বাংলায় মিলল কস্তুরী মৃগ! ৭০ বছর পর এই খবরে খুশি বন দফতর

Must read

প্রায় ৭০ বছর পর বাংলায় দেখা মিলল কস্তুরী মৃগের (musk deer)। নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়েছে কস্তুরী হরিণের ছবি। এতে দারুণ খুশি বন দফতরের আধিকারিকরা।

নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক প্রায় ১৬০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এটি কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্রান্সবাউন্ডারি ল্যান্ডস্কেপের অংশ। এখানে উষ্ণমণ্ডলীয়, উপ-ক্রান্তীয় এবং নাতিশীতোষ্ণ- তিন ধরনের বনভূমিই একসঙ্গে। এই পরিবেশই বিরল ও সংরক্ষণযোগ্য প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ।

নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে ২০২৩-’২৪ সালে সমীক্ষা চালায় ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। ওই সমীক্ষা চলাকালীন ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর ট্র্যাপ ক্যামেরায় মাস্ক ডিয়ার অর্থাৎ কস্তুরী মৃগের ছবি ধরা পড়ে। সমীক্ষা শেষের পর ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে কস্তুরী মৃগের উপস্থিতির প্রমাণ মেলে। ছবিতে তার লম্বা খরগোশের মতো কান, শিং না থাকা এবং ছোট উঁচু ক্যানাইন দাঁত, সবই পরিষ্কারভাবে বোঝায় যে এটিই মস্ক ডিয়ার।

আরও পড়ুন-হেলিকপ্টারে সমস্যা! পিছল মুখ্যমন্ত্রীর সভা-পদযাত্রার সময়সূচি

দেশে চার ধরনের কস্তুরী মৃগের (musk deer) দেখা মেলে। ব্ল্যাক মাস্ক ডিয়ার, হিমালয়ান মাস্ক ডিয়ার, অ্যালপাইন মাস্ক ডিয়ার ও কাশ্মীর মাস্ক ডিয়ার। যদিও এদের সংখ্যাটা এতটাই হাতেগোনা যে মাঝেমধ্যে তাদের দেখা মেলে অরুণাচলপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, সিকিম এবং উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলে। যদিও নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে যে কস্তুরী মৃগের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, সেটি কোন প্রজাতির তা এখনও জানা যায়নি।

কস্তুরী হল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সুগন্ধী। যার উৎস কস্তুরী মৃগের প্রজাতির পুরুষ হরিণ। এদের নাভিতে বিশেষ ধরনের গ্রন্থি থাকে। নির্দিষ্ট বয়সে কস্তুরী মৃগের ওই গ্রন্থি বিকশিত হয় এবং তা থেকে কস্তুরী উৎপন্ন হয়। কস্তুরীর ঘ্রাণ এতটাই শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী যে বলা হয়, কোনও ঘরে যদি সামান্য পরিমাণ কস্তুরী রেখে দেওয়া হয়, তাহলে তার সুগন্ধী বহু বছর পর্যন্ত থেকে যায়। এর সুগন্ধ এতটাই শক্তিশালী যে, তিন হাজার ভাগ গন্ধহীন পদার্থের সঙ্গে যদি একভাগ কস্তুরী মেশানো যায়, তাহলেও ওই পদার্থ সুবাসিত হয়ে ওঠে। পুরুষ কস্তুরী মৃগের বয়স ১০ বছর হলে পরিপক্ক হয় তার নাভির গ্রন্থি। তখনই শিকারিরা তাকে হত্যা করার করার জন্য ওত পারে। একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থির ওজন সাধারণত ৬০-৬৫ গ্রাম হয়ে থাকে। তবে সব কস্তুরী মৃগের নাভিতে সম পরিমাণ কস্তুরী উৎপন্ন হয় তেমনটা নয়। প্রাচীনকালে রাজা-বাদশাহরা কস্তুরী ব্যবহার করতেন। সোনার চেয়ে বহু গুণ মূল্যবান। শুধু সুগন্ধী হিসেবে নয়, ওষুধ শিল্পেও ব্যবহৃত হয় কস্তুরী।

নেওড়া ভ্যালি জঙ্গল হিমালয়ের পাদদেশের ওই জঙ্গল জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। প্রায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩৮ প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান মিলেছে ওই জঙ্গলে। যার মধ্যে রয়েছে বিপন্ন প্রায় প্রজাতির একাধিক প্রাণী। এর আগে নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে বসানো ট্র‍্যাপ ক্যামেরায় রেডপান্ডা, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো প্রাণীরও ছবি ধরা পড়েছে।

Latest article