্যসীমার উপরে টেনে তোলা। তাঁদের সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসা। লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে টিডিপি নেতৃত্ব এবার প্রতিটি জনসভায় মুসলমানদের সংরক্ষণ বজায় রাখার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন। এর প্রধান কারণ, নির্বাচনের জোটসঙ্গী বিজেপি আগাগোড়াই মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণের বিরোধী। শুধু তাই নয়, এই সংরক্ষণ প্রথা তুলে দেওয়ার জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ, গেরুয়া শিবিরের বিশ্বাস, মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণ আসলে তুষ্টকরণের রাজনীতি। জোটসঙ্গী বিজেপির এই চিন্তাধারা যাতে মুসলিম ভোটারদের টিডিপির প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণার কারণ না হয়ে ওঠে তার জন্যই মুসলিম সংরক্ষণের প্রতি টিডিপির দায়বদ্ধতার কথা বারবার তুলে ধরেন চন্দ্রবাবু-লোকেশ।
আরও পড়ুন-তৃণমূলনেত্রীর দেখানো পথেই এবার শপথ বয়কটে ইন্ডিয়ার শরিকরাও
লক্ষণীয়, বিজেপি নেতারা অন্যরাজ্যে মুসলমান সংরক্ষণের বিরোধিতায় সরব হলেও অন্ধ্রপ্রদেশে কিন্তু সেভাবে এ নিয়ে রা কাড়েননি। যদিও পার্শ্ববর্তী তেলেঙ্গানায় সরব ছিলেন গেরুয়া নেতারা। লোকসভা ও বিধানসভায় বিপুল সাফল্যের পর কেন্দ্রে সরকার গঠন করার প্রাকমুহূর্তে নতুন করে করে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলেন লোকেশ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, এই প্রশ্নে তাঁরা বিজেপির আপত্তিকে মোটেই পাত্তা দেবেন না। ক্ষমতায় থাকার জন্য বিজেপি অবশ্য এ–জাতীয় বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে গিয়েছে বারবার। যেমন গোটা উত্তর–পূর্বাঞ্চলে গো–হত্যা ও গোমাংস ভক্ষণ নিয়ে তারা আদৌ সরব হয়নি। আসামে সিএএ ও এনআরসি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়।
আরও পড়ুন-চড়কাণ্ড, অভিযুক্তের সুবিচারের দাবিতে মিছিল
এখন দেখার বিষয়, নীতিগতভাবে বিরোধী হলেও কেন্দ্রে সরকার ধরে রাখা ও অন্ধ্র প্রদেশে সরকারের অংশ হওয়ার স্বার্থে বিজেপি মুসলমান সংরক্ষণ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে কীভাবে সমঝোতার রাস্তায় হাঁটে। বিষয়টি জটিল। কারণ, টিডিপি সংরক্ষণব্যবস্থা জারির পক্ষে অনড়, অথচ রাজ্যে রাজ্যে প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কংগ্রেস চায় সাধারণ মানুষের সংরক্ষণ কেড়ে মুসলমানদের দিতে। তাঁরা ক্ষমতায় এলে এই ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নেবেন। মোদি ও শাহর মতে, অন্য অনগ্রসরদের তালিকায় মুসলমানদের ঢোকানোর সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। ধর্মের আধারে সংরক্ষণ দেওয়া যায় না। তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে ২০০৭ সাল থেকেই মুসলমানদের জন্য শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে ৪ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু আছে। আর্থসামাজিক সূচক অনুযায়ী অন্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মধ্যে মুসলমানদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে দেশের ১৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। সবপমিলিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ শরিককে ধরে রাখতে ঢোঁক গিলতে বাধ্য হচ্ছেন মোদি। চটাতে সাহস পাচ্ছেন না চন্দ্রবাবুকে।