দিমির গোলে ফের ভারতসেরা মোহনবাগান

গ্যালারির রক্তচাপ বাড়ছিল। ওড়িশা রক্ষণে কার্যত একা কুম্ভ হয়ে মোহনবাগানের যাবতীয় আক্রমণ প্রতিহত করছিলেন মুর্তাদা ফল।

Must read

চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: কতক্ষণে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! ৯০ মিনিট তখন শেষ হওয়ার মুখে। একের পর সুযোগ নষ্ট করে চলেছেন মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো, জেমি ম্যাকলারেনরা। গ্যালারির রক্তচাপ বাড়ছিল। ওড়িশা রক্ষণে কার্যত একা কুম্ভ হয়ে মোহনবাগানের যাবতীয় আক্রমণ প্রতিহত করছিলেন মুর্তাদা ফল। শেষ লগ্নে ফল লাল কার্ড দেখায় দশজন হয়ে যায় ওড়িশা। তাদের পক্ষে আর সম্ভব হয়নি সবুজ-মেরুন ঝড় সামলানো। সংযুক্ত সময়ে সুপার সাব দিমিত্রি পেত্রাতোসের গোলে বাজিমাত। আলো-আঁধারির ৬০ হাজার দর্শকের মায়াবি যুবভারতী তখন ইতিহাসের মোহনভারতী। ৯৩ মিনিটে মনবীরের পাস থেকে বাঁ-পায়ের আড়াআড়ি গড়ানে শটে বল জালে জড়িয়ে গ্যালারিতে সমর্থকদের কাছে ছুটে গেলেন দিমিত্রি। সমর্থকরাই যে কঠিন সময়ে তাঁর উপর ভরসা রেখেছিলেন। জনতার ভালবাসা মেখে দিমি মাতেন তাঁর পরিচিত ‘স্টেনগান’ সেলিব্রেশনে। বাগান ডাগ আউট থেকে ছিটকে বেরিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস মোলিনা ও তাঁর সহকারীদের। সবুজ-মেরুন আতশবাজি, রংমশালে যুবভারতীতে অকাল দীপাবলি।

আরও পড়ুন-নেত্রীর ডাকে তৃণমূলের রাজ্য সম্মেলন নেতাজি ইন্ডোরে ২৭ ফেব্রুয়ারি

ওড়িশা এফসি-কে ১-০ গোলে হারিয়ে আইএসএলের প্রথম দল হিসেবে টানা দু’বার লিগ-শিল্ড জিতে নজির গড়ল মোহনবাগান। তাও আবার দুই ম্যাচ হাতে রেখে। ২২ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট জোসে মোলিনার দলের। প্রথম দল হিসেবে পয়েন্টের হাফসেঞ্চুরিও। রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই উৎসব আরও রঙিন। কোচ মোলিনাকে শূন্যে ছুঁড়ে সেলিব্রেশন করছেন তাঁর ছাত্ররা। দিমিত্রির চোখে জল। তাঁকে কাঁধে তুলে নেন শুভাশিস, মনবীররা। ফুটবলারদের স্ত্রী, বান্ধবীরাও তখন মাঠে। মাঠে নেমে আসেন কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। প্রত্যেক ফুটবলারকে আলিঙ্গন করেন। গোয়েঙ্কা-সহ কোচ, ফুটবলাররা ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা টি-শার্ট পরে উৎসবে মাতেন। মোহনবাগানের এই সাফল্যের পিছনে শুধু কোচ, ফুটবলাররা নন। ম্যানেজমেন্ট, কর্তাদেরও অবদান। এমন একটা দল কোচের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।
মোহনবাগানের শিল্ড জয়ের অপেক্ষা বাড়াতে এদিন পরিকল্পনার ত্রুটি রাখেননি লোবেরা। জোনাল কভারিংয়ে মোহনবাগানকে বল ধরে খেলার সুযোগ দিচ্ছিল না ওড়িশা। মোলিনার টিমের ধারালো দুই উইঙ্গার মনবীর ও লিস্টনকে নিষ্প্রভ করে রাখছিল তারা। তার মধ্যেই মিনিট পনেরো পর ডানদিক থেকে থ্রু বল ধরে গোলের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন মনবীর। কিন্তু দুরূহ কোণ থেকে সরাসরি ওড়িশা গোলরক্ষক অমরিন্দর সিংয়ের গায়ে মারেন তিনি। মিনিট চারেকের মধ্যে পাল্টা গোলের মুখ খুলে ফেলেছিল ওড়িশা। কিন্তু রাহুল কেপির মাইনাস ধরে বল জালে জড়ানোর জন্য বাগান গোলের সামনে ওড়িশার কেউ ছিলেন না।

আরও পড়ুন-ট্যাংরা : খুনি কে? দ্বন্দ্ব শুরু বাবা-কাকার

স্টুয়ার্ট, মনবীর, ম্যাকলারেনের ত্রিফলাতেই শেষ পর্যন্ত ছন্দে ফেরার চেষ্টা করে সবুজ-মেরুন। বিরতির ঠিক আগে প্রায় গোল করে ফেলেছিল মোহনবাগান। কিন্তু অমরিন্দর রক্ষা করেন ওড়িশাকে। দ্বিতীয়ার্ধে স্টুয়ার্ট নিজের খেলা শুরু করতেই মোহনবাগানের দুই উইং খুলে যায়। মনবীর ও লিস্টন বল নিয়ে দ্রুত আক্রমণে ওঠে। একের পর গোলের সুযোগ তৈরি হয়। ৬০ মিনিটে স্টুয়ার্টের পাস থেকে সহজতম সুযোগ নষ্ট করেন মনবীর। লিস্টন, ম্যাকলারেনরাও সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন। জেতার জন্য মরিয়া হয়ে দিমিত্রি, অনিরুদ্ধ থাপা, দীপেন্দু বিশ্বাসকে নামান মোলিনা। স্টুয়ার্ট, লিস্টনকে তুলে শেষ লগ্নে জেসন কামিন্স, আশিককেও নামিয়ে পুরোপুরি অল আউট যায় মোহনবাগান। ওড়িশা তখন গোল বাঁচাতেই ব্যস্ত থাকে। ৮৩ মিনিটে বক্সের বাইরে জেমিকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন ওড়িশার ডিফেন্ডার মুর্তাদা। ১০ জনের ওড়িশার পক্ষে আর বাগান আক্রমণের ঝড় সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। সংযুক্ত সময়ে দিমিত্রি গোলেই শুরু লিগ-শিল্ড জয়ের উৎসব।

Latest article