ঘুরে আসুন চিকমাগালুর

কর্নাটকের চিকমাগালুর। ছবির মতো সুন্দর এক জনপদ। আছে পাহাড়, নদী, জলপ্রপাত, কফি বাগান, ঐতিহাসিক মন্দির। বৃষ্টিতে এখানকার সবুজ গাছপালা ঝলমলিয়ে ওঠে। অবসর যাপনের আদর্শ জায়গা। সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

বর্ষায় বেড়ানোর কথা ভাবছেন? পশ্চিমঘাটের রূপ সৌন্দর্য উপভোগে বেছে নিতে পারেন কর্নাটকের পাহাড়ি শহর চিকমাগালুর (Chikkamagaluru)। ছবির মতো সুন্দর এক জনপদ। এখানেই রয়েছে মুল্লায়নগিরি শৃঙ্গ। পায়ে হেঁটে ওঠা যায়। পাহাড়ের মাথা থেকে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দৃশ্যগোচর হয়। সবুজ ঢেউ খেলানো পাহাড় ঘিরে রেখেছে জনপদটি। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সপ্তাহান্তে বেড়ানোর জন্য প্রচুর পর্যটক আসেন।
পাহাড় এবং জঙ্গলে ট্রেকিং করা যায়। চিকমাগালুরের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা সেরা ট্রেকিং স্পটগুলি হল দেবরামনে, এট্টিনা ভুজা, বল্লারায়ানদুর্গ, মুল্লায়ানগিরি, কেম্মানাগুন্ডি ইত্যাদি। ট্রেকিং ছাড়াও ভ্রমণকারীরা পাহাড়ের চূড়ায় ঘুরে আকাশ ছুঁতে পারেন। এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে। দক্ষিণ চিকমাগালুরের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে পাণ্ডাবর গুড্ডা, দেবরামণে, কেলাগুর টি এস্টেট, কুদ্রেমুখা, মুল্লায়নাগিরি। ফটোগ্রাফির আদর্শ জায়গা। দেবরামনে, মুদিগেরে, চিকমাগালুরে নীলকুরিঞ্জি ফুল প্রভৃতি জায়গায় পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে মূল্যবান মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করা যায়।
এই অঞ্চলে উড়ে বেড়ায় নানারকমের পাখি। ঘুম ভাঙে কিচিরমিচির শব্দে। সাধারণত সকালের দিকে অবশ্যই এখানে গ্রে জঙ্গল ফাউলের শব্দ শুনতে পাবেন। স্থানীয় মানুষের সাহায্যে চারপাশের পাখিদের চিনে নেওয়া যায়।

চিকমাগালুরে (Chikkamagaluru) আছে কয়েকটি জলপ্রপাত। যেমন বান্দাজে আরবি জলপ্রপাত, ঘটিকাল্লু জলপ্রপাত, হনুমান গুন্ডি জলপ্রপাত, কালাহাট্টি জলপ্রপাত, উক্কাদা বা জাগরা জলপ্রপাত, হেব্বে জলপ্রপাত, মাণিক্যধারা জলপ্রপাত। আছে কিছু নদীও। আশেপাশের বিখ্যাত নদীগুলি হল হেমাবতী নদী, তুঙ্গা এবং ভদ্রা নদী। বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠে। জঙ্গলের মধ্যে জিপ ড্রাইভে যাওয়া যায়। যেতে যেতে দেখা মিলতে পারে বন্যপশুর। তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
ঘুরে আসা যায় কফি বাগান। কফি এস্টেটে হাঁটার সময় জেনে নেওয়া যায় কীভাবে কফি উৎপাদন হয়। সঙ্গে গাইড থাকলে তিনিই কফি এবং অন্যান্য ফসলের বিভিন্ন প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দেবেন। কফি এস্টেটে ফল সংগ্রহ করা যায়।

অনেকেই ঘুরে দেখেন স্থানীয় প্রাচীন মন্দিরগুলো। একটা সময় এখানে ছিল হোয়সল বংশের শাসন। শাসকরা মূলত মালনাড় অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। হোয়সল যুগ ছিল শিল্প, স্থাপত্য এবং ধর্মের বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ যুগ। ঘুরে আসা যায় অমৃতপুরা। তারিকের থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে এই ছোট্ট শহরে অমৃতেশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি ৮০০ বছরের পুরনো মন্দির রয়েছে। বিখ্যাত এই মন্দির শিল্প ও স্থাপত্যের একটি উদাহরণ। চিকমাগালুরের আশেপাশেও আছে বেশকিছু মন্দির। গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মন্দিরগুলির মধ্যে কয়েকটি হল বেত্তাদা ব্যরাবেশ্বর প্রসন্ন মন্দির, নান্যদা ব্যরাবেশ্বর মন্দির, দেবীরাম মন্দির।
চিকমাগালুরের কাছাকাছি দেখার মতো আরও কিছু জায়গা আছে। সেগুলো হল ভদ্রা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ৩৮ কিলোমিটার দূরে। উত্তর-পশ্চিমে, এই অভয়ারণ্যটি বন্যপ্রাণীপ্রেমীদের জন্য অবশ্যই একটি আকর্ষণীয় স্থান। এখানে গৌড়, চিতল, সাম্বার, হাতি এবং বাঘ দেখা যায়।

আরও পড়ুন- অনসর পর্ব কাটিয়ে ১৫ দিন পর দেখা দিলেন প্রভু জগন্নাথ, উপচে পড়ছে ভিড়

কেম্মাংগুন্ডি চিকমাগালুরের (Chikkamagaluru) উত্তরে এক মনোরম পাহাড়ি স্টেশন, যা বাবাবুদান পর্বতমালায় ১৪৩২ মিটার উচ্চতায়, ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কেম্মাংগুন্ডি থেকে হেব্বে জলপ্রপাত দেখা যায়। কেম্মাংগুন্ডি থেকে কালাহাট্টি জলপ্রপাত ১০ কিলোমিটার দূরে। এখানে একটি স্থানীয় মন্দিরও রয়েছে।
চিকমাগালুরের দক্ষিণ-পশ্চিমে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮৯৪ মিটার উপরে অবস্থিত কুদ্রেমুখের। এক নির্জন পাহাড়ি এলাকা। কুদ্রেমুখ পাহাড় থেকে আরব সাগর দেখা যায়। এখানে প্রচুর উদ্ভিদ এবং প্রাণী রয়েছে। ক্যাম্প করার জন্য সুন্দর জায়গা।

ঘুরে নেওয়া যায় ঝারি ঝর্না। জঙ্গলের মধ্যে ঝর্না থেকে নেমে আসা জল জমে ছোট জলাশয় তৈরি হয়েছে। তবে সেখানে যেতে হলে হাঁটাপথই ভরসা। গাড়ি যেখানে নামাবে সেখান থেকে ২ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। বাবা বুদানগিরি চিকমাগালুরের আর একটি দ্রষ্টব্য স্থান। পাহাড়ের মাথাটি চ্যাটালো। জায়গাটি সবুজ ঘাসের গালিচায় ঢাকা। এই স্থানটিও বেশ মনোরম। তবে পাহাড়ে ওঠার জন্য অনেক সিঁড়ি চড়তে হয়। শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে হিরেকোলালে হ্রদ। এ ছাড়া দেখে নেওয়া যায় কৃষ্ণা রাজেন্দ্র বটানিক্যাল গার্ডেন। পশ্চিমঘাট পাহাড়ের কোলে সুন্দর করে সাজানো বাগান। মেঘ, কুয়াশার খেলায় এই জায়গা হয়ে ওঠে আরও মনোরম। আছে শান্তি ঝর্না। কাছেই রয়েছে রত্নগিরি পাহাড়। বৃষ্টিতে এখানকার সবুজ গাছপালা ঝলমলিয়ে ওঠে। পায়ে পায়ে চারধার ঘুরতে খুব ভাল লাগে। অবসর যাপনের দারুণ জায়গা।
শৃঙ্গেরি একটি তীর্থস্থান। বিদ্যাশঙ্কর মন্দিরের জন্য পরিচিত। এর ১২টি রাশিচক্র স্তম্ভ রয়েছে, যার প্রতিটিতে বছরের সময় অনুসারে সূর্যের আলো পড়ে। সবমিলিয়ে চিকমাগালুর ভ্রমণ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে। বর্ষার মরশুমে সপরিবার ঘুরে আসুন।

কীভাবে যাবেন?
আগে বেঙ্গালুরু যেতে হবে। বেঙ্গালুরু থেকে চিকমাগালুর প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জাতীয় সড়ক ধরে গাড়িতে যেতে হয়। ৫ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

কোথায় থাকবেন?
চিকমাগালুরে আছে বেশকিছু হোমস্টে। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। অন্তত এক সপ্তাহ আগে হোমস্টে বুক করে নিলেই ভাল। কাছেপিঠে ঘোরার আগে হোমস্টের মালিকের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। ওঁরা বাড়িয়ে দেবেন সহযোগিতার হাত।

Latest article