প্রতিবেদন: খোদ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সির তথ্যই দেখিয়ে দিচ্ছে মোদিরাজ্য গুজরাতে কীভাবে বাড়ছে অপরাধ! মোদি সরকারের হাতে থাকা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে গুজরাত এখন আন্তর্জাতিক স্তরেও মানব পাচারকারীদের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডির তদন্তে উঠে এসেছে মানব পাচারের বিস্ফোরক নেটওয়ার্কের নানা তথ্য। তদন্ত করে ৪,০০০ থেকে ৪,৫০০ পাচারকারী এজেন্টের একটি নেটওয়ার্ক উন্মোচন করেছে ইডি, যার মধ্যে গুজরাত থেকেই ২,০০০ জন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। দেখা গিয়েছে এই অপরাধের এজেন্টরা কানাডার কমপক্ষে ১৫০টি কলেজের সঙ্গে জড়িত। এরা ভারত থেকে অবৈধভাবে কানাডা হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে সহায়তা করে। লোভনীয় শর্ত সামনে রেখে পাচারকারীরা প্রথমে ক্লায়েন্টদের ছাত্র ভিসায় কানাডার কলেজে ভর্তি করিয়ে পাঠায়। পরে, এই ব্যক্তিরা সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন-দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রের নির্দেশকে পাত্তাই দিচ্ছে না দিল্লির এইমস
গোটা নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ইডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কানাডা হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয়দের পাচারে জড়িত গুজরাতের প্রায় ২,০০০ এজেন্ট বা ‘পার্টনার’ এখনও প্রবলভাবে সক্রিয় এবং কানাডার সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তদন্তে ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এই এজেন্ট এবং কানাডীয় কলেজগুলির মধ্যে ১২,০০০-এরও বেশি আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এই লেনদেন মূলত তিন থেকে চারটি ভারতীয় আর্থিক পরিষেবা সংস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে, যা বর্তমানে তদন্তের আওতায় রয়েছে। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, কানাডীয় কলেজগুলির কাছে পাঠানো ফি থেকে কমিশন কেটে নিয়ে অবশিষ্ট অর্থ ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ফেরত পাঠানো হত। এই কমিশনের পরিমাণ জনপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা। পাচারচক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অর্থ পাচারের মামলাও ইতিমধ্যে দায়ের করা হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন-কানাডা সীমান্ত অতিক্রমের সময় হিমায়িত হয়ে মারা যাওয়া গুজরাতের চার সদস্যের একটি পরিবারের মৃত্যুর তদন্তের অংশ হিসেবে এই বিস্ফোরক অপরাধের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ওই পরিবারের মধ্যে ১১ এবং ৩ বছর বয়সী দুটি শিশুও ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের মধ্যে গুজরাতিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭,৩৯১ জন ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে ৪১,৩৩০ জন ছিল গুজরাতি। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন কেন ‘মডেল রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত গুজরাত থেকে এত সংখ্যক মানুষ দেশত্যাগ করছে? গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক নির্বাসিত নথিবিহীন অভিবাসীদের মধ্যেও মোদিরাজ্যের বহু বাসিন্দা ছিল। আর এই তথ্যই দেখিয়ে দিচ্ছে বিজেপির আচ্ছে দিন আর ডবল ইঞ্জিন পরিচালিত রামরাজ্যের আসল ছবি।