উত্তরাখণ্ড পর্যটকদের অত্যন্ত পছন্দের গন্তব্য। আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। এই রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলির মধ্যে অন্যতম চম্পাওয়াত। একটা সময় নাম ছিল চম্পাবতী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬৭০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। হিমালয়ে ট্রেকিংয়ের মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চাইলে ঘুরে আসা যায়। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর চারপাশে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান এবং প্রাচীন মন্দির। সবুজে ঢাকা উপত্যকা এবং হিমালয় পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত নদীপ্রবাহ দেখে দু-চোখ জুড়িয়ে যায়।
কুমায়ুন অঞ্চলের মিনি হিল স্টেশন চম্পাওয়াত (Champawat) একটা সময় ছিল চাঁদ রাজবংশের রাজধানী। ফলে চম্পাওয়াত ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। ছড়িয়ে রয়েছে টুকরো টুকরো নিদর্শন। বেশকিছু মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চাঁদ শাসকদের সময়কালে। ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনি এবং কিংবদন্তি অনুসারে, ভগবান বিষ্ণু এখানে ‘কূর্মাবতার’ নামে পরিচিত একটি কচ্ছপের রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। মন্দিরগুলির স্থাপত্যশৈলী রীতিমতো দেখার মতো। স্পষ্ট বোঝা যায়, সেই সময়ের শিল্পীদের দক্ষতা ছিল এককথায় অসাধারণ। মন্দিরগুলো কুমায়ুন স্থাপত্যের অন্যতম সেরা উদাহরণ। চম্পাবতের বেশিরভাগ মানুষ আজও তাঁদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ তাঁরা এখনও নিজেদের আচার-অনুষ্ঠান খুঁটিয়ে অনুসরণ করেন, যা তাঁরা বহু বছর আগেও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতেন। চম্পাওয়াত সবুজ অরণ্যানী এবং পাহাড় দিয়ে ঘেরা। চমৎকার পরিবেশ। সকালের দিকে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো যায়। তবে একা নয়, যেতে হবে দলবেঁধে। কারণ এই অঞ্চলে দেখা যায় বন্যপ্রাণীদের আনাগোনা। যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে বিপদ।
চম্পাওয়াত (Champawat) এবং আশেপাশের অঞ্চলে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। হাতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বলেশ্বর মন্দির পরিদর্শন করা যায়। এই প্রাচীন মন্দিরটি ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত এবং এটি ভারতের ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়।
পূর্ণগিরি মন্দিরটি ঘুরে দেখতে পারেন। এই মন্দিরটি দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে নিবেদিত। ১০৮টি সিদ্ধপীঠের মধ্যে অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। সারাবছর দেবী দর্শনের জন্য এখানে দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। চৈত্র নবরাত্রি তিথিতে সাড়ম্বরে এই দেবীর আরাধনা করা হয়। সমাগম হয় বহু ভক্তের। এখান থেকে আশেপাশের পাহাড়ের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
পূর্ণগিরি মন্দিরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কালী নদী। এই নদীর সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। তাকিয়ে কিছুক্ষণ কাটিয়ে দেওয়া যায়। পাহাড় দিয়ে ঘেরা চঞ্চলা নদীর বহমানতার রূপ না দেখলে বেড়ানো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
আরও পড়ুন- ‘ভালোবাসো…অন্তর হতে বিদ্বেষ-বিষ নাশো’
কুমায়ুন হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত টনকপুর শহরটি পূর্ণগিরি মন্দিরের জন্যই প্রসিদ্ধ। পাহাড়ে মোড়া এই শহরকে কেন্দ্র করে রয়েছে সারদা নদী। নদীটি সুন্দর। টনকপুর ড্যামটিও দেখার মতো। কাছেই রয়েছে সিদ্ধবাবা মন্দির। ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত এই মন্দিরে ভগবান শিব বিরাজিত। দর্শনার্থীরা দেবী পূর্ণাগিরিকে দর্শন করার পর সিদ্ধবাবা মন্দির দর্শন করেই এই যাত্রাটি শেষ করেন। ঘুরে দেখা যায় ক্রান্তেশ্বর মন্দির। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী। দেবীধুরা মন্দির চম্পাবতের কাছেই অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির যা দেবী বারাহীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত। এখানে বহু মানুষের সমাগম ঘটে।
কোনওভাবেই লোহাঘাট দুর্গ পরিদর্শন করতে ভুলবেন না। এই ঐতিহাসিক দুর্গটি ১৭ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং চম্পাওয়াতের কাছেই অবস্থিত। এই অঞ্চলের ইতিহাস এবং স্থাপত্য অন্বেষণের জন্য এটা একটি চমৎকার জায়গা।
এখানে একটি আশ্রমও আছে। নিরিবিলি প্রশান্ত স্থান, যা সবুজ বনে ঘেরা। ফোটে নানা রঙের ফুল। এখানে বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন। চম্পাওয়াত (Champawat) বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অবশ্যই ঘুরে দেখবেন। এই অভয়ারণ্যে বাঘ, চিতাবাঘ এবং হাতি-সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর আবাসস্থল। প্রকৃতিপ্রেমী এবং বন্যপ্রাণীপ্রেমীদের জন্য এটি একটি মন ভাল করার মতো জায়গা। পঞ্চেশ্বর চম্পাওয়াত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে মাছ ধরার সুবন্দোবস্ত আছে। চম্পাওয়াত চা-বাগানও ঘুরে দেখা যায়। সবমিলিয়ে চম্পাওয়াত ভ্রমণ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে। বসন্তদিনে সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন।