দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের একটি হিল স্টেশন আউলি (Auli uttarakhand)। নামের মতো জায়গাটিও ছোট। তবে এখানকার মানুষের হৃদয় আকাশের মতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। প্রকৃতিদেবী এখানে রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮০০ মিটার, ৯১৮৬ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত আউলি। এখান থেকে উত্তরাখণ্ডের বেশকিছু শৃঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলো হল নীলকণ্ঠ, মানাপর্বত, নন্দাদেবী। ধবল শিখরের সৌন্দর্যে বুঁদ হয়ে থাকতে হয়। এখানকার বরফ-মোড়া পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের হাতছানি। পর্যটকেরা উৎসাহের সঙ্গে অংশ নেন। মেতে ওঠেন সকালে-বিকালে। অলস পায়ে পাহাড়ি পথের আঁকেবাঁকে মৃদু পদক্ষেপে হেঁটে বেড়ানো যায়। তবে একা একা না যাওয়াই ভাল। সঙ্গে কাউকে নিতে হবে। অচেনা অজানা পাহাড়ি পথ, যে কোনও সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে। ভোরে সূর্যোদয় এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখার জন্য আদর্শ জায়গা আউলি। এখানে আছে হনুমানের মন্দির। অনেকেই ঘুরে দেখেন। চেয়ার লিফট পয়েন্টের সামনের গেট দিয়ে গেলে কম সিঁড়ি ভাঙতে হয়।
আউলি (Auli uttarakhand) ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার কেবল কার। রোপওয়ে চেপে আউলি ভ্রমণ যেন একটা ম্যাজিক। ৫ নম্বর টাওয়ারের পর থেকে হিমালয় উন্মুক্ত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে টাওয়ার নম্বর যত বাড়তে থাকে, ততই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নন্দাদেবী, দ্রোণাগিরি, ত্রিশূল, নন্দাকোট, পঞ্চচুল্লি। একের পর এক শৃঙ্গ উন্মুক্ত হতে দেখে আছন্ন হয়ে পড়তে হয় পর্যটকদের। মনে হয় এ যেন স্বপ্নের থেকেও বেশি সুন্দর।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, আউলির রোপওয়ে হচ্ছে এশিয়ার দীর্ঘতম এবং উচ্চতম। ৩.৭৫ কিলোমিটার। গোটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় উচ্চতম। ১০টি টাওয়ার। আউলিতে থাকার জন্য ৮ নম্বর টাওয়ারে নেমে যেতে হয়। আরও দুটো টাওয়ার পেরোলে আউলির বিখ্যাত ‘গরসন বুগিয়াল’।
আউলি (Auli uttarakhand) রোপওয়ে যাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল লাগেজ ম্যানেজমেন্ট। বেশি মালপত্র নিয়ে কেবল কারে যাতায়াত করা বেশ অসুবিধাজনক। সঙ্গে গাড়ি থাকলে বেশিরভাগ মালপত্র গাড়িতে রেখে যথাসম্ভব কম লাগেজ নিয়ে যাওয়া উচিত। গাড়ি না থাকলে যোশীমঠের হোটেলের ক্লকরুমেও মালপত্র রেখে যাওয়া যায়। সব মালপত্র না নিয়ে যাওয়াই ভাল।
আউলি গেলে বহু পর্যটক রোপওয়ে চেপে, একটু ঘোরাঘুরি করে ফিরে আসেন। থাকেন না। তাঁদের বলি— একটা রাত আউলিতে থাকুন। থাকলে মুগ্ধতা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। রাতের আউলি আরও মায়াবী। রহস্যময়ী। বরফ না পেলেও থাকা যায়। শুধুমাত্র আউলির অন্য রূপ দেখার জন্য। বদ্রীনাথ যাওয়ার পথে অথবা হেমকুণ্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস যাওয়ার পথে ফুলের রাজ্য আউলি দেখে নেওয়া যায়। কেবল কারে চেপে আকাশপথে আউলি ভ্রমণ চিরকাল মনে থেকে যাবে। মনে হবে মেঘের মধ্যে দিয়ে ভেসে চলেছেন। শীতকালীন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস এবং বরফের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার জন্যে এখানে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ভ্রমণের সেরা সময় ধরা হয়। আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। এই তো আদর্শ সময়। সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন ‘উত্তরাখণ্ডের সুইজারল্যান্ড’ আউলি থেকে। এই ভ্রমণ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে।
আরও পড়ুন- শুধু আর্থিক বরাদ্দের খতিয়ান নয় মানবসম্পদের সমৃদ্ধিকরণের পথচিত্র
কীভাবে যাবেন?
কাছাকাছি বিমানবন্দর হল দেরাদুন। আউলি থেকে ২৯৮ কিলোমিটার দূরে। কাছাকছি রেলস্টেশন ঋষিকেশ। ২৩৫ কিলোমিটার দূরে। যোশীমঠ থেকে নির্দিষ্ট সময় পরপর লোকাল বাস ছাড়ে আউলির জন্য। কেউ চাইলে তাতেও আসা-যাওয়া করতে পারেন। এছাড়া ট্যাক্সি রিজার্ভ করেও যেতে পারেন। যোশীমঠ থেকে রোপওয়ে চেপে আউলি যাওয়া যায়। রোপওয়ে চেপে যেতে সময় লাগবে ২৫ মিনিটের মতো। সকাল ৮টা থেকে সন্ধে ৬-৩০ পর্যন্ত এই সার্ভিস চালু থাকে। প্রতি ২৫ মিনিট অন্তর এই কেবল কারগুলো ছেড়ে যায়। ৫ বছরের নিচের বাচ্চাদের ভাড়া লাগে না। এখানে একটা কেবিনে ২০-২৫ জন যেতে পারেন। একজন চালকও থাকেন। ভেতরে বসার কোনও ব্যবস্থা নেই। হাঁটু থেকে ছাদ অবধি পুরোটাই স্বচ্ছ কাচের। তাই বাইরের দৃশ্য দেখতে কোনও বাধা নেই।
কোথায় থাকবেন?
আউলিতে আছে হোটেল, লজ। থাকা যায়। যোশীমঠে থাকতে চাইলে রোপওয়ে পয়েন্টের কাছে তিন-চারটে হোটেল আছে। সাধারণ মানের। তবে পরিষ্কার ঘর। লাগোয়া বাথরুম, গিজার ইত্যাদি আছে। ভাড়া পড়বে ঘরপ্রতি মোটামুটি ১১০০ টাকা। রোপওয়ে পয়েন্ট এখান থেকে এক মিনিটের হাঁটাপথ। হোটেলগুলোর কোনওটাতেই খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সামনেই রাস্তার দু’পাশে দুটো দোকানের একটায় আমিষ, অন্যটাতে নিরামিষ পাওয়া যায়। খাবার খুব টেস্টি। এ-ছাড়াও কয়েকটি রিসর্ট ও লজ আছে। এর মধ্যে ক্লিফটপ রিসর্টটি বেশ ভাল। তবে ব্যয়বহুল। লজের মধ্যে দেবীদর্শন লজটি ভাল, ভাড়াও আহামরি বেশি নয়। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল।