চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: দুপুরের ব্রিগেডের জনগর্জন যেন রাতের ৫৫ হাজার দর্শকের যুবভারতীতে মোহনগর্জন। ফিরতি ডার্বিতে ৪৫ মিনিটের ঝড়ে মশাল নিভিয়ে ৩-১ গোলে জয় মোহনবাগানের। প্রথমার্ধে একতরফা দাপট সবুজ-মেরুনের। দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গল মরিয়া লড়াই করলেও তা যথেষ্ট ছিল না। আসলে কার্লেস কুয়াদ্রাতের ছেলেদের ঘুম ভাঙল অনেক পরে। সুপার কাপে ডার্বি হারের বদলা নিয়ে আইএসএলের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে উঠে এল সবুজ-মেরুন। ১৭ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট মোহনবাগানের। অন্যদিকে, মর্যাদার ডার্বি হেরে লিগে ১০ নম্বরেই থেকে প্লে-অফের আশা কার্যত শেষ ইস্টবেঙ্গলের।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
দুর্দান্ত খেলে যুবভারতীর গ্যালারিতে হাজার ওয়াটের আলো জ্বালিয়ে ডার্বির নায়ক দিমিত্রি পেত্রাতোস ও বিশাল কাইথ। দিমিত্রি নিজে গোল করার পাশাপাশি সতীর্থ জেসন কামিন্স ও লিস্টন কোলাসোকে দিয়ে গোল করিয়ে ম্যাচের সেরা। আর নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে সবুজ-মেরুনের দুর্গ রক্ষা করলেন গোলকিপার বিশাল। গোল করে সোনি নর্ডির মতো স্টেনগান সেলিব্রেশনে যুবভারতী মাতালেন দিমিত্রি, কামিন্সরা। জুয়ান ফেরান্দো বিদায়ের পর দায়িত্ব নিয়েই বদলে দিয়েছেন টিমের পারফরম্যান্স। ডার্বিতে এখনও অপরাজিত বাগানের স্প্যানিশ বস। এই নিয়ে আইএসএলের বড় ম্যাচে হাবাসের কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গলকে তিনবার তিন গোল দিল মোহনবাগান।
আরও পড়ুন-নবীনে প্রবীণে সকলে সকলের সনে …
প্লে-অফ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে পাহাড় টপকাতে হত ইস্টবেঙ্গলকে। ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিট মোহনবাগানের হাইপ্রেসিং ফুটবল সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিল তারা। ১২ মিনিটে গোলের দিকে এগোচ্ছিলেন ক্লেটন সিলভা। হাই স্টাড। বল ছাড়া ক্লেটনকে আটকান মোহনবাগান গোলকিপার বিশাল কাইথ। রেফারি পেনাল্টি দিলে তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন ক্লেটন। দুর্দান্ত অনুমান ক্ষমতায় বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ক্লেটনের শট বাঁচান বিশাল। পেনাল্টির বিরোধিতা করায় হলুদ কার্ড দেখতে হয় কোচ হাবাসকে। পেনাল্টি বাঁচিয়ে উজ্জীবিত মোহনবাগান প্রথমার্ধের বাকি সময়টা দাপিয়ে বেরিয়েছে। মাঝমাঠে ব্লকিং না থাকায় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ তখন কার্যত বালির বাঁধ। তার মধ্যেই প্রথমার্ধে বুক চিতিয়ে করলেন শুধু দলে ফেরা সাউল ক্রেসপো ও হিজাজি মাহের।
আরও পড়ুন-কাল এসসি-এসটি ও ওবিসি সেলের বৈঠক ডাকলেন অভিষেক
বিরতির আগেই তিন গোল করে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় মোহনবাগান। ২৭ মিনিটে দিমিত্রির শট ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার প্রভাসুখন গিল ক্লিয়ার করলে ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দেন কামিন্স। ৩৬ মিনিটে দ্বিতীয় গোল মোহনবাগানের। এবারও গোলের পাস দিমিত্রির। অস্ট্রেলীয় তারকার শট পোস্টে লেগে ফিরলে ফের ইস্টবেঙ্গল বক্সে বল বাড়ান দিমিত্রি। লিস্টন বিনা বাধায় গোল করে যান। হিজাজি-সহ লাল-হলুদ রক্ষণ একই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। আক্রমণে ঝড় তুলে বিরতির আগে তৃতীয় গোল তুলে নেয় হাবাসের দল। নিজেদের বক্সে নন্দ ফাউল করেন লিস্টনকে। পেনাল্টি থেকে গোল করেন দিমিত্রি।
আরও পড়ুন-দলনেত্রীর হাত ধরে রচনা রাজনীতিতে দিদি নম্বর ওয়ান
‘৭৫-এর পাঁচ গোলের আতঙ্ক তাড়া করতে থাকে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। বিরতিতেই হতাশ লাল-হলুদ সমর্থকদের অনেকেই যুবভারতী ছাড়তে শুরু করেন। তবে দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে দারুণ লড়াই করে ইস্টবেঙ্গল। বিরতির পর মিনিট দুয়েকের মধ্যে কামিন্স ৪-০ করার সুযোগ হাতছাড়া করার পর ম্যাচের বাকি সময়টা লাল-হলুদের। লালচুংনাঙ্গা, অজয় ছেত্রীকে তুলে বিষ্ণু ও সায়নকে সুপারসাব করে দুই তরুণের গতিকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন কুয়াদ্রাত। ৫৩ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল ব্যবধান কমায়। ক্লেটনের ক্রস থেকে দুর্দান্ত গোল করেন ক্রেসপো। ৬২ মিনিটে ফের গোলের লকগেট খুলে ফেলে ইস্টবেঙ্গল। নন্দকুমারের সেন্টার থেকে ক্লেটনের শক্তিশালী হেড অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় বাঁচান বিশাল। রক্ষণ ও মাঝমাঠ ফ্রেশ লেগ নামিয়ে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেন মোহনবাগান কোচ। কামিন্স, লিস্টন, সাহালদের তুলে অনিরুদ্ধ থাপা, আশিস রাই, আর্মান্দো সাদিকুকে নামান হাবাস। কিন্তু গোলের ব্যবধান বাড়েনি মোহনবাগানের। বরং শেষ লগ্নে একটি নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হয় ইস্টবেঙ্গল। বিষ্ণুকে বক্সে ফাউল করা হলেও রেফারি ইস্টবেঙ্গলের পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি। রেফারিং নিয়ে ফের উঠছে প্রশ্ন। ডার্বিতে ফের কার্ডের ছড়াছড়ি। হাবাস, কুয়াদ্রাতও কার্ড দেখলেন। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর দল গুটিয়ে যাওয়ায় অবাক হাবাস। তবে কুয়াদ্রাত লিগে এখনও লড়াই চালিয়ে যেতে চান।