প্রতিবেদন: কী বলা যায় একে, কাঁচের ঘরে বাস করে অন্যের দিকে ঢিল ছোঁড়া? নিজেদের অপদার্থতা আর অপশাসন ঢাকতে অতীতকে বিকৃত করার নতুন রাজনীতিতে মোদি যে রীতিমতো পোক্ত, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজেরা দেশে অলিখিত জরুরি অবস্থা জারি করে এবারে ইন্দিরা গান্ধীর সময়ের জরুরি অবস্থা নিয়ে বই লেখার কথা ঘোষণা করে নিজের অপকর্ম ঢাকার মরিয়া প্রয়াস মোদির। এই অপচেষ্টার তীব্র সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাগরিকা ঘোষ মোদিকে একহাত নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কীভাবে দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করেছিলেন। তাঁর যুক্তি, ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন কারণ আরএসএস গোটা দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। হ্যাঁ, জরুরি অবস্থা একটি কালো দাগ ছিল, কিন্তু সেই একই ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচন ঘোষণা করেছিলেন, পদত্যাগ করেছিলেন এবং জনসাধারণের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন। জরুরি অবস্থাকে অনুকরণ না করে কেন নরেন্দ্র মোদি আগে এই ধরনের সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মানুষের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন না? প্রশ্ন সাগরিকার।
আরও পড়ুন-৮২ লক্ষ জরিমানার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট
কেন্দ্রের ক্ষমতায় টিকে থাকতে উন্নয়নের নতুন দিশা নেই। তাই সমালোচনায় ভর করেই রাজনীতিতে টিকে থাকার মরিয়া চেষ্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন— মোদির নিজের বই লিখে ফেলা। আসলে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সময়ের এমার্জেন্সি-কে নিয়ে সম্প্রতি রাজনীতির অঙ্ক কষা শুরু করেছে বিজেপি। এবার সেই এমার্জেন্সি নিয়ে বই লেখার ঘোষণা মোদির। যে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক স্বৈরাচারী পদক্ষেপ নিয়ে গণতন্ত্রকে কার্যত হাসির খোরাকে পরিণত করেছেন, সেই নরেন্দ্র মোদির এমার্জেন্সির সময়ের অভিজ্ঞতার কাহিনী আসলে রঙ বদলানো স্বৈরাচারের প্রতিফলন ছাড়া আর কিছুই নয়। কটাক্ষ তৃণমূলের।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে নরেন্দ্র মোদি প্রচার করেন, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সময়ের জরুরি অবস্থার সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখছেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে মোদির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বই প্রকাশ করবে কোন যুক্তিতে?
মোদির একের পর এক কুকীর্তি তুলে ধরে তৃণমূলের মন্তব্য, গত ১১ বছর ধরে নরেন্দ্র মোদির সময়ে ভারত অঘোষিত জরুরি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। চেনা যায় না এমনভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। কোনও বিতর্ক, কাঁটাছেড়া, ঐকমত্য ছাড়াই আইন পাস হয়। আইন আজ আর শক্তিমানদের মনে ভয় ধরায় না, দুর্বলদের আতঙ্কের কারণ। সংবাদ মাধ্যমকে হুমকি দিয়ে বিজেপির তাঁবেদারে পরিণত করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন নিজেদের বিজেপির রবার স্ট্যাম্পে পরিণত করেছে। ইডি আর সিবিআই বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শক হিসাবে কাজ করে।
সেই সঙ্গে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ নিয়ে তৃণমূলের স্পষ্ট বার্তা, তল্লাশি ও গ্রেফতারি দিয়ে বিরোধীদের মুছে ফেলা হচ্ছে। ভিন্নমত পোষণকারী ও সমালোচকদের অপমানিত, পদদলিত ও গ্রেফতারের মাধ্যমে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্র পরিচালিত সন্ত্রাসের আতঙ্কে ভুগছেন। দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে নিপীড়িত করা হচ্ছে। এরপরেও কোন লজ্জায় ইন্দিরা গান্ধীর সময়ের জরুরি অবস্থা নিয়ে বই লিখতে চাইছেন মোদি?