মুসলিম কারিগরের তৈরি সুতোয় পৈতে পরেন গাজনের সন্ন্যাসীরা, ধর্মান্ধ বিজেপি ব্রাত্য পুরুলিয়ায়

রাজতন্ত্রের আমল থেকেই এই জেলার গাজন উৎসবে আনন্দে অংশ নেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। পূজার্চনার কাজেও মুসলমানরা পেয়েছেন রাজদাক্ষিণ্যের জমি।

Must read

সংবাদদাতা, পুরুলিয়া : মুসলমান কারিগরের তৈরি সুতোয় পৈতে পরেন গাজনের সন্ন্যাসীরা। এটাই স্বাভাবিক পুরুলিয়ায়। তাই শত চেষ্টা করেও বিজেপি এখানে হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় তাস খেলতে পারেনি। রাজতন্ত্রের আমল থেকেই এই জেলার গাজন উৎসবে আনন্দে অংশ নেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। পূজার্চনার কাজেও মুসলমানরা পেয়েছেন রাজদাক্ষিণ্যের জমি। সেই প্রথা মেনেই আজও অযোধ্যা পাহাড়তলির বাড়েরিয়া গ্রামের কাছে লহরিয়া শিবমন্দিরের গাজন সন্ন্যাসীদের জন্য বংশ পরম্পরায় পৈতের সুতো কাটছেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা কুরবান আনসারি। গাজনের সন্ন্যাসীরা আগে তাঁদের বাড়ি থেকে সুতো এনে পৈতে বানিয়ে পরতেন। এখন ঘরে জায়গা কম, তাই কুরবান নিজেই তাঁর বাড়িতে কাটা পৈতের সুতো পৌঁছে দেন মন্দির প্রাঙ্গণে। সেখানে প্রসাদও খান মহানন্দে। কেউ তাঁকে হিন্দুত্ববাদের ফতোয়া জারি করে শাসাতে আসে না।

আরও পড়ুন-মোহন-আমন্ত্রণ এড়িয়ে ইস্টবেঙ্গলে ক্রীড়ামন্ত্রী

মুসলিম কারিগরের হাতে কাটা সুতোর পৈতে ধারণের জন্য সন্ন্যাসীদেরও কেউ জাতিচ্যুত করে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী এভাবেই সম্প্রীতির গাজন হচ্ছে লহরিয়ায়। কুরবান জানান, বহুকাল আগে বাঘমুন্ডির রাজ পরিবার লহরিয়ায় শিবমন্দির নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছিলেন। তখনই পুজো পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন দায়িত্ব দেন রাজারা। সেজন্য প্রত্যেককে জমিও দেওয়া হয়। কুরবানের পূর্বপুরুষ সুতোর কারবার করতেন। তাই তাঁদের পৈতে তৈরির সুতোর বরাত দেওয়া হয়। সেজন্য রাজারা তাঁদের জমিও বরাদ্দ করেন। শতবর্ষের বেশি সময় ধরে সেই প্রথা চলে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত মাহাত বলেন, ‘এলাকার ৭টি গ্রামের মানুষ এখানকার পুজো পরিচালনা করেন। বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের বহু এলাকা থেকে ভক্তরা আসেন। কেউ কোনও দিন মুসলমানের দেওয়া পৈতের সুতো নিতে অস্বীকার করেন না। বরং ভক্তির সঙ্গেই সেই সুতো গ্রহণ করেন।’ বাঘমুন্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাত বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ শুধু বিজেপির রাজনীতিতে। বাংলায় হিন্দু-মুসলমানরা মিলেমিশেই থাকে। এমনকী শিবমন্দিরে বলি দেওয়া পাঁঠার মাংসের একটা অংশ কুরবানরাও পান। তাঁরা তা নিষ্ঠার সঙ্গেই গ্রহণ করেন। এটাই বাংলার সংস্কৃতি। এখানে বিজেপির মতো ধর্মান্ধদের জন্য মাটি নেই।’

Latest article