অনির্বাণ দাস
রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই আবেগের বিস্ফোরণ কাকে বলে, তার সাক্ষী রইল শনিবাসরীয় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। গ্যালারিতে সবুজ-মেরুন রং মশাল জ্বলে উঠল নিমেষে। যুবভারতী তখন আক্ষরিক অর্থেই মোহনভারতী!
আইএসএলের ইতিহাসে মুম্বই এফসির পর দ্বিতীয় দল হিসাবে দ্বিমুকুট। লিগ শিল্ডের পর এবার আইএসএল কাপও জিতল মোহনবাগান। গতবার যা অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল।
যাঁর গোলে শাপমুক্তি, সেই জেমি ম্যাকলারেন আবার গোটা ম্যাচে বেশ কিছু সহজ সুযোগ নষ্ট করে দলকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কথায় আছে, ওস্তাদের মার শেষ রাতে! অতিরিক্ত সময়ের খেলা মিনিট ছয়েক গড়াতে না গড়াতেই, ম্যাকলারেনের গোল। গ্রেগ স্টুয়ার্টের পাস বক্সের মধ্যে রিসিভ করেই, ডান পায়ের চকিত শটে গুরপ্রীতকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ালেন অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার। আর সেই গোলেই দ্বিমুকুট জয় সবুজ-মেরুনের। আরও একবার প্রমাণিত হল, এই মুহূর্তে দেশের শ্রেষ্ঠ ফুটবল ক্লাবের নাম মোহনবাগান।
আরও পড়ুন-আজ কলকাতা প্রেসক্লাবে ইমামদের সাংবাদিক বৈঠক, লক্ষ্য ইনডোরের সভা
অথচ প্রথমার্ধে রীতিমতো ছন্নছাড়া ফুটবল খেলেছে জোসে মোলিনার দল। শুরুর মিনিট দশেক বাদ দিলে, বাকিটা ছিল বেঙ্গালুরুর। মাঝমাঠে রীতিমতো রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আলবার্তো নগুয়েরা। তাঁর পা থেকেই তৈরি হচ্ছিল বেঙ্গালুরুর যাবতীয় আক্রমণ। সুনীল ছেত্রী, এডগার মেন্ডেজ, রায়ান উইলিয়ামসরা বিরতির আগে বারবার চাপ তৈরি করেছেন মোহনবাগান রক্ষণে। বিরতির আগে সবুজ-মেরুনের সুযোগ বলতে গেলে মাত্র দুটি। একবার ম্যাকলারেনের ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি কামিন্স। আরেকবার মনবীরের ক্রসে ম্যাকলারেন পা ছোঁয়ানোর আগেই বল তালুবন্দি করেন গুরপ্রীত।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হওয়ার মিনিট চারেকের মধ্যেই আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়েছিল মোহনবাগান। রায়ান উইলিয়ামসের ক্রস বিপন্মুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে বসেন আলবার্তো রডরিগেজ। এর পরেই টনক নড়ে মলিনার ফুটবলারদের। ৬১ মিনিটে লিস্টন কোলাসো ও অনিরুদ্ধ থাপাকে তুলে সাহাল আব্দুল সামাদ ও আশিক কুরুনিয়নকে মাঠে নামিয়ে দেন মোলিনা। আর এই জোড়া পরিবর্তনে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ে। ৭১ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে ১-১ করে দেন কামিন্স। নিজেদের বক্সে হ্যান্ডবল করেছিলেন বেঙ্গালুরুর সানা সিং। এরপর সংযুক্ত সময়ের শেষ মিনিটে অবিশ্বাস্যভাবে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ম্যাকলারেন। নইলে ম্যাচ অতিরিক্ত সময় গড়াত না।
তবে সেই ম্যাকলারেনই আবার জয়সূচক গোল করে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের ইতিহাসে নিজের নাম খোদাই করে নিলেন!