পল্লবী সমাদ্দার, অস্টিন: দুর্গাপুজো প্রায় দোরগোড়ায়। এই সুদূর প্রবাসে আমেরিকাতেও কিন্তু মা দুর্গা আসেন, তবে নিভৃতে। এখানে মা-এর আগমন বার্তা কোনও ব্যানার-এ ঘোষিত হয় না, রাস্তায় মণ্ডপসজ্জার হইহুল্লোড় নেই, পুজো বলে কেনাকাটার বিশেষ ভিড় নেই, বইয়ের দোকানে পুজোবার্ষিকীর পসরা নেই। এতকিছু নেই সত্ত্বেও আমি খুব হলফ করে বলতে পারি অফিসে কাজ করতে করতে, মিটিং-এ খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলতে চলতে, বা শুধু ঘরে বসেই বাঙালি মন দুর্গাপুজোর দিন গোনে।
আরও পড়ুন-আজ লিগে নামছে ইস্টবেঙ্গল-মহামেডান
বারবার চোখ চলে যায় ক্যালেন্ডারে দুর্গাপুজো এবং তার কাছাকাছি শনি রোববারগুলোর তারিখে। এ দেশে তো আর দুর্গাপুজোর ছুটি নেই, অগত্যা শনি-রবি ভরসা। অস্টিনে এবার চার-চারটে দুর্গাপুজো। চারটে আলাদা আলাদা গোষ্ঠীর উদ্যোগে, যেমন ‘বন্ধন’ গোষ্ঠীর কর্ণধার মূলত বাংলাদেশের বাঙালিরা, ওদিকে ‘সেন্ট্রাল টেক্সাস বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন (সিটিবিএ)’-এর উদ্যোক্তারা বেশির ভাগ-ই পশ্চিমবঙ্গের। কিন্তু উৎসব জাতীয়তাবাদের ধার ধারে না। এপার বাংলা-ওপার বাংলা এক হয়ে যায় পুজোমণ্ডপে। এখানে ৫ দিন পুজোর বিলাসিতা নেই। দু’দিনেই ৫ দিনের পুজোর আচার অনুষ্ঠান সেরে ফেলতে হয়। মা-এর আরতি, অঞ্জলি, সন্ধিপুজো— সবই পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে। তবে পুজোর আচার এখানে কড়া বিধিনিষেধে আটকে নেই, আনন্দ এবং বাঙালিয়ানার উদযাপনই মূল লক্ষ্য। এসবের মধ্যেই রসনার তৃপ্তিও হওয়া চাই।
আরও পড়ুন-মুসলিম সম্প্রদায়ের ফল-দুধে ভোগ দেবী দুর্গার
দুপুর আর রাতে দু’বেলা দু’দিন খাবারের আয়োজন করে থাকেন উদ্যোক্তারা। মূলত বাঙালি খাবার-দাবার, ফিশ ফ্রাই থেকে শুরু করে বাসন্তী পোলাও; খিচুড়ি, লাবড়া থেকে বোঁদে সবই মোটামুটি থাকে মেনুতে। দেশীয় গয়না, শাড়ির পসরা সাজিয়ে বিক্রি করেন অনেকেই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাতামাতিও থাকে। প্রতিবছর নতুন প্রতিমা আনা সম্ভব হয় না। তাই এক প্রতিমাই পূজিত হয় বারবার। এখানে মৃন্ময়ী মা-এর বিসর্জন নেই কিন্তু দশমীর বিদায়বেলায় সিঁদুরখেলা আছে, বিজয়ায় মিষ্টিমুখ আছে। উৎসবের মেজাজ ঢাকের আওয়াজ ছাড়া জমে না। তাই এখানে ঢাকেও কাঠি পড়ে বইকি। প্রবাসীদের অনেকেই খুব ভাল ঢাক বাজিয়ে থাকেন। পুজোর ঢাক একবার বেজে উঠলেই হাজার হাজার মাইলের দূরত্বের কথা আর মনে থাকে না, মনে থাকে না কতদিন বাড়ি যাওয়া হয়নি, মনে থাকে না পাড়ার মোড়ের মিষ্টির দোকানের সিঙাড়া-জিলিপি কতদিন খাওয়া হয়নি, মুহূর্তের জন্য নিজের পরিবারের লোকজন-পাড়ার পুজোমণ্ডপ ছেড়ে এত দূরে থাকার দুঃখ উধাও হয়ে যায়। দুগ্গা ঠাকুরকেই ভীষণ আপনজন মনে হতে থাকে।