ঘুরে আসুন ফাগু

নির্জন নিরিবিলি পাহাড়ি গ্রাম ফাগু। অবস্থান দার্জিলিংয়ের খুব কাছেই। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। শীতের মরশুমে বেড়ানোর আদর্শ জায়গা। সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

হিমাচল প্রদেশের ফাগুর (Fagu) কথা বহু মানুষ জানেন। সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন। কাটিয়ে আসেন কয়েকটা দিন। তবে অনেকেই জানেন না, আমাদের রাজ্যেও আছে ফাগু। ডুয়ার্সের নির্জন নিরিবিলি এক পাহাড়ি গ্রাম। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। শীতের মরশুমে বেড়ানোর আদর্শ জায়গা। অবস্থান দার্জিলিংয়ের খুব কাছেই। শিলিগুড়ি থেকে সেবক হয়ে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে যাওয়া যায় এই অফবিট পর্যটন কেন্দ্রে।
ফাগুর (Fagu) পাহাড়ের ঢালে ঢালে মখমল-সবুজ চায়ের বাগান। চা-বাগানের পরিবেশ পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। নিউ মাল স্টেশন থেকে বেরিয়ে চালসাগামী রাস্তা দিয়ে খানিকটা এগিয়ে বাঁদিকে টি এস্টেট। দুই পাশে ঢেউ খেলানো সবুজ চা-বাগানের মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে সরু রাস্তা। কিছু দূর যাওয়ার পর গরুবাথানের মোড়। সেখান থেকে খানিক এগোলেই চিরচঞ্চলা চেল নদী। হইহই করে ঢুকে পড়বে লোয়ার দার্জিলিং-এর হিমেল হাওয়া। জায়গাটা পিকনিক স্পট হিসেবে জনপ্রিয়।
দূরে দূরে নীলচে আভার পাহাড়শ্রেণি। চায়ের বাগান ঘিরে জঙ্গল। মাথা দোলায় নানা রকমের গাছ। মন মাতানো ফুলের বাগান এদিক-ওদিক। শীতে কমলালেবুর বাগানগুলো উদ্ভাসিত হয় এক আশ্চর্য আলোয়। সকালে ঘুম-ভাঙা সবুজের আলসেমি-মাখা কুয়াশা পলকে মিশে যায় দূরে পাহাড়ের গায়ে। আশে পাশের গাছগুলোতে দল বেঁধে হুল্লোড় করে ফেয়ারি ব্লু-রেড পাখির দল। সবাই ব্যস্ত। কেউ তার বাচ্চার জন্য জলযোগের পোকা ধরতে, কেউ ডানা শুকোতে।
অনেকেই গরুমারা বেড়াতে যান। গরুমারা অরণ্য ভ্রমণের সঙ্গে ফাগুকে যুক্ত করে নেওয়া যেতে পারে। গরুমারা থেকে চালসা হয়ে ফাগুর রাস্তা। নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে লোয়ার ফাগু টি এস্টেট ১৯ কিলোমিটার। চালসা থেকেও লোয়ার ফাগুর দূরত্ব একইরকম। মালবাজার থেকে ফাগু ২০ কিলোমিটার। এনজেপি থেকে সরাসরি ফাগু ৭৫ কিলোমিটার। ফাগুতে থেকেও গরুমারার অরণ্য বেড়িয়ে আসা যায়।
ফাগু থেকে খানিকটা নিচের দিকে ফাফর খেতি। সবুজ প্রেক্ষাপটে চেল নদী, ঝরনা, পাখি, চায়ের বাগান, সব মিলিয়ে এক অনিন্দ্যসুন্দর পরিবেশ। যাওয়া যায় ফাগু টি ফ্যাক্টরিতে। সঙ্গে গাইড নিয়ে জঙ্গলের পথে ট্রেক করা যায়।

আরও পড়ুন- ২০২৫-এ দেখিয়ে দেব সংবিধান বদল রুখছি, রুখব

গরুমারা জাতীয় উদ্যানের প্রায় গা-ঘেঁষে ছোট্ট, সুন্দর শহর চালসা। চালসায় একটা দিন থেকে বেড়িয়ে আসা যায় পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের শেষ গ্রাম বিন্দু থেকে। ভারত-ভুটান সীমান্তে বিন্দুর অবস্থান। চালসা থেকে ডুয়ার্সের আরেক ভ্রমণ-ঠিকানা সামসিং ১৫ কিলোমিটার।
পায়ে হেঁটে ফাগু গ্রাম ঘুরে দেখা যায়। পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে একটু খোলা জায়গায় আসতেই সামনেই ধাপে ধাপে চাষের জমি সিঁড়ির মতো নেমে গিয়েছে। আধো কুয়াশার মাঝে ঢেউ খেলানো পাহাড়। মন-ক্যামেরায় ছবি তুলে নিতে হয়।
ফাগুর চা-বাগানের মাঝে আছে ব্রিটিশ আমলের এক-দুটো বাংলো। কাছেই আছে এক বৌদ্ধস্তূপ। চারপাশে একটু ফাঁকা মাঠ। রং-বেরঙের কাঠের বাড়ি দিয়ে ঘেরা। সামনে পাকারাস্তা সোজা চলে গিয়েছে লাভার দিকে। স্তূপকে ঘিরে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গোল করে ঘুরে বেড়ায়। পিছন দিয়ে বয়ে চলেছে চেল নদী। নদীর উপর একটা ছোট্ট লোহার ব্রিজ। পাগল-করা হাওয়ায় এলোমেলো করে দেয় সব কিছু। ভরা বর্ষায় হয়তো এই নদীই দামাল হয়ে ওঠে। নদীর পাড়ে বসে টাটকা ভেজ মোমোর স্বাদ নেওয়া যায়। ফ্লাস্কে কফি নিয়ে গেলে মোমোর সঙ্গে জমবে ভাল। সন্ধেবেলা পাহাড়ি গ্রামে নিঝুম পরিবেশ। তারাভরা আকাশটা একলাফে বড্ড কাছে চলে আসে। সবমিলিয়ে দু-তিন দিনের ফাগু ভ্রমণ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে। শীতের দিনে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে ট্রেনে নিউ মাল স্টেশন যেতে পারেন। শিলিগুড়ি হয়েও পৌঁছনো যায়। সেক্ষেত্রে গাড়িতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকলেও চলবে। নিউ মাল থেকে লোয়ার ফাগুর দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। গাড়িতে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছনো যায়। অন্ধকার নামার আগে পৌঁছলেই ভাল।
কোথায় থাকবেন?
ফাগুতে এখনও সেইরকম কোনও হোটেল নেই। তবে কিছু হোমস্টে আছে। আগে থেকে বুক করা যায় না, ওখানে গিয়েই ব্যবস্থা করতে হবে। এখানকার আতিথেয়তার যথেষ্ট সুনাম আছে। বছরের যে কোনও সময় ফাগু যাওয়া যায়। শীতের মরশুমে প্রকৃতিদেবী রূপের পশরা সাজিয়ে বসেন। ফলে চোখ ফেরানো যায় না। একটি ছোট্ট পরামর্শ, ফাগু গ্রামটি অত্যন্ত পরিষ্কার, তাই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। গ্রামে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখবেন। ওষুধপত্র, পরিচয়পত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু রাখবেন হাতের কাছে। প্রয়োজনে শহর থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে নেবেন।

Latest article