প্রতিবেদন : সাতসকালে ট্রলিতে উদ্ধার এক মহিলার মুণ্ডহীন দেহ। এই ঘটনা ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কলকাতায় আহিরিটোলার (Ahiritola case) ঘাটে। ট্রলি রেখে চম্পট দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকলেও স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন দুই অভিযুক্ত মহিলা। খবর দেওয়া হয় থানায়। পুলিশ এসে আটক করে সম্পর্কে মা-মেয়ে ওই দুই মহিলাকে। এরপরেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খুলতে থাকে রহস্যের মোড়ক। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত দুই মহিলা ফাল্গুনী ঘোষ ও আরতি ঘোষ। ফাল্গুনী আরতির মেয়ে। উদ্ধার হওয়া মৃত মহিলার নাম সুনীতা ঘোষ। তিনি সম্পর্কে ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি। মধ্যমগ্রামে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বীরেশপল্লি এলাকায় এক ভাড়া বাড়িতে থাকেন অভিযুক্তরা। মৃতার বাড়ি নবদ্বীপের নাদনঘাটা এলাকায়।
আরও পড়ুন- রেষারেষিতেই ‘দুর্ঘটনা’ এবং মিসিং লিঙ্ক ঘিরে কিছু ধন্দ
মঙ্গলবার সকালে বাক্সবন্দি দেহ বাড়ি থেকে নিয়ে বড় রাস্তা, সেখান থেকে ভ্যানে করে মধ্যমগ্রাম চৌমাথা হয়ে দোলতলায় এবং সেখান থেকে ক্যাবে করে কাজিপাড়া রেল স্টেশন যায় মা-মেয়ে। এরপর ৬-৪৫ মিনিটের হাসনাবাদ-মাঝেরহাট লোকালে কুমোরটুলির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানেই আহিরিটোলা ঘাট ফাঁকা দেখে ট্রলিটি ফেলার চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। স্থানীয়রা ট্রলি থেকে কটু গন্ধ পাওয়ায় তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁরা ওই দুই মহিলাকে চেপে ধরে। ঘাবড়ে গিয়ে তাঁরা জানান, সেখানে কুকুরের দেহ রয়েছে। এরপর ট্রলি খুলতেই বেরিয়ে আসে এক মহিলার মুণ্ডহীন দেহ। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় থানায়। পুলিশ এলে তুলে দেওয়া হয় ওই দুই মহিলাকে তদন্তকারীদের হাতে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে,
পিসিশাশুড়িকে ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করেছে ফাল্গুনী। জেরায় ধৃত জানিয়েছে, খুন দুদিন আগেই হয়েছে। মৃতদেহের পচা গন্ধ ঢাকতে রাসায়নিক স্প্রে করে রাখা হয়েছিল। দেহ ট্রলিতে ঢোকানোর জন্য বঁটি, কাটারি দিয়ে পা কাটা হয়।
যদিও কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীদের জেরায় বারবার বয়ান বদল করছে ধৃত ফাল্গুনী ঘোষ। তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে এই কাজ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, অভিযুক্তদের প্রতিবেশীরা জানান, দেড়-দু বছর আগে বীরেশ পল্লির বাড়িতে ভাড়া আসেন মা-মেয়ে। মা আরতি ঘোষ আয়ার কাজ করতেন। মেয়ে ফাল্গুনীর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। স্থানীয়দের দাবি ফাল্গুনী উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করত। মাঝেমধ্যে গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরতে দেখা যেত। বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষ একাধিকবার পুরপিতা ও বাড়ির মালিককে অভিযোগ করেছিল বলে দাবি এলাকাবাসীর। পারিবারিক বিবাদের জেরে পরিকল্পনামাফিক পিসিশাশুড়িকে ডেকে এনে খুন করা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই বীরেশপল্লির ভাড়াবাড়িটি সিল করে দিয়েছে।