প্রতিবেদন : অপারেশন সিঁদুর নিয়ে লোকসভায় বিশেষ আলোচনায় জবাবি ভাষণে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সত্য গোপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ গোপন করলেন বেশ কিছু তথ্য। আত্মপ্রচার, আত্মসমালোচনা বাদ দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তোলা একগুচ্ছ প্রশ্নের জবাব দেওয়া তো দূর অস্ত, শুধুই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা প্রতিফলিত হল তাঁর কথায়। দাবি করলেন ২২ এপ্রিলের ঘটনার জবাব দেওয়া হয়েছে ২২ মিনিটে। মঙ্গলবার লোকসভায় দু’ঘণ্টার ভাষণে প্রকৃত সত্য থেকে রয়ে গেলেন শত যোজন দূরে। এর আগে ভাষণ প্রসঙ্গে বিরোধীদের চাপে পড়ে অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্বীকার করতে বাধ্য হন, পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কেন্দ্র দায় এড়াতে পারে না। ব্যর্থতার দায় মেনে নেন শাহ। তবে সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, খতম করা হয়েছে পহেলগাঁওয়ের খুনিদের। এই স্বীকারোক্তিতেও অবশ্য শান্ত হননি তৃণমূল সাংসদরা।
আরও পড়ুন-অভিষেকের সুরেই মোদিকে কটাক্ষ রাহুলের
তাঁদের প্রশ্ন, উরি থেকে পুলওয়ামা, রাজৌরিতে বারবার ক্ষমার অযোগ্য ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে পারল কেন বিজেপি। এরপরেও পদ আঁকড়ে থাকার কোনও নৈতিক বা সাংবিধানিক অধিকার আছে কি অমিত শাহর? একই প্রশ্ন তুলে ধরে কেন্দ্রকে চেপে ধরে কংগ্রেস-সপার মতো বিরোধী দলগুলোও। এদিন মোদির সাফাইকেও একহাত নিয়েছে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস-সহ গোটা বিরোধী শিবির৷ পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিরা ভারতে ঢুকেছিল কীভাবে? তারা কোথায় আত্মগোপন করেছিল? অপারেশন সিঁদুরে ভারতের ক’টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে? মোট ক্ষয়ক্ষতিই বা কী? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপেই কি অপারেশন সিঁদুরের সিজ ফায়ার করতে বাধ্য হয়েছিল ভারত? কেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবির পাল্টা কোনও দাবি বা সরকারি প্রত্যাখ্যান জানায়নি ভারত সরকার? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি দল পাঠানো ভারত সরকারের পাশে কেন দাঁড়ায়নি অধিকাংশ দেশ? কেন তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেনি? কেন পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ করছেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা আইবি প্রধান? অদূর ভবিষ্যতে ফের জঙ্গি হামলা হলে ভারত কি আবার পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করবে? এবারের সামরিক অপারেশনের মাধ্যমে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখলের সোনালি সম্ভাবনা থাকলেও কেন সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা হল না? গোটা দেশের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়ে দু’ঘণ্টার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরও একবার কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের আক্রমণ করার পুরনো ছকই অনুসরণ করেছেন৷ তাত্পর্যপূর্ণ হল, প্রধানমন্ত্রীর এদিনের ভাষণকে নিছকই ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি বলে ব্যাখ্যা করেছে বিরোধী শিবির৷