প্রতিবেদন : বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতি ও হিন্দুদের উপর অকথ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা নিক ভারত সরকার, এমনটাই দাবি তুলছে কলকাতা ইসকন। যেভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের অপেক্ষাতেই রয়েছে আপামর হিন্দু সমাজ, জানিয়েছেন কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস। গত কয়েকদিনে আরও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংখ্যালঘু নির্যাতন, সন্ন্যাসী-হেনস্থা। দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রেহাই নেই মহিলা সাংবাদিকেরও।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ভারতে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে ইসকনের সন্ন্যাসীদের। বেনাপোল সীমান্তে দু’দিনে আটকে দেওয়া হয়েছে অন্তত ৬৩ জন সাধুকে। শনিবার ৫৪ জনকে এবং রবিবার ৯ জনকে সীমান্তের ওপারে আটকে রীতিমতো হেনস্থা করা হয়েছে বলে খবর। বেছে বেছে হিন্দু সন্ন্যাসীদের বাড়িতে চলছে হামলা-ভাঙচুর। আবার ধৃত সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে দেখা করার ‘অপরাধে’ ইসকনের আরও ৩ জন সাধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওষুধ ও খাবার নিয়ে চিন্ময় প্রভুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে গ্রেফতার করা হয়েছে চিন্ময়কৃষ্ণের সচিব-সহ ২ সন্ন্যাসীকে। বাংলাদেশের নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এবার মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থা করতেও ছাড়ল না উত্তেজিত জনতা। শনিবার রাতে অফিস থেকে বেরতেই ঢাকার কারওয়ান বাজারে মহিলা সাংবাদিক মুন্নি সাহাকে রাস্তায় ঘিরে ধরে হেনস্থা করা হয়। কিন্তু এই ঘটনায় ওই মহিলা সাংবাদিককেই উল্টে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। তবে তা অস্বীকার করেছে পুলিশ। এদিকে ত্রিপুরা থেকে কলকাতা আসার পথে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবেড়িয়া বিশ্বরোডে হামলার মুখে পড়ল ভারতীয় পরিবহণ সংস্থার একটি বাস।
আরও পড়ুন-বেকসুর খালাস খালেদাপুত্র-সহ সাজাপ্রাপ্তরা, হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা
পরিকল্পিতভাবে ট্রাকের ধাক্কায় বাস দাঁড় করিয়ে হুমকি দেওয়া হয় যাত্রীদের। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অকথ্য অত্যাচার চলছে। ইসকনের সন্ন্যাসীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। ভারত সরকারের উপরেই আমরা ভরসা করে আছি, নিশ্চয়ই কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও জানিয়েছে, দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় যেমন তাঁর ত্রাহি-ত্রাহি চিৎকারেও কেউ এগিয়ে আসেননি, তেমনই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরাও বাঁচার আশায় চিৎকার করছে। আমরাও অত্যন্ত অসহায় বোধ করছি। তাই সারা ভারতের হিন্দুরা এখন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। এদিন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর লাগামহীন নির্যাতনের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মন্দিরের কোটি কোটি ভক্ত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন বলে জানিয়েছেন কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
এদিকে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি প্রতিদিন আরও বিশৃঙ্খল হয়ে উঠলেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখনও চুপ। এই নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলে দিয়েছেন, এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার যা পদক্ষেপ নেবে, রাজ্য তাকে সমর্থন জানাবে। কিন্তু দিল্লি কিছু তো করুক! তবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে আদৌ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, নাকি এই সুযোগে এরাজ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করে হিন্দু আবেগ গড়ে তোলাটা বেশি প্রয়োজন, সেটাও দেখতে হবে। এদিকে, বাংলাদেশের এই অরাজকতার প্রভাব পড়েছে সীমান্তেও। ব্যাহত দুই দেশের বাণিজ্য। স্লট বুকিং বন্ধ থাকায় বর্তমানে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু রফতানি বন্ধ রয়েছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিজের দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। তবে দেশে ফেরার আনন্দকে গ্রাস করেছে আতঙ্ক। আবার বাংলাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে বন্ধ হচ্ছে উত্তর দিনাজপুরের মিলনমেলা। প্রতি ডিসেম্বরে হেমতাবাদের মাকড়হাট সীমান্তের এই মিলনমেলায় অংশ নেন দুই পারের হাজার হাজার মানুষ।