প্রতিবেদন : যুবভারতীতে নর্থইস্ট রূপকথা। খেতাব রক্ষার লড়াইয়ে এগিয়ে থেকেও ট্রফি হাতছাড়া মোহনবাগানের। যুবভারতীর গ্যালারিকে স্তব্ধ করে দু’গোলে পিছিয়ে থেকেও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন নর্থইস্ট ইউনাইটেডের। চার গোলের থ্রিলার টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতে ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন জন আব্রাহামের টিম। আইএসএলে আবির্ভাবের এক দশক পর প্রথমবার কোনও টুর্নামেন্ট জিতল নর্থইস্ট। খেতাব রক্ষার লড়াই হেরে হতাশায় ডুবল মোহনবাগান। ভিভিআইপি গ্যালারিতে বসে নিজের টিমের ঐতিহাসিক সাফল্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন বলিউড তারকা জন।
দুই স্প্যানিশ কোচের মগজাস্ত্রের লড়াইয়ে জোসে মোলিনাকে টেক্কা দিলেন জুয়ান পেদ্রো বেনালি। আগের দিন বেনালি হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ছুটি কাটাতে আসেননি। ইতিহাস গড়তে এসেছেন। টিমের পাশে থাকতে উড়ে এসেছিলেন জন। ইতিহাস গড়েই ফিরছেন আইসএসএলের আগে বাকিদের সতর্কবার্তা দিয়ে।
আরও পড়ুন-নর্থ চ্যানেল জয় সায়নীর
শনিবাসরীয় ডুরান্ড ফাইনালে দুই অর্ধে দু’রকম ছবি দেখা গেল। প্রথমার্ধ মোহনবাগানের, দ্বিতীয়ার্ধটা পাহাড়ের দলটির। জেসন কামিন্স ও সাহাল আব্দুল সামাদের গোলে ২-০ এগিয়ে থেকেও দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে ছন্নছাড়া ফুটবল সবুজ-মেরুনের। তিন মিনিটের ঝড়ে পরপর দু’গোল শোধ করে নর্থইস্ট। চকিত শটে গোল করে মোহনবাগানের আত্মবিশ্বাস টলিয়ে দেন আলাইদিন আজারাই ও গিলেরমো ফার্নান্ডেজ। টাইব্রেকারে টানা তিনবার মোহনবাগানকে জেতাতে পারল না বিশাল কাইথের বিশ্বস্ত হাত। উল্টে লিস্টন কোলাসো এবং শুভাশিস বোসের শট বাঁচিয়ে নর্থইস্টের জয়ের নায়ক গোলকিপার গুরমিত।
ঘরের মাঠে গ্যালারির সমর্থন নিয়ে দাপটে শুরু করেছিল মোহনবাগান। সেমিফাইনালের দল থেকে একটি বদল করেছিলেন কোচ জোসে মোলিনা। দিমিত্রি পেত্রাতোসকে বেঞ্চে রেখে গ্রেগ স্টুয়ার্টকে প্রথম একাদশে এনেছিলেন বাগানের স্প্যানিশ বস। হাইল্যান্ডারদের শুরু থেকে চাপে রাখতে প্রেসিং ফুটবলে জোর দিয়েছিল মোহনবাগান। তাতেই ১১ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় সবুজ-মেরুন। নর্থইস্টের আশির আখতার জার্সি টেনে ধরে সাহাল আব্দুল সামাদকে বক্সে ফেলে দেন। রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। বিপক্ষ গোলকিপারকে উল্টোদিকে ফেলে গোল করেন কামিন্স।
শুরুতেই ১-০ এগিয়ে থেকে আক্রমণে আরও ঝাঁজ বাড়ায় মোহনবাগান। মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রচুর পাস খেলেন অনিরুদ্ধ থাপা, আপুইয়ারা। মনবীর, লিস্টনরা দুই প্রান্ত থেকে একের পর এক আক্রমণ তুলে আনেন। স্টুয়ার্ট ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন। মিনিট দুয়েক পর সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল নর্থইস্ট। কিন্তু জিতিনের হেড সেভ করেন বিশাল। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে ব্যবধান বাড়ায় মোহনবাগান। একাধিক ডিফেন্ডারদের এড়িয়ে নর্থইস্ট বক্সে ঢুকে লিস্টন মাপা পাস বাড়ান সাহালের উদ্দেশে। চলতি বলে অনবদ্য ফিনিশে বল জালে জড়ান সাহাল।
আরও পড়ুন-প্যারালিম্পিকে পঞ্চম পদক, এবার শুটিংয়ে ব্রোঞ্জ রুবিনার
দ্বিতীয়ার্ধে নর্থইস্টের আগ্রাসী ফুটবলে চাপে পড়ে যায় মোহনবাগান। ছন্নছাড়া ফুটবল খেলে মোলিনার দল। সাহালকে তুলে দিমিত্রিকে নামিয়ে দেন বাগান কোচ। ৯০ মিনিটেই জয় নিশ্চিত করতে চাইছিলেন মোলিনা। কিন্তু মাত্র ৩ মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল হজম করে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায় সবুজ-মেরুন। ৫৫ মিনিটে জিতিনের পাস থেকে এক গোল শোধ করেন আজারাই। মিনিট দুয়েক পর আরও একটি গোল করে খেলায় সমতা ফেরায় নর্থইস্ট। চলতি বলেই জোরালো শটে গোল গিলেরমোর। বিশালের প্রতিরোধ না থাকলে দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকেই খেলা শেষ করে দিতে পারত নর্থইস্ট। টাইব্রেকারে এদিন অবশ্য ত্রাতা হতে পারলেন না বিশাল।