ঘুরে আসুন দিউ

ভারতের দশম সর্বনিম্ন জনবহুল জেলা দিউ। সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জায়গা। পরিচ্ছন্ন, কোলাহলহীন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। শীতের মরশুমে ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

সমুদ্রের বুকে ছোট্ট দ্বীপ দিউ (Diu Island)। এর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত দিউ শহর। এটা একটা জেলা শহর। দিউ জেলা ভারতের দশম সর্বনিম্ন জনবহুল জেলা। পরিচ্ছন্ন, কোলাহলহীন। একটি ঐতিহাসিক জায়গা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির নামের তালিকায় দমন এবং দিউয়ের উল্লেখ আছে। দমন এবং দিউ দুই নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হলেও, দুই জায়গার দূরত্ব প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার। তাই ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে একেক বারে একটি বেছে নেওয়া ভাল। দিউ শীত-ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত গন্তব্য।
ইতিহাস বলছে, দিউ আগে গুজরাতের সুলতানদের অধীনে ছিল। পরবর্তী সময়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুলতান বাহাদুর শাহ পর্তুগিজদের সামরিক সাহায্য চান। পর্তুগিজেরা সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে দিউতে একটি দুর্গ নির্মাণের অনুমতি পান। সেই দুর্গই বর্তমানে এখানকার অন্যতম প্রধান দ্রুষ্টব্য।

জানা যায়, দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু হয় অক্টোবরে এবং শেষ হয় মার্চে। পর্তুগিজরা তাঁদের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেন। দিউ দ্বীপের (Diu Island) উপকূলে অবস্থিত এই দুর্গটি একটি বিশাল কাঠামো যুক্ত। দুর্গের বাইরের প্রাচীরটি উপকূলরেখা বরাবর নির্মিত। ভিতরের প্রাচীরে রয়েছে বুরুজ, যার উপর বন্দুক বসানো। বাইরের এবং ভেতরের দেওয়ালের মধ্যে একটি দ্বি-পরিখা দুর্গকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। একটি দুর্গ থেকে আরেকটি দুর্গকে পৃথক করেছে যে পরিখা, সেটা বেলেপাথর কেটে তৈরি। উত্তর-পশ্চিম দিকে নির্মিত হয়েছিল একটি জেটি। এখনও ব্যবহার করা হয়।

দুর্গটিতে রয়েছে তিনটি প্রবেশদ্বার। প্রধান প্রবেশপথে, সামনের মূল দেওয়ালে পাথরের গ্যালারি-সহ পাঁচটি বড় জানালা রয়েছে। দুর্গ থেকে, দিউ দুর্গের বিপরীতে সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত পানিকোঠা দুর্গের একটি ঝলমলে দৃশ্য দেখা যায়। দিউ দুর্গের শীর্ষে এখনও দেখা যায় বেশ কয়েকটি কামান। দুর্গ এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লোহার খোলের সংগ্রহও চোখে পড়ে। একটি স্থায়ী সেতুর মাধ্যমে দুর্গে পৌঁছনো যায়। প্রবেশপথে পর্তুগিজ ভাষায় একটি শিলালিপি রয়েছে। ফটকের দুর্গটির নাম সেন্ট জর্জ। এক প্রান্তে একটি বিশাল আলোকস্তম্ভও রয়েছে। দুর্গের দেওয়াল, প্রবেশপথ, খিলান, ঢালু পথ, বুরুজের ধ্বংসাবশেষ থেকে ধারণা পাওয়া যায়, অতীতে দুর্গটি কতটা সামরিক প্রতিরক্ষা দিত।
দুর্গের পাশাপাশি দিউয়ে রয়েছে নাগোয়া সমুদ্র সৈকত, ঘোগলা, জলন্ধর, চক্রতীর্থ, গোমতীমাতার মতো সুন্দর সাদা-বালির সৈকত। এগুলি ছাড়াও রয়েছে তিনটি পর্তুগিজ বারোক গির্জা। সেন্ট পলস চার্চ, অ্যাসিসির সেন্ট ফ্রান্সিসের চার্চ এবং সেন্ট থমাস চার্চ যা বর্তমানে একটি জাদুঘর।

আরও পড়ুন-লালকেল্লা বিস্ফোরণে ফের গ্রেফতার ফরিদাবাদ থেকে

গঙ্গেশ্বর উপকূলে, ভগবান শিবের একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। সবমিলিয়ে শহরটিতে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পবিত্র মিলন দেখা যায়। অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে জলন্ধর সমুদ্র সৈকতের কাছে রয়েছে নাইদা গুহা, যা শহরের কেন্দ্র থেকে হাডমিত্য রোড হয়ে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই স্থানটি প্রাকৃতিক সূর্যালোকের জন্য বিখ্যাত, যা কমলা পাথরগুলিকে ঝলমলে করে তোলে। চক্রতীর্থ সমুদ্র সৈকতের কাছে রয়েছে খুকরি মেমোরিয়াল খোলা অ্যাম্ফিথিয়েটার। বহু মানুষ ঘুরে দেখেন।
দিউয়ে একটি ডাইনোসর পার্কও রয়েছে। সেখানে রয়েছে ডাইনোসরের মূর্তি, পাখি দেখার জন্য একটি অভয়ারণ্য, একটি সমুদ্র-খোল জাদুঘর, একটি গ্রীষ্মকালীন ঘর এবং সুন্দর লাভার্স পয়েন্ট। দিউ থেকে আরব সাগর দেখতে খুবই ভাল লাগে। হাওয়ার দাপটে ক্ষয়ে যাওয়া পাথরের অপরূপ শিল্পকর্ম দেখে মন জুড়িয়ে যায়।
সন্ধেবেলা দিউয়ের পরিবেশ ভারি মনোরম। সাগরের ধার বরাবর রাস্তা। তার পাশেই সারিবদ্ধ হোটেল এবং রেস্তোরাঁ। বেশির ভাগ হোটেল সংলগ্ন রেস্তোরাঁগুলি দোতলা। উন্মুক্ত এবং আলোয় সাজানো। সেখান থেকে চারপাশের দৃশ্য দারুণ সুন্দর লাগে।
পায়ে হেঁটে ঘোরা যায়। তবে দিউ ঘুরে নেওয়ার আদর্শ উপায় হল বাইক। বাইক ভাড়া পাওয়া যায়। দু-চাকার বন্দোবস্ত করা গেলে ভাল, না হলে দ্বীপটি ঘুরে নেওয়া যায় গাড়িতেই। রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন, সুন্দর। রাস্তার ডিভাইডারগুলি ভর্তি হরেক রকম ফুলের গাছে। সবমিলিয়ে শীতের মরশুমে দিউ (Diu Island) ভ্রমণ মনের মধ্যে অফুরান আনন্দের জন্ম দেবে।

কীভাবে যাবেন?
বিমানবন্দর আছে দিউয়ে। দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান পাওয়া যায়। ট্রেনে গুজরাত পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতেও যাওয়া যায়। হাওড়া থেকে ভেরাভাল পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন আছে। ভেরাভাল সোমনাথের বড় রেলস্টেশন। হাওড়া-ওখা এক্সপ্রেস সাধারণত সপ্তাহে এক বার চলে। এছাড়া ট্রেনে রাজকোট বা পোরবন্দর গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন?
দিউয়ে সমুদ্রের ধারে বিভিন্ন মানের অসংখ্য হোটেল রয়েছে। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। পাওয়া যায় টাটকা চিংড়ি, সি-ফুড, পর্তুগিজ, গোয়ান, চাইনিজ-সহ নানা প্রদেশের খাবার। সাগর ঘেরা দ্বীপটির নৈশজীবনও যথেষ্ট আকর্ষক। পরিবার নিয়ে ঘোরার জন্য এবং মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্য আদর্শ জায়গা।

Latest article