চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: জামশেদপুর টু কলকাতা। আবারও পিছিয়ে পড়ে জয়। আবারও টাইব্রেকারে মোহনবাগানের পরিত্রাতা বিশাল কাইথ। ভরা যুবভারতীতে ‘বিশাল’ হাতেই ডুরান্ড কাপের ফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ অমীমাংসিত থাকার পর বেঙ্গালুরু এফসি-কে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারাল মোহনবাগান (Mohun Bagan)। এই নিয়ে ৩০ বার ডুরান্ড ফাইনাল খেলবে সবুজ-মেরুন।
৬৭ মিনিট পর্যন্ত ০-২ পিছিয়ে মোহনবাগান। সেখান থেকে ম্যাচের রং বদলে ১৮ মিনিটের মধ্যে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন। পেনাল্টি থেকে গোল দিমিত্রি পেত্রাতোসের। দ্বিতীয় গোলটি দূরপাল্লার শটে দুরন্ত অনিরুদ্ধ থাপার। নীচ থেকে উপরে তুলে দিতেই আক্রমণে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ থাপা। তবে শেষটা করলেন সেই বিশাল। এদিনও টাইব্রেকারে জোড়া সেভ। কৃতিত্ব থাপারও। তাঁর অনবদ্য গোলটাই ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যায়। শেষ বাঁশি বাজার পর যুবভারতীর গ্যালারির গর্জন। মাঠে কোচ, সতীর্থদের বুকে বিশাল, অনিরুদ্ধ, কামিন্স, দিমিত্রিরা। তবে মরশুমের প্রথম টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেও অনেক দুর্বলতা ঢাকতে হবে কোচ জোসে মোলিনাকে।
সুনীল ছেত্রীকে এদিন প্রথম থেকে খেলানোর সুযোগটা শুরুতে কাজে লাগিয়েছিল বেঙ্গালুরু। কিন্তু মোহনবাগানের নাছোড় মনোভাবে তা পূর্ণতা পায়নি। তার উপর দু’গোলে এগিয়ে থাকায় বেঙ্গালুরুর কোচ সুনীল, আলবার্তো নগুয়েরা, পেরেরা দিয়াজদের তুলে নেওয়ায় মোহনবাগান ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায়। টাইব্রেকারে ভাল পেনাল্টি মারার লোকও ছিল না বেঙ্গালুরুর।
মোহনবাগান কোচের তিন ডিফেন্ডার খেলানোটাও ঝুঁকি হয়ে গিয়েছিল। যেখানে নতুন দুই বিদেশি টম অলড্রেড ও আলবার্তো রডরিগেজ এখনও এখানে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। মোহনবাগানের কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায় প্রথম ২৬ মিনিটের মধ্যে চোট পেয়ে অধিনায়ক শুভাশিস বোস উঠে যাওয়ায়। বরং শুরু থেকে ম্যাচের রাশ ছিল বেঙ্গালুরুর হাতে। ১২ মিনিটে সহজ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন সুনীল। কিন্তু বেঙ্গালুরুকে এগিয়ে দিতে পারেননি।
আরও পড়ুন- এটা লজ্জার হার : ইমরান, পিসিবিকে তোপ
রক্ষণের ভুলে বারবার সমস্যায় পড়েছে মোলিনা ব্রিগেড। ৪২ মিনিটে নিজেদের বক্সে বেঙ্গালুরুর বিনীতকে ফাউল করে বসেন লিস্টন কোলাসো। পেনাল্টি থেকে গোল করে বেঙ্গালুরুকে এগিয়ে দেন সুনীল। পিছিয়ে পড়ে বিরতির আগেই কয়েক মিনিটের মধ্যে খেলায় সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না তাদের। লিস্টনের শট পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। মিনিট খানেক পর আলবার্তোর হেডও পোস্টে লাগে। প্রথমার্ধের স্কোরলাইন বদলায়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই প্রেসিং ফুটবলে জোর বেঙ্গালুরুর। ৫০ মিনিটেই ব্যবধান বাড়ায় ব্লুজ। সেই রক্ষণের ভুলে গোল হজম মোহনবাগানের (Mohun Bagan)। বেঙ্গালুরুর হয়ে বিনীত গোল করেন। ২-০ এগিয়ে যাওয়ায় বেঙ্গালুরুর কোচ জেরার্ড জারাগোজা একে একে তুলে নেন সুনীল, নগুয়েরা, পেরেরা দিয়াজদের। মোহনবাগানও ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় গোল নষ্টের প্রদর্শনীতে মেতে ওঠে। কামিন্স, লিস্টনরা সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। অবশেষে ৬৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল। বক্সের মধ্য জার্সি টেনে ধরে মনবীরকে ফেলে দেন ভেকে। পেনাল্টি থেকে বল জালে জড়ান দিমিত্রি। এরপরই পাল্টাতে থাকে ম্যাচের রং। ৮৪ মিনিটে দূরপাল্লার শটে গোল করে মোহনবাগানকে ম্যাচে সমতায় ফেরান অনিরুদ্ধ। টাইব্রেকারে প্রথম চারটি শটে গোল করেন মোহনবাগানের কামিন্স, মনবীর, লিস্টন, দিমিত্রি। প্রথম তিন শটে পরাস্ত হন পালতোলা নৌকার শেষ প্রহরী বিশাল। তবে বেঙ্গালুরুর শেষ দুটি শট বাঁচিয়ে দলকে ফাইনালে তুললেন বিশাল।