প্রতিবেদন : প্রবল চাপে পড়ে এখন ড্যামেজ কন্ট্রোলের ব্যর্থ চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির বাংলা-বিদ্বেষ, ভাষা-সন্ত্রাস থেকে শুরু করে অনুপ্রবেশ ইস্যু, এসআইআর, অপারেশন সিঁদুর—সবেতেই ব্যাকফুটে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী। বলছেন, সব ভাষাকেই সমান সম্মান দেওয়া উচিত। তাহলে সবার আগে দল থেকে সরিয়ে দিন অমিত মালব্যকে। তিনিই তো বলেছেন, বাংলা কোনও ভাষাই নয়, বাংলাদেশি ভাষা। বাংলা থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠতেই ব্যাকফুটে নরেন্দ্র মোদি। অনুপ্রবেশ প্রশ্নেও এখন ঢোক গিলতে হচ্ছে তাঁকে। তাই ব্যর্থতার দায় ঠেলেছেন অমিত শাহর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দিকেই। অমিত শাহর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে তাঁর নো-কনফিডেন্স। এছাড়া এসআইআর এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়েও কেন্দ্র যে ব্যাকফুটে, তার প্রমাণ মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যেই।
বাংলা ভাষা-সন্ত্রাস : বাংলা বিদ্বেষ ও ভাষা-সন্ত্রাসের জেরে দেশে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে বিজেপি। তা বুঝতে পেরেই এবার ড্যামেজ কন্ট্রোলের মঞ্চ হিসেবে ১৫ অগাস্টের লালকেল্লাকে বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে সব ভাষাকে সমান সম্মান দেওয়ার ঘোষণায় স্পষ্ট প্রবল চাপে পড়েছে বিজেপি। বিজেপির ভাষা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রথম সোচ্চার হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তিনি। তাঁর দেখানো পথেই রাস্তা থেকে সংসদে পৌঁছে গিয়েছে সেই প্রতিবাদ। সংসদে ভাষা ইস্যুতে পুরো ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে। বাধ্য হয়ে এখন ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এই ড্যামেজ কন্ট্রোল শুধুই আইওয়াশ বলে তোপ দেগেছেন তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। তিনি বলেন, এখন পাল্টি খেয়ে ভোটের রাজনীতিতে নেমে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির এই দ্বিচারিতা বাংলার মানুষ বুঝে গিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগে অমিত মালব্য ও দলের অন্যান্যদের ভাষা-শিক্ষা দিন। তারপর এসব কথা বলবেন। একুশে ভোটের আগে রবীন্দ্রনাথ সেজে নাটক করেছিলেন। শুধুই ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির অঙ্কে চলেন প্রধানমন্ত্রী। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বাংলা ও বাঙালিদের উপর হেনস্থায় দেশব্যাপী, বিশেষ করে বাংলা থেকে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তাতে নরেন্দ্র মোদি ব্যাকফুটে। বাংলায় কথা বললে বিজেপি রাজ্যে আটকে রেখে অত্যাচার করা হচ্ছে, বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে বাংলা নাকি বাংলাদেশের ভাষা, তারপরে এসব কথা আসে কী করে।
অনুপ্রবেশ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে অনাস্থা : প্রধানমন্ত্রী নিজে বলছেন অনুপ্রবেশ রুখতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এটা তো সরাসরি আত্মঘাতী গোল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপর চূড়ান্ত নো কনফিডেন্স। এ-প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, সীমান্ত পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। মূলত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন বিএসএফের। এর বাইরে ডিফেন্স মিনিস্ট্রিও রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যদি অনুপ্রবেশ হয়, প্রধানমন্ত্রী তাহলে কাকে দোষ দিচ্ছেন? রাজ্যের দায়িত্ব নয় সীমান্ত পাহারা দেওয়া। স্থল, জল, অন্তরীক্ষের সীমান্ত প্রহরা দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। তাহলে প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন অনুপ্রবেশ হচ্ছে, সেই গাফিলতি কেন্দ্রের। অমিত শাহর ডিপার্টমেন্টের। আপনার কথাতেই স্পষ্ট, সীমান্ত সুরক্ষায় ব্যর্থ কেন্দ্রের সরকার।
বৈধ নাগরিকদের হয়রানি কেন্দ্রের : এসআইআর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের স্পষ্ট জবাব, বৈধ কোনও ভোটার, বৈধ কোনও নাগরিকদের যেন বাদ না দেওয়া হয়, তাঁদের যেন হয়রান না করা হয়। যতবার ওঁরা বলবেন অন্য দেশ থেকে আসার কথা, ততবার তাঁদের নিজেদের ব্যর্থতা সামনে এসে যাবে। আপনাদের বিএসএফ যদি সীমান্তে আটকে দেয়, তাহলে অনুপ্রবেশ ঘটবে কেন? আগে সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার কেন্দ্রের দায়িত্ব ছিল। এখন ৫০ কিলোমিটার বাড়িয়েছেন। তাহলে আপনারা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছেন না কেন? অনুপ্রবেশ ঠেকালে এসআইআরের প্রশ্নই তো আসে না। যারা সীমান্ত সুরক্ষায় ব্যর্থ, যাদের ব্যর্থতায় এই অনুপ্রবেশ, তারাই বৈধ নাগরিকদের, ভারতবর্ষের নাগরিকদের হয়রান করছে।
অপারেশন সিঁদুর খুড়োর কল : অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দার চেষ্টা করছে। তৃণমূলের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী আগে জবাব দিন, দেশের প্রশ্নে আমরা সবাই কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে ছিলাম, তারপরও কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে পারলেন না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছেন, দেশের স্বার্থে সবাই এক। তারপরেও কেন ট্রাম্পের পোস্ট থেকে জানতে হচ্ছে সংঘর্ষবিরতির কথা? জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী? এখন অপারেশন সিঁদুরকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে গিয়ে বড় বড় কথা বলবেন, সেটা কি মেনে নেওয়া যায়?
আত্মনির্ভর ভারত নয়, স্বনির্ভর বাংলা : কুণালের আরও সংযোজন, প্রধানমন্ত্রী মুখে বলেন আত্মনির্ভর ভারত। একচুয়ালি স্বনির্ভর বাংলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দেখিয়েছেন। আত্মনির্ভর ভারতে গোটা দেশবাসীর উপরে আর্থিক চাপ। অন্যদিকে স্বনির্ভর বাংলা দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাপ্য টাকা না দিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিকল্প পদ্ধতিতে আর্থিক সুরক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। আত্মনির্ভর ভারত সোনার পাথর বাটি। মানুষকে কথার মায়াজালে ভুলিয়ে রাখা। বাস্তব হচ্ছে স্বনির্ভর বাংলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দেখিয়েছেন।
শুধু কথার জাগলারি : এছাড়া জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, সবই কথার জাগলারি। সবাই বুঝতে পারছেন কেন্দ্রের আর্থিক নীতিতে কীভাবে সাধারণ মানুষের উপরে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখন ২০৪৭-এ কী হবে এসব শোনাচ্ছেন। মানুষ পুরোপুরি বুঝতে পারছেন এসব ভাঁওতা।