ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ভানে ধান, মোদি শাহ সর্বত্র বিভাজন করে খান

সবাইকে দেশপ্রেমে ডুবিয়ে, সিঁদুর মাখিয়ে, এই সুযোগে ভোটের কড়ি গুনে নিতে নেমেছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। ওদের একটা ভোটও দেবেন না। লিখছেন দেবাশিস পাঠক

Must read

মোদি লীলাকথা অফুরান। শুনে শুধু মিছে বুলি ভরে যায় কান।।
করেই চলেন উনি মিথ্যার বেসাতি। কী এল গেল তাতে যদি বাড়ে ক্ষয় ক্ষতি।।
তার সাথে পিছু পিছু রয়েছেন শাহ। দুই সখা মিলে সারে শান্তি সম্প্রীতির দাহ ।।

আরও পড়ুন-মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ চার্জ গঠন করা হল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে

এখনও লেখা হয়নি। তবে নিশ্চিত, অচিরেই লেখা হবে। মোদি অমঙ্গল কাব্য। মধ্যযুগীয় মঙ্গল কাব্যের একুশ শতকীয় পরম্পরা। আর তাতেই লেখা থাকবে উল্লিখিত লাইনগুলো।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাতের বার্তা মনে আছে?
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ঐতিহাসিক’ ঘোষণা ছিল, সরকার থেকে গেরুয়াবাহিনী তার অনেক তত্ত্বকথা শুনিয়েছিল হতবাক দেশবাসীকে। বলা হয়েছিল, (১) সব কালো টাকা উদ্ধার করা হবে, (২)নগদহীন অর্থব্যবস্থা গড়ে উঠবে, (৩)জাল নোটের ব্যবসা ধ্বংস হবে, (৪) সন্ত্রাসবাদীদের হাতে অর্থ জোগান বন্ধ হবে, আরও কত কী!
প্রায় দশ বছর পর সেই সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, নোট বাতিল প্রকল্প চূড়ান্ত ‘ফ্লপ’। মোদির হঠকারী সিদ্ধান্তের খেসারত আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে গোটা দেশকে। সেই কালো টাকা, জাল নোট, নগদের ব্যবহার, দুর্নীতির মতো সব রোগ জাঁকিয়ে বসে আছে ভারতের অর্থনীতিতে। তবু অতীত থেকে কোনও শিক্ষা নিতে নারাজ মোদি সরকার। নোট বাতিলের সময় আচমকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করা হয়েছিল। বাজারে আনা হয়েছিল ২০০০ টাকা ও ৫০০ টাকার নতুন নোট। কয়েক বছরে পরিকল্পনা ফ্লপ করতেই বাজার থেকে ২০০০ টাকার গোলাপি নোট তুলে নেয় কেন্দ্র। এখন সর্বত্র মূলত ৫০০ টাকার রমরমা চলছে। তথ্যের খাতিরে জানিয়ে রাখা যাক, এখন মোট নোট সংখ্যার ৪০.৯ শতাংশই ৫০০ টাকা। মূল্যের দিক থেকে ৫০০ টাকার নোটের শেয়ার ৮৬ শতাংশ। শোনা যাচ্ছে, জাল নোটের কারবার আটকাতে এবার নাকি ৫০০ টাকার নোটও বাতিলের খাতায় চলে যেতে পারে।
জাল নোট। নোট বাতিলের ঘোষণার দিন জাল নোট আটকাবেন বলে রীতিমতো হুঙ্কার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই হুঙ্কারে সোচ্চারে গলা মিলিয়েছিলেন তাঁর পারিষদবর্গ। অথচ বছর দশেক পর তার পরিণতি হল মোদির সাদা পোশাকে কালি ছিটিয়ে দিয়েছে খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তারা জানিয়েছে, মাত্র একবছরে (২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে) দেশের ৫০০ টাকার জাল নোট বেড়েছে রেকর্ড, ৩৭.৩ শতাংশ। এটা বাজেয়াপ্ত হওয়া জাল নোটের পরিসংখ্যান থেকে জেনেছে সর্বোচ্চ ব্যাঙ্ক। এর বাইরেও যে বাজারে কয়েক হাজার কোটি টাকার জাল নোট ‘আসল’ হয়ে রাজত্ব করছে, তা সহজেই অনুমেয়।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, শুধু গত অর্থবর্ষে জাল ৫০০ টাকার নোটের আর্থিক অঙ্ক ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। তার আগের আর্থিক বছরে ছিল ৪ লক্ষ ২৮ হাজার কোটি টাকা। ৫০০ টাকার পাশাপাশি ২০০ টাকার জাল নোট বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৯ শতাংশ। জালিয়াতি কারবারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ১০, ২০, ৫০, ১০০ টাকার নোটও। ধরা যাক, নগদহীন অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণার কথা। এ বিষয়েও সেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বাজারে লেনদেন হওয়া নোটের সংখ্যা এবং তার মূল্য তার আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে যথাক্রমে ৫.৬ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ। তাই এই বেশি পরিমাণ নোট ছাপানোর খরচও ২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। মোদির ঘোষণার সবচেয়ে সাড়া জাগানো দাবি ছিল, কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। কারণ কালো টাকা সন্ত্রাসবাদীদের তহবিলে ঢুকছে, দুর্নীতির উৎসও কালো টাকা।

আরও পড়ুন-গ্রেফতার ২ ভুয়ো টিকিট পরীক্ষক

আজও কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে কোনও তথ্যনিষ্ঠ রিপোর্ট মোদি সরকারের তরফে প্রকাশ্যে আনা হয়নি। ফলে দেশবাসীর পক্ষে প্রকৃত সত্যের নাগাল পাওয়া কঠিন। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত।
সেই সুপার ডুপার ফ্লুপ মাস্টারদের নতুন জুমলা শুরু হয়েছে পাক ভারত সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে।
পাকিস্তানকে তোপ দাগতে বিরোধীদের বিদেশে পাঠিয়ে নিজেরা ঘুরে ঘুরে আমরা-ওরা করে বেড়াচ্ছেন। দীর্ঘ বিরতির পর মোদি শাহ পশ্চিমবঙ্গে এসে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁদের সিঁদুর যতটা না পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে তার চেয়ে ঢের বেশি বঙ্গ দখলের জন্য সমর্পিত। নোট বাতিল, বছরে দু’লক্ষ চাকরি, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে পদাঘাত এবং কৃষকের আয় দ্বিগুণের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির পর কেন্দ্রের নয়া জুমলা!খালি হাতে এসে স্রেফ ভোটের প্রচার করে দিল্লি ফিরে গেলেন। ঢাক পেটালেন জোরে কিন্তু রাজ্যের পৌনে দু’লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া নিয়ে একটা কথাও খরচ করার সময় পেলেন না। একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ সাড়ে তিন বছর। আবাসের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রের এই সীমাহীন বঞ্চনায় প্রলেপ দেওয়ার বদলে তিনি উল্টে এখানকার নির্বাচিত সরকারকেই ‘নির্মম’ বলে দেগে দিলেন। বাংলার মানুষ দেখল বিধানসভা ভোটের ৯ মাস আগে আবার নতুন করে ডেলি প্যাসেঞ্জারি শুরু।
সংগঠন এমনই যে বুথে বসার নেতা নেই। প্রার্থীও বাড়ন্ত! তাই সেনার বীরত্বকে ষোলোআনা নিজেদের বলে চালিয়ে মা বোনেদের নিঃশর্ত সমর্থন আদায় করার চেষ্টা সিঁদুর মহিলাদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। তাকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা।
এই পরিযায়ী পাখিদের মনে করিয়ে দিই, দুর্নীতি, বিশেষ করে নিয়োগ দুর্নীতি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় গরমিল শুধু বাংলাতেই হয়েছে তেমনটা মোটেই নয়। গত বছর সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় কার? গত বছর ডাবল ইঞ্জিন উত্তরপ্রদেশে পুলিসের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা শেষ মুহূর্তে বাতিল করতে হয় প্রশ্নফাঁসের ধাক্কায়। দোষীদের কি চিহ্নিত করা গিয়েছে? তেইশ সালে একই কারণে পুলিসে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হয় আর এক ডাবল ইঞ্জিন রাজ্য বিহারে। মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির কথা কি ভুলে গেছেন?
এই পরিযায়ীদের মনে করাতে চাই, মোদি জমানাতেই দেশে রেকর্ড বেকারত্ব যুব সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। দশ লক্ষ সরকারি পদ ফাঁকা। রেল, ব্যাঙ্কের চাকরি পর্যন্ত ষোলোআনা নিরাপদ নয়। শুধু স্টার্টআপ সম্মেলনের ঢপবাজি!
আর মা বোনেদের নিরাপত্তা? হাতরাসের খবর সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে দু’বছর জেলে কাটাতে হল কেন?উত্তরাখণ্ডে ১৯ বছরের অঙ্কিতাকে খুন করেছিল যারা, প্রমাণ হয়ে গিয়েছে তারা গেরুয়া দলের লোক।
কট্টর জাতীয়তাবাদ ও হিন্দু-মুসলিম রাজনীতির ধারাপাতেও ছাব্বিশে বিজেপি’র বঙ্গ বিজয় দূর অস্ত! এই সহজ সত্যিটা বুঝে নিক বিজেপি। বুঝিয়ে দেব আমরা বিজেপিকে।

Latest article