চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: ম্যাচের আগের দিন আহাল এফকে-র কোচ বলেছিলেন, মোহনবাগানের খেলার ভিডিও বিশ্লেষণ করে নিজেদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। কলকাতা থেকে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ফেরার প্রচ্ছন্ন হুঙ্কার ছিল। সেটা যে ফাঁকা আওয়াজ ছিল না, ছন্নছাড়া মোহনবাগানকে ১-০ গোলে হারিয়ে যুবভারতী থেকে তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়ে বুঝিয়ে দিল তুর্কমেনিস্তানের ক্লাব। তাদের জয়সূচক গোলটি করেন এনভের আনায়েভ, যিনি গত বছর তুর্কমেনি ক্লাব আর্কাদাগের হয়ে এই যুবভারতীতেই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলে গিয়েছিলেন।
আহালকে নিয়ে মোহনবাগানের পরিকল্পনা বোঝা গেল না। বিপক্ষ দলে কোনও বিদেশি খেলে না।
মোহনবাগান শুরুতে তিন ও পরে পাঁচ বিদেশি খেলিয়ে, ঘরের মাঠে দর্শক-সমর্থন নিয়েও জিতে এসিএল শুরু করতে পারল না। গ্রুপে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শুরুতেই ঘরের মাঠে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার রাস্তা কঠিন করে ফেলল মোহনবাগান। যেখানে তারা এশীয় মঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখছিল!
আরও পড়ুন-পাথরকাটির জয়চণ্ডী মন্দিরে লোধাদের ঐতিহ্যের দুর্গোৎসব
ম্যাচের শুরুতে কোচ জোসে মোলিনার প্রথম একাদশ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তিন বিদেশি জেসন কামিন্স, টম অলড্রেড, আলবার্তো রডরিগেজকে নিয়ে শুরু করেছিলেন স্প্যানিশ বস। বাকি তিন বিদেশি বেঞ্চে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে জেমি ম্যাকলারেন, রবসন রোবিনহো নামার পরেও বোঝা গেল, এই মোহনবাগান এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার জন্য তৈরিই নয়! ফুটবলারদের ফিটনেসে ঘাটতি। আহাল টিমটা সে-দেশের প্রিমিয়ার লিগে ১৬টা ম্যাচ খেলে ফেলেছে। মোহনবাগান ম্যাচের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে শিবির করে এসেছে। সেখানে ডুরান্ডের পর পুরো টিম নিয়ে মোহনবাগানের প্রস্তুতি সাকুল্যে সপ্তাহ দুয়েকের। ম্যাচ প্র্যাকটিসেরও অভাব। মাঠে ৫০-৫০ পরিস্থিতিতে বল জিতে নিলেন আহালের ফুটবলাররা। গতি, উচ্চতা, শারীরিক সক্ষমতায় টেক্কা দিলেন তাঁরা। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গুছিয়ে খেলার চেষ্টা করলেও ম্যাকলারেন, কামিন্স, সাহালের সহজ সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হল।
আরও পড়ুন-সহিংসতার জেরে ৫ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত
প্রথমার্ধে মোহনবাগানের কোনও সিটারই ছিল না। বরং আহাল গোল করে এগিয়ে যেতে পারত। মিরজোয়েভ সুলেমানের শট পোস্টে লেগে ফেরে। কামিন্স শুরুতে সিঙ্গল স্ট্রাইকারে কার্যকরী হতে পারেননি। মোলিনা দ্বিতীয়ার্ধে কিয়ান নাসিরিকে তুলে আক্রমণভাগে ম্যাকলারেনকে জুড়ে দেন কামিন্সের সঙ্গে। টাংরির জায়গায় আসেন অনিরুদ্ধ থাপা। কিছু পরে লেফট উইংয়ে রবসন আসেন লিস্টনের পরিবর্তে। ডিফেন্সে অভিষেক সিংয়ের জায়গায় শুভাশিস বোস। সুযোগ তৈরি হল। কামিন্সের মাইনাস থেকে ফাঁকায় বল গোলকিপারের গায়ে মারেন জেমি। রবসনের গোলের ঠিকানা লেখা সেন্টার থেকে সহজ সুযোগ হেলায় হারান সাহাল। গোল মিস করেন কামিন্স, আলবার্তোরাও। মরিয়া আহাল ৮৩ মিনিটে যুবভারতীর হাজার তিরিশেক মোহন জনতাকে স্তব্ধ করে গোল করে এগিয়ে যায়। বাকি সময়ে গোলশোধ করতে পারেনি মোলিনার দল। গোলে বিশাল কাইথ গোটা দুয়েক নিশ্চিত গোল বাঁচান। শেষ বাঁশি বাজার পর সবুজ ঘাসে মুখ ঢাকেন সাহাল, থাপারা। কোচ মোলিনার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সমর্থকেরা। কোচের উদ্দেশে গ্যালারি থেকে উঠল ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও। মোলিনা বললেন, জিতলে প্রশ্ন উঠত না। আমি ছেলেদের খেলায় গর্বিত।