নয়াদিল্লি: দিল্লি বিস্ফোরণের নেপথ্য চক্রান্ত যতই স্পষ্ট হচ্ছে, তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক নয়া তথ্য, ততই বেআব্রু হচ্ছে মোদি সরকারের ব্যর্থতা। প্রশ্ন উঠেছে, এমন ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের শেকড় ছড়িয়ে গেল এত গভীরে, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না অমিত শাহর গোয়েন্দা দফতর? ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা মনে করছেন, সেদিন দিল্লির বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘মাদার অফ স্যাটান’ (Mother Of Satan)। ইউরোপে হামলাতে ব্যবহার করা হয় এই বিস্ফোরক। অনেকের ধারণা, এর স্রষ্টা আসলে আইএস। কী ধরনের বিস্ফোরক এটা? তদন্তকারীদের সূত্র বলছে, এটা আসলে ট্রাই-অ্যাসিটোন ট্রাইপার অক্সাইড। এর বিস্ফোরণের জন্য ডিটোনেটরের দরকার হয় না। অত্যন্ত সংবেদনশীল এই বিস্ফোরকের জন্য যে উত্তাপ জরুরি তার জন্য সামান্য ঘর্ষণ বা চাপই যথেষ্ট। এই টিএপি দিয়েই তৈরি করা সম্ভব মিলিটারি গ্রেডের মতো শক্তিশালী আইআইডি। যার তীব্রতা টিএনটি বা ট্রিনিট্রোটোলুইনের ৮০ শতাংশের সমান। যে কোনও মুহূর্তেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে এই বিস্ফোরক। এমনকী তৈরি করা বা বহন করার সময়ও। কিন্তু সেদিন সম্ভবত শুধুমাত্র মাদার অফ স্যাটান ব্যবহার করা হয়নি দিল্লি বিস্ফোরণে। সঙ্গে ছিল ২ থেকে ৩ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও জ্বালানি তেল। সবশুদ্ধু বোমাটির ওজন দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কেজি। ফলে এই ভয়ঙ্কর শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণের অভিঘাত পৌঁছে গিয়েছিল মাটির ৫০ ফুট গভীরেও।
আরও পড়ুন-বাড়ছে ক্ষোভ, একাধিক অগ্নিসংযোগ ইউনুসের স্বপ্নের গ্রামীণ ব্যাঙ্কে
রবিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে মোট ৩টি নাইন এমএম কার্তুজ মিলেছে, যা সাধারণত সেনা বা পুলিশ ব্যবহার করে থাকে। দুটি অব্যবহৃত এবং একটি ব্যবহৃত খোল উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু কোনও আগ্নেয়াস্ত্র না মেলায় রহস্য ঘনাচ্ছে। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হাওয়া কার্তুজ কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর নয়। তাহলে এগুলো এল কোথা থেকে? জঙ্গিরাও কি তাহলে সেনা কার্তুজ ব্যবহার করছে? এগুলো জোগান দিচ্ছেই-বা কারা? কেন এই ব্যাপারে আগে থেকে কোনও খোঁজ দিতে পারল না ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স? একগুচ্ছ প্রশ্ন ঘিরে রহস্য ঘনাচ্ছে। একইসঙ্গে থ্রিমা নামে একটি নিষিদ্ধ অ্যাপ ব্যবহারের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
উমরের অ্যাকাউন্টে ২০ লক্ষ!
তদন্তে উঠে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। লালকেল্লায় বিস্ফোরণের ঠিক আগেই ঘাতক উমরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল ২০ লক্ষ টাকা। কে পাঠিয়েছিল সেই টাকা? কেন? তবে তদন্ত সূত্রের দাবি, মাত্র কিছুদিন আগে ফরিদাবাদ বাজার থেকে প্রচুর পরিমাণ সার কিনেছিল উমর। কেন? প্রশ্ন জেগেছিল বাজারের ব্যবসায়ীদের মনেও। এইসব প্রশ্নেরই এখন উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
জালে উমরের মূল সহযোগী আমির তবে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ লালকেল্লা বিস্ফোরণে আত্মঘাতী জঙ্গি উমর গাড়িতেই এনেছিল বিস্ফোরক এবং তাকে এই ষড়যন্ত্রে মদত জুগিয়েছিল আমির রশিদ আলি নামে জম্মু-কাশ্মীরের এক বাসিন্দা। সে ধরা পড়েছে পুলিশের জালে। তবে ধৃতদের মধ্যে ৪ জন ডাক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দিয়েছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার সঙ্গে কোনও সংযোগ না পেয়ে।
জাল উত্তর-পূর্বেও তদন্তে উঠে এসেছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ঘেরা বিভিন্ন রাজ্যে নাশকতার বীজ বপন করার ছক৷ এই লক্ষ্যে সচেষ্ট ছিল দিল্লির গাড়ি বিস্ফোরণের অন্যতম প্রধান চক্রী হরিয়ানার আল-ফালহা হাসপাতালের চিকিত্সমক উমর উন নবি মহম্মদ৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ইম্ফলের বাসিন্দা এক তরুণী চিকিত্সককে মগজ ধোলাই করে সন্ত্রাসবাদীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল উমর৷ উমরের লক্ষ্য ছিল এই মহিলার মাধ্যমে মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলিতে জইশ ই মহম্মদের জঙ্গি জাল বিস্তার করা৷ এই ক্ষেত্রে লক্ষ্যপূরণ হয়নি উমরের৷

