আজ সোমবার। ৯ জুন। আগামী বুধবার ১১ জুন। নরেন্দ্র মোদি (Modi) সরকার তার একাদশ বর্ষপূর্তির সাফল্য পালন করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ঢাকঢোল, কাড়া-নাকাড়া উচ্চগ্রামে বাজতে শুরু করে দিয়েছে। আর সেসবের উচ্চনাদে চাপা পড়ে যাচ্ছে একটা ভয়ানক সত্য।
এই ১৩২ মাসে মোদি সরকার ভারতীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোর সাড়ে বত্রিশ ভাজা দশা করে ছেড়েছে।
কেন বলছি কথাগুলো?
বুঝতে গেলে তাকান নিচের ঘটনাগুলোর দিকে।
প্রথম ঘটনাটা সংঘটিত হয়েছে লন্ডনে।
দেশের মাটিতে কেউ বিচারপতিদের নিয়ে কোনওরকম ইঙ্গিত করলে আইনের নানাবিধ চোখরাঙানি ধেয়ে আসে। কিন্তু লন্ডনের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমাদের নতুন প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই যখন সবাইকে চমকে দিয়ে বললেন, অবসর নিয়েই একজন বিচারপতিকে যদি রাজনীতিতে যোগ দিতে দেখা যায় কিংবা সরকারি ক্ষমতার অক্ষের কাছাকাছি যেতে দেখা যায় তাতে মানুষের আস্থা চূড়ান্ত ধাক্কা খায়। অবসরের আগে কয়েক বছর তিনি যে রায় দিয়েছেন তাতে মানুষ রাজনীতির গন্ধ খুঁজতে থাকে। এতে বিচারপতি পদে থাকা ওই ব্যক্তির চেয়েও বেশি ক্ষুণ্ণ হয় বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও গৌরব। ইদানীং এই উদাহরণ কিন্তু বাড়ছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ মহামান্য রঞ্জন গগৈ এবং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একজন অযোধ্যা মামলায় ঐতিহাসিক রায় দেওয়ার পরই রাজ্যসভার এমপি হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে চাঞ্চল্যকর রায় দেওয়ার পর আগাম অবসর নিয়ে বিজেপি’র হয়ে লোকসভা ভোটে টিকিট পাওয়াও একই সন্দেহের উদ্রেক করে।
দ্বিতীয় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সিঙ্গাপুরে।
ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রথম জানালেন, আমাদের যুদ্ধবিমানেরও ক্ষতি হয়েছে। তিনি সংখ্যা উল্লেখ না করলেও একাধিক রাফাল ভূপতিত হওয়ার যে প্রচার পাকিস্তান থেকে শুরু করে পশ্চিমি গণমাধ্যমে চলছে তা ষোলোআনা মান্যতা পেল। সংসদকে না জানিয়ে, দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে, আন্তর্জাতিক সামরিক সম্মেলনে পাকিস্তানের সেনাকর্তার উপস্থিতিতে এমন স্বীকারোক্তিতে কি দেশের সম্মান বাড়ল? না গণতন্ত্রের ভিত শক্ত হল? এর চেয়ে তো দেশের মাটিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে সত্যিটা মেনে নিলে মুখরক্ষা হত। অথচ সরকার এমন একটা ভাব দেখাচ্ছিল যেন ভারতের ক্ষতির কথা উচ্চারণ করা মানেই চরম দেশদ্রোহিতা! এটা মোটেই সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিচয় বহন করে না। তাহলে তো অনিল চৌহানের স্বীকারোক্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
এই ঘটনাগুলো কী বোঝাচ্ছে?
মোদি (Modi) জমানায় ভারতীয় গণতন্ত্রে বিরোধী মত ও পথের পরিসর কমে গিয়েছে। তাই, তাই-ই, প্রতিষ্ঠিত গুণিজন, সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী, সাংবিধানিক ব্যবস্থার গণ্যমান্যরাও একমাত্র বিদেশে গিয়েই মুখ খুলতে স্বস্তি বোধ করেন। এটাই সংসদীয় বিপন্নতা সংক্রান্ত স্বতঃসিদ্ধের প্রথম পাঠ।
নিঃসন্দেহে অপারেশন সিঁদুর এই জমানায় অত্যন্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। পাকিস্তানের সীমান্তের ১০০ কিলোমিটার ভিতর ঢুকে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও মূল পাকিস্তানি ভূখণ্ডে জঙ্গি শিবিরের সঙ্গে সামরিক ঘাঁটিতেও সফল আঘাত হানা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যেকোনও সফল সামরিক অপারেশনের মধ্যেও ভুলত্রুটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ও অনিবার্য ঘটনা। সংসদে সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা হবে না? কার্গিল যুদ্ধ শেষ হওয়ার তিনদিন পরই বিজেপি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘কার্গিল রিভিউ কমিটি’। সেই কমিটিতে কর্তব্যরত সরকারি আমলা ছাড়াও প্রাক্তন সমর বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। ছিলেন বিদেশনীতির পণ্ডিতরা। ওই কমিটি শতাধিক পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীকে। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর রিপোর্ট সংসদেও পেশ করেছিল তৎকালীন এনডিএ সরকার। তাহলে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদে রিভিউ রিপোর্ট পেশ করা হবে না কেন? বিশেষ অধিবেশনই বা ডাকা হল না কেন?
বিধানসভায় এসব নিয়ে নাটক করার আগে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নের উত্তরটা যেন দেন গদ্দার কুলের পোদ্দার, উত্তরবঙ্গে তার প্রাক্তন বামাচারী চ্যালা যিনি রাজ্য রাজনীতিতে চণ্ডাশোক হওয়ার পাঠ নিয়ে এখন কুভেন্দু পাঠ নিচ্ছেন, পলে পলে যাঁর অগ্নি নিভন্ত সেই দেবী এবং তাঁদের সঙ্গে সঙ্গত দেওয়ার পাল।
ন্যাকামো হচ্ছে?
মোদি (Modi) সরকার বিগত ২০১৭ সালের ৩০ জুন মধ্যরাতে জিএসটি চালু করতে বিশেষ অধিবেশন ডেকেছিল। বিশেষ অধিবেশনেই ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের বিলটি (সংবিধানের ১০৬ তম সংশোধন) আইনে পরিণত করতে হয়েছিল। আর এখন সংসদে বিরোধীদের মত প্রকাশের সুযোগ না দেওয়ার জন্য সংসদে বিশেষ অধিবেশন অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ডাকা হল না। কেন?
ধাষ্টামো হচ্ছে?
নরেন্দ্র মোদি গত ১১ বছরে দশবার আমেরিকা গিয়েছেন। আর রাশিয়ায় ছ’বার। আর মণিপুরে কতবার?
সেখানে ফের আগুন জ্বলছে। কুকি জনজাতি এবং মেইতেই গোষ্ঠীদের মধ্যে সংঘর্ষে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
লজ্জা করে না আপনাদের? রবিবার থেকে ১০ দিন মণিপুর বন্ধের ডাক দিয়েছে আরামবাই টেংগোল। রাস্তাঘাটে যান চলাচল স্তব্ধ করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। মার্চ মাসের গোড়া থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক পাঁচটি জেলার ১৩টি থানা এলাকা বাদ দিয়ে গোটা মণিপুরে আফস্পার মেয়াদ বৃদ্ধি হচ্ছে, হয়েই চলেছে। এখনও সেই আইনই চলছে। আর মোদি ছাতি ফুলিয়ে ফাঁকা মস্তানি করে চলেছেন।
কোন দেশি গণতন্ত্র এটা!
এ কোন ভারত আমাদের, যেখানে নারী শক্তির বিকাশ নিয়ে চলছে মোদির নিরন্তর প্রচার সিপিএম-এর প্রভাতী দৈনিক ‘গণশক্তি’র মাথায়, আর, আড়ালে নিরন্তর কেঁদে চলেছে হাথরস, উন্নাও, কাঠুয়া, বদায়ুঁর।
এর পরেও লোডশেডিং অধিকারী আর তার চামচিকে বাহিনীর বড় বড় কথা!
ছিঃ!!!
আরও পড়ুন-ফের কাপ আলকারেজের