ধর্মশালা ডালহৌসির হাতছানি

হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত ধর্মশালা এবং ডালহৌসি। হিমাচল প্রদেশের দুটি পাহাড়ি শহর। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। রয়েছে পর্যটকেদের পছন্দের তালিকায়। একটি জায়গায় গেলে আরেকটি জায়গায় ঘুরে আসা যায়। শীতের মরশুমে বেড়িয়ে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

হিমাচল প্রদেশে (Himachal Pradesh_Dalhousie) রয়েছে বেশকিছু সুন্দর বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম কাঙ্গরা জেলার ধর্মশালা। আক্ষরিক অর্থেই একটি আধ্যাত্মিক জায়গা। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। ১৮১৫ থেকে ১৮৪৭ সালের মধ্যে ব্রিটিশদের প্রতিষ্ঠিত ৮০টি পাহাড়ি স্টেশনের মধ্যে একটি। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শহরটির উচ্চতা প্রায় ১,২৫০ মিটার, ম্যাকলিওডগঞ্জে ১,৭৬৮ মিটার। হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে পাহাড়ের ধারে রয়েছে বেশকিছু মঠ।

উচ্চ ধর্মশালা বা ম্যাকলিওডগঞ্জ হল দালাই লামার সদর দফতর, যিনি ১৯৫৯ সালের অক্টোবরে তিব্বতে চিনা আক্রমণের পর এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ম্যাকলিওডগঞ্জের নামকরণ করা হয়েছে পাঞ্জাবের ব্রিটিশ লেফটেন্যান্ট-গভর্নর স্যার ডোনাল্ড ম্যাকলিওডের নামে। এই অঞ্চলটিকে একটি সম্ভাব্য গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল, কিন্তু ১৯০৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে শহরের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর সেটা আর সম্ভব হয়নি।

এখানে রয়েছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে অন্যতম তুগলাগখাং কমপ্লেক্স। তিব্বতের বাইরে বৃহত্তম তিব্বতি মন্দির। তীর্থযাত্রী, সন্ন্যাসী এবং পর্যটকদের প্রধান জায়গা। দালাই লামার বাসস্থান। নামগিয়াল মঠ এবং উজ্জ্বল তিব্বত জাদুঘরও রয়েছে। এখানে সর্বত্র দেখা যায় তিব্বতি সংস্কৃতি। কারণ, হাজার হাজার তিব্বতি-শরণার্থী এবং তীর্থযাত্রী ম্যাকলিওডগঞ্জকে তাদের আবাসস্থল করে তুলেছে। সন্ন্যাসীরা গাঢ় লাল পোশাক পরে থাকেন। রাস্তার দুই ধারের দোকানগুলোয় তিব্বতি শিল্পকর্মের সমারোহ দেখা যায়। মঠগুলো সাজানো থাকে উড়ন্ত প্রার্থনা পতাকা দিয়ে। ম্যাকলিওডগঞ্জ থেকে দৃশ্যমান সর্বোচ্চ পর্বত হল হনুমান টিব্বা। উচ্চতা ৫,৬৩৯ মিটার। ট্রেকিংয়ের জন্য উপযুক্ত স্থান। এই অঞ্চলের কালচক্র মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির।
নরবুলিংকা ইনস্টিটিউট অফ তিব্বতিয়ান কালচার সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। দর্শনার্থীরা সযত্নে সংরক্ষিত তিব্বতি সংস্কৃতি এবং কাঠের খোদাই, থাংকা চিত্রকর্ম, ধাতু এবং সূচিকর্ম-সহ হস্তশিল্প সম্পর্কে জানতে পারেন।
ধর্মশালায় রয়েছে ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ধৌলাধার পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত। আয়োজিত হয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

ধর্মশালার ভাগসু জলপ্রপাত একটি মনোরম জলপ্রপাত যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। ত্রিউন্ড ট্রেক ধৌলাধার পর্বতমালার কোলে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় হাইকিং ট্রেইল। ধর্মশালা উপত্যকায় অবস্থিতি কাংড়া উপত্যকা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মতো।
ধর্মশালায় আছে হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা। তিব্বতি সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। তিব্বতি নির্বাসিত সরকারের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।

কাছেই রয়েছে ডালহৌসি (Himachal Pradesh_Dalhousie)। হিমাচল প্রদেশের চাম্বা জেলায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১,৯৭০ মিটার। পাঁচটি পাহাড়ের উপর বিস্তৃত একটি পাহাড়ি স্টেশন। এখানে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান।
বহু মানুষ ঘুরে দেখেন কালাটপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ৩০.৬৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ঘন দেবদারু গাছ দ্বারা আচ্ছাদিত। বহু পশুপাখির আবাসস্থল। অভয়ারণ্যের ভেতরে অসংখ্য ট্রেকিং ট্রেল রয়েছে, যা ঘন বনের মধ্য দিয়ে গেছে। এছাড়া, জঙ্গল সাফারিও করা যেতে পারে।
সাতধারা জলপ্রপাত এখানকার আরেকটি দর্শনীয় স্থান। এটা প্রায় ২,০৩০ মিটার উচ্চতায় সাতটি ঝর্নার সংমিশ্রণে তৈরি। তাই এইরকম নামকরণ। জলপ্রপাতগুলো নিরাময় ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত।
চামেরা হ্রদ পর্যটকদের পছন্দের জায়গা। এটা একটা কৃত্রিম হ্রদ যা চামেরা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সময় নির্মিত। হ্রদে নৌকা বাইচের সুবিধা রয়েছে। জলক্রীড়ার জন্যও একটি জনপ্রিয় স্থান। এই জলাশয়ে নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে।

আরও পড়ুন-চিল-শকুন উড়ুক আকাশে মাটিতে নেত্রী আছেন পাশে

যাঁরা অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসেন, তাঁদের জন্য খাজ্জিয়ারে প্যারাগ্লাইডিং উপভোগ্য জায়গা। সবুজ তৃণভূমি, ঘন বন এবং ধৌলাধর রেঞ্জের মনোরম দৃশ্য প্যারাগ্লাইডিংয়ের জন্য জায়গাটাকে আদর্শ করে তুলেছে।
দারুণ জায়গা সাচ পাস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৪২০ মিটার উঁচুতে পির পাঞ্জাল পর্বতমালায় অবস্থিত যা ডালহৌসিকে চাম্বা এবং পাঙ্গি উপত্যকার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
এখানে নদী পারাপার এবং নদী রাফটিংয়ের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। তার জন্য রয়েছে রাভি এবং সাল নদী। ভয়ের কিছু নেই। প্রশিক্ষিত কর্মীদের সজাগ দৃষ্টিতে সবকিছু পরিচালিত হয়। পুরো প্রক্রিয়া জুড়েই দেওয়া হয় উপযুক্ত নিরাপত্তা।

ডালহৌসির (Himachal Pradesh_Dalhousie) রক গার্ডেন একটি সুন্দর বাগান। একই সঙ্গে একটি সুন্দর পিকনিক স্পট। সবুজে ঘেরা বাগান থেকে পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
দশম শতাব্দীতে, রাভি নদীর তীরে নির্মিত হয়েছিল চাম্বা। এটা প্রাচীন চাম্বা রাজ্যের রাজধানী ছিল। শহরটি লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির কমপ্লেক্স এবং ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি চিত্রকর্মের জন্য বিখ্যাত।
ডালহৌসির কাছে অবস্থিত চামুণ্ডা দেবীর মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। বহু মানুষের সমাগম হয়। সবমিলিয়ে ধর্মশালা ও ডালহৌসি ভ্রমণ মনকে নিয়ে যাবে অন্য জগতে, যেখানে রয়েছে অফুরান আনন্দ। হাতছানি দেয় দুটি পাহাড়ি শহর? শীতের মরশুমে ঘুরে আসুন।

Latest article