রেলওয়ে সুরক্ষা কনস্টেবল রিনার কথা মনে আছে? কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর দুর্ঘটনার সময় ভাইরাল হয়েছিলেন রিনা। তিনি বোধহয় সেদিন নিজেও ভাবেননি যে একদিন গোটা দেশ তাঁকে নিয়ে চর্চা করবে। তিনি হবেন মাতৃত্বের উদাহরণ। কী করেছিলেন রিনা। তাঁর এক বছর বয়সের একটি শিশুসন্তান রয়েছে। কাজে আসার সময় যাকে রেখে আসার কোনও জায়গা বা আত্মীয় পরিজন ছিল না কিন্তু ডিউটি তো করতেই হবে ফলে যে দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল ১৮ জনের, সেখানেই সেই দুর্ঘটনার ঠিক পরের দিন সন্তানকে বুকের সঙ্গে বেঁধে লাঠি হাতে নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব পালন করতে চলে এসছিলেন রিনা। রিনার কাছে সন্তানের প্রতি এই কর্তব্য বা দায়িত্ব আম বিষয় কারণ তিনি একজন ভারতীয় মা। মাতৃত্ব, সন্তান পালনকে এদেশের বেশিরভাগ মা-ই নিজের জীবনের চেয়ে বড় করে দেখেন। কিন্তু যখন রিনার সেই ছবিটা যখন ভাইরাল হয়, বেশির ভাগ মানুষ ছবিটা দেখে, তার নেপথ্যের কাহিনি পড়ে অবাক এবং উচ্ছ্বসিত হন। রাতারাতি রিনা হয়ে ওঠেন ‘সুপার মম’ এক আদর্শ মা। যিনি একটি পুরুষশাসিত পেশায় থেকে একা হাতেই নিজের সন্তানকে সামলান। বাচ্চাটিকে বুকের সঙ্গে বেঁধে ডিউটিতে নিয়ে চলে আসতেও দ্বিধা করেন না। মা তো এমনটাই হওয়া উচিত ভেবে গোটা দেশ তখন গর্বিত।
আরও পড়ুন-বিজেপি নেতার স্ত্রী-কন্যাকে বাঁচালেন মুসলিম যুবক
দু’-তিন মাস আগে আরও একটা খবর খুব ভাইরাল হয়েছিল। এক নারী প্রতিদিন ৩৫০ কিলোমিটার পাড়ি দেন শুধু তাঁর সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। তিনি কাজ করেন কুয়ালালামপুরে, বাড়ি পেনং-এ। যেহেতু তিনি চান তাঁর সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে, তাই প্রতিদিন প্লেনে যাতায়াত করেন। সেই নারী ভারতীয় নাম রাচেল কৌর। এখানেও একই প্রতিক্রিয়া। এও আবার হয় নাকি! প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পথ অফিস যাতায়াত শুধুমাত্র সন্তানের জন্য, তাদেরকে সময় দিতে! তাও আবার প্লেনে করে! ঘটনাটা রাচেলের গায়ে রাতারাতি ‘সুপার মম’-এর তকমা এঁটে দেয়। নিউজ চ্যানেল, সমাজমাধ্যম, খবরের কাগজ— সর্বত্র রাচেল চর্চা। এই বিষয়টা নিয়ে তখন রাচেল জানিয়েছিলেন যে আগে তিনি অফিসের সামনেই বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন ফলে সপ্তাহান্তে বাড়ি যেতেন। কিন্তু বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার সময় এটা। ফলে তাঁর মনে হয়েছে সন্তানকে এখন মা হিসেবে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া খুব জরুরি, ওদের পাশে থাকা দরকার। বিমানে আসা-যাওয়ার ফলে তিনি বাড়ি ফিরে বাচ্চাদের সঙ্গে থাকতে পারবেন। সেই বিমান যাতায়াতে তাঁর রোজ খরচ হয় ২৭ হাজার টাকা। চোখ কপালে ওঠাই কি স্বাভাবিক নয়? কিন্তু সেই প্রশ্নে কেউ বিশেষ আগ্রহী নন। রাচেলকে নিয়েই সবার আগ্রহ। রাচেল এখন অসাধারণ, ভারতীয় মা। যে মার কাছে সন্তানের জন্য কোনও বাধাই বাধা নয়। দেশ, দুনিয়ার সবাই তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।
রিনা এবং রাচেল ভাইরাল হয়েছেন তাঁরা পেয়েছেন ‘সুপার মম’, আদর্শ মা, মাতৃত্বের প্রতিমূর্তি এমন নানান মর্যাদাপূর্ণ নাম। এর কারণ হল ভারতবর্ষের অন্তরে যুগে যুগে লালিত মানসিকতা, যে শিশুর লালন-পালন, ভাল-মন্দ, যত্ন-আত্তির সিকিভাগ দায়িত্বই তার জন্মদাত্রী মায়ের। সন্তান মানুষ হলে যেমন মায়ের গর্ব, মানুষ করতে না পারলে মায়েরই ত্রুটি। তাই শিশুর জন্মের পর ‘সন্তানমুখী জীবন’ এটাই আমাদের গোটা ভারতবর্ষের অধিকাংশ বিবাহিত মেয়ের প্রতিচ্ছবি। তাঁরা শুধু মা আর কোনও পরিচয় তাঁদের প্রয়োজন নেই এতে তাঁরা নিজেরা যেমন গর্বিত এবং দেশও এমন মায়েদের নিয়েই গর্বিত।
কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও এর পিছনের আসল সত্যটা হল নামজাদা চিকিৎসক, নামী অধ্যাপক, পেশাদার থেকে শুরু বাড়ির ডোমেস্টিক হেল্পার, কারখানার কর্মী— এই দেশের এমন কোনও মেয়ে নেই যাঁরা সন্তানের জন্মের পর মা হওয়ার খেসারত দেননি। যাঁরা চাকরি আঁকড়ে থাকেন, তাঁদের ভিতরে চলে টানাপোড়েনের লড়াই আর যাঁরা সন্তানের মুখ চেয়ে সরে আসেন তাঁদের বেশিরভাগের সম্বল হতাশা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার রিপোর্ট বলছে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫০% মা রোজগেরে, ব্রাজ়িলে ৫৫% শতাংশ, চিনে ৬১%, আর ভারতে মাত্র ২১% শতাংশ। মাতৃত্বের বোঝা বয়ে যুগে যুগে ভারতীয় নারী পরিবারের কেয়ার গিভার এবং বেতনহীন শ্রমিক। সমীক্ষা বলছে ভারতীয় মেয়েরাই বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাঁদের সন্তানের জন্য সময় ব্যয় করেন। ভারতীয় পুরুষ বা বাবা তার শিশুর দেখভালে দিনে মাত্র পনেরো মিনিট সময় ব্যয় করে সেখানে একজন মহিলা তার শিশুর জন্য ব্যয় করেন ৭০ মিনিট। যা বিশ্বের নিরিখে গড়ে ৩৮ মিনিটের চেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট বেঙ্গালুরু (IIMB)-এর তীর্থতন্ময় দাস, ইউনিভার্সিটি অফ আলবানির করণ ভাসিন এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ভারতের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক সুরজিৎ এস ভাল্লার লেখা এই গবেষণাটি (SSRN) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে এও বলা হয়েছিল শিশুর যত্নের বোঝা মায়ের ওপর এতটাই বেশি যে ভারতীয় নারীদের অধিকাংশই পুরুষের মতো বাইরে সবেতন শ্রমে যুক্ত হতে পারেন না। অর্থাৎ সন্তান রয়েছে এমন নারীদের শ্রমের বাজারে অংশগ্রহণের হার লক্ষণীয় ভাবে কম।
আরও পড়ুন-তিন কন্যের গপ্প
এমন বহু মা রয়েছেন যাঁরা শ্রমিক, যাঁরা কারখানায় বা ইটভাটায় কাজ করেন, চা-বাগানে চা তুলতে যান তাঁদের মধ্যে অনেককেই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে দেখা যায়। কারণ তাঁদের শিশুটিকে রাখার কেউ নেই। বাড়ির পুরুষটি শিশুটিকে আদর করতে পারেন কিন্তু তাকে পিঠে বেঁধে বয়ে বেড়াবেন না! ফলে এই পরিযায়ী মায়েরা তাঁদের জীবনসংগ্রাম সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই করেন। আর যেসব মা এই সাহসটি দেখাতে পারেন না তাঁরা নিজের কেরিয়ার বিসর্জন দিয়ে বাড়িতে বসে শিশুকে বড় করতে করতেই জীবনটা কাটিয়ে দেন। তাঁরাই পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন আদর্শ মা। কিন্তু কেন ভারতবর্ষের সমাজ এমন একটা বিষয়কে সমর্থন দিয়ে আসছে? এই প্রসঙ্গে সমাজতাত্ত্বিক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘আসলে ভারতীয় সমাজ খুব ট্রাডিশনাল। এই সমাজ আজও পুরুষশাসিত। এই সমাজে ছেলেরা বাইরে কাজ করবে আর মেয়েরা ঘর সামলাবে, বাচ্চার লালনপালন করবে— এই ধ্যানধারণায় টিকে আছে। এটাই সমাজের বেসিক কালচারের মধ্যেই ঢুকে রয়েছে। অনেক মাকেই বলতে শোনা যায় আমি নিজের শখ-আহ্লাদ পূরণ করিনি, চাকরি করিনি ঠিকই কিন্তু ছেলেমেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করেছি। তার মানে সন্তানকে দেখাশুনো যত্ন, বড় করে তোলাই হল একটা মেয়ের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা একধরনের ডিফেন্স মেকানিজমও। সমাজ একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে যখন প্রশ্ন করে তুমি পড়াশুনো করে কী করলে, সমাজের প্রতি তোমার ভূমিকা কী? তখন তার উত্তরের সপক্ষে নিজের জন্য এই যুক্তি খাড়া করেন বহু মা-ই। বেশিরভাগ স্কুলে গেলেই দেখবেন অনেক মা সারাটা দিন গ্রুপ করে বসে থাকেন। সন্তান ধ্যান, সন্তান জ্ঞান— এরকম একটা হাবভাব তাঁদের। এঁরা একটা দল আর যাঁরা কর্মরতা মা তাঁরা এই দলের বাইরের একটা গ্রুপ। তাঁরা হয়তো বাচ্চার পিছনে এই সময়টা দিতে পারছেন না। ফলে কর্মরতা মায়েরা অনেক সময়ই হীনমন্যতায় ভোগেন। আমি একবার একটা সেমিনার অ্যাটেন্ড করেছিলাম সেখানে সমাজতত্ত্বের এক নামকরা অধ্যাপিকা হঠাৎ সেমিনার চলাকালীন মাঝে মাঝেই উঠে গিয়ে ফোনে খোঁজ নিচ্ছিলেন যে তাঁর মেয়ে বাড়ি ফিরেছে কি না, সে খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করেছে কি না। অথচ তাঁর স্বামীও সেই সেমিনারেই উপস্থিত তাঁর কিন্তু কোনও হেলদোল নেই। কাজেই এটাই প্রমাণ যে ওয়র্কপ্লেসে থেকেও কিন্তু একজন মা তাঁর পুরোটা দিতে পারেন না কারণ এটা সেই মায়েরও মনের মধ্যে গাথা যে সন্তানের লালন পালন যত্নের দায়িত্ব শুধুই তাঁর। সুতরাং সমাজ সামাজিকীকরণের মধ্যে দিয়ে এবং সমাজ পরিসরের মধ্যে দিয়েই তাঁকে বোঝাতে শেখায় যে সন্তান যদি মানুষই না হয় তাহলে তাঁর এমন চাকরির মানেটা কী! এই কথাটা কিন্তু কখনও সেই সন্তানের বাবাকে কেউ বলে না বা শেখায় না। সন্তানের যা কিছু খারাপ সব মায়ের দোষ এই কারণে সেই মা-ও গুটিয়ে থাকেন এবং ভাবতে শেখেন। ফলে মায়েরা কর্মক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। কর্মজগৎ ছেড়ে দেন। এই কারণে ভারতের মতো দেশে বাইরের কর্মক্ষেত্রে উল্লেখনীয় ভাবে মেয়েদের উপস্থিতি কমেছে।’’
আসলে রিনা বা রাচেলের মতো মায়েদের নামে যাঁরা জয়ধ্বনি দিচ্ছেন, তারাই ‘মা হওয়া মুখের কথা নয়’-এর মতো প্রবাদবাক্যের বেড়াজালে মেয়েদের আটকে রাখতে পছন্দ করেন। মেয়েদের পূর্ণ নাগরিক হিসাবে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করার জন্য যে মৌলিক জিনিসগুলি প্রয়োজন তার ব্যবস্থাপনা আমাদের সমাজে নেই। এর জন্য অনেক প্রচেষ্টা জরুরি সমাজেরও এবং একজন মায়েরও। পেরেন্টাল কনসালটেন্ট পায়েল ঘোষ অবশ্য একটু অন্যরকম ব্যাখ্যা দিলেন, তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেকটা দেশের একটা নিজস্বতা রয়েছে। আমাদের দেশেরও রয়েছে। এখানে আমরা দেখে আসছি বাড়ির মায়েরা বাড়িতে থাকেন। সন্তানের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব তাঁরই দায়িত্ব। ছেলেমেয়ের পছন্দ-অপছন্দগুলো হাতের তালুর মতো করে তাঁরা বোঝেন। এই যে পুরো কাজটা অর্থাৎ জন্ম থেকে আঠারো বছর অবধি একটা সন্তানকে বড় করতে গেলে একজন মায়ের ভূমিকা এটা কিন্তু অনস্বীকার্য কারণ সবকিছু কিন্তু বাবা, কাকা বা বাড়ির অন্য কোনও কেয়ার গিভারকে দিয়ে করানো সম্ভব নয়, একজন মাকেই সেখানে দরকার। এর সঙ্গে আমাদের দেশের আবহাওয়া, পরিবেশ, পরিস্থিতি সবটা মিলিয়ে দেখা গেছে এখানে মায়েদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন বাবা কিন্তু অনেক কিছু সামাল দিতে পারেন না যা মা পেরে যান। সেই চাহিদা থেকেই আজও ভারতের মতো সমাজে মায়েরা সন্তানের জন্য সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন। আগেকার দিনে একটা বিভাজন ছিল তখন বাইরের কাজটা পুরুষরাই করতেন আর ঘরটা মহিলারাই সামলাতেন। কিন্তু, যুগ বদলেছে এখন নারীও বাড়ির বাইরে পা রেখেছেন। ফলে মেয়েদের অর্থনৈতিক উন্নতি হল, তাঁরা সমাজের প্রতি তাঁদের ভূমিকা পালন করলেন, বাইরে দায়-দায়িত্ব বাড়ল ঠিকই কিন্তু ঘরের ভিতরের দায়িত্ব, সন্তানের দায়িত্বটা ভাগ হল না একই রকম রয়ে গেল। এর ফলে কী হল মহিলারা দুটো দিক বজায় রাখতে গিয়ে খানিক নাজেহাল হলেন। কেউ কেউ সেই বাধা বিপত্তি নিয়েই ঘর-বার সামলে গেলেন, কেউ কেউ সামলাতে না পেরে কর্মজীবন ছেড়ে দিলেন বেছে নিলেন ঘরটাকেই। সেই মায়েরা মনে করলেন অল্পেই চলে যাবে সংসার আগে ছেলেমেয়েদের সময় দিই। তাঁদের দিকটাই আগে দেখি।
কারণ বাচ্চাকে দেখভাল করতে কোনও একজন নিজের লোক থাকা খুব দরকার এই কনসেপ্ট থেকেই কিন্তু ‘হোমমেকার মম’ শব্দটা এসেছে। এটা ভারতীয় সমাজব্যবস্থারই একটা অঙ্গ। তাই বলে এটাই সব নয় বা এটাই শেষ কথা নয়। কারণ পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাচ্ছি সেই বাচ্চাটাই যখন মায়ের স্যাক্রিফাইসের ওপর দাঁড়িয়ে বড় হচ্ছে সেই মাকেই তার সবচেয়ে অযোগ্য বলে মনে হচ্ছে! জেনারেশন বদলাচ্ছে মন-মানসিকতা বদলাচ্ছে ফলে একটা সময় বাচ্চাটি তার মাকেই ‘ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো’ মনে করছেন আর যে-বাবা রোজগার করে আনছেন তাঁকেই গুরুত্ব দিয়ে ফেলছে। তখন একটা বয়সের পরে সেই মা সব কিছু হারিয়ে ফেলার কষ্টে মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে পড়ছেন। তাই আমার যেটা মনে হয় বাচ্চাকে সময় দেওয়াটা ভুল নয় কিন্তু মায়েদেরও উচিত সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে হারিয়ে না ফেলা। কারণ পেরেন্টিং আমাদের জীবনের একটা পার্ট। সেই দায়িত্বের পাশাপাশি মাকেও বুঝতে হবে তাঁর নিজেরও একটা জায়গা রয়েছে।
আরও পড়ুন-উত্তর দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নজর ঘোরাতে হাওয়া গরমের পুরনো খেলা, পাঁচ প্রশ্নের মিলল না উত্তর
আলোচনা পর্যালোচনা যেটাই হোক না কেন আশার আলো কিন্তু রয়েছে। সেই কারণেই এখন পেটারনিটি লিভ কথাটি এদেশেও খুব শোনা যাচ্ছে। পেটারনিটি লিভ বা পিতৃত্বকালীন ছুটি এখানে স্বীকৃত। এ-যুগের স্বামীরা স্ত্রীর গুরুজন নয়, পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছেন, বাচ্চার দায়িত্বও দু’জনে ভাগ করে নিচ্ছেন। মাতৃত্ব যতই মহান হোক না কেন মেয়েরা গৃহবন্দি শ্রমিক নয় এটা সমাজ বুঝতে শিখেছে। তবে এটাও নিশ্চিতকরণ জরুরি যে, শিশুর যত্নে বেশি সময় ব্যয় করার কারণে ভারতীয় মহিলারা কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নাকি উপযুক্ত কর্মসংস্থান খুঁজে না পাওয়ার কারণে তাঁরা শিশু-যত্নে সময় ব্যয় করছেন। কর্মজগতে সময়সীমার ক্ষেত্রে, সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে নমনীয়তার অভাবও কিন্তু মহিলাদের শ্রমশক্তিতে কম অংশগ্রহণের আরও একটা কারণ। এর সঙ্গে রয়েছে লিঙ্গবৈষম্য এবং বেতনবৈষম্য। কাজেই সর্বস্তরের মহিলাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিচার করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে হবে এবং মেয়েদের জন্য দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটাতে হবে।