হিমাচলপ্রদেশ বহু পর্যটকের পছন্দের গন্তব্য। আছে বেশকিছু মন ভাল করা পাহাড়ি জায়গা। শিমলা, কুলু, মানালির নাম তো প্রায় সবারই জানা। তবে খুব কম মানুষই শুনেছেন জিভির (Jibhi) কথা। কুলুর আড়ালেই রয়েছে পাইন ঘেরা, ছোট্ট সুন্দর এই গ্রামটি। তীর্থন উপত্যকায় লুকানো এক আশ্চর্য রত্ন। অবস্থান কুলুর বাঞ্জার উপত্যকায়।
একটা সময় পর্যন্ত জিভি ছিল সম্পূর্ণ আড়ালে। তবে গত কয়েক বছরে এই গ্রাম এবং আশপাশে পর্যটকদের আনোগানা বেড়েছে। যাওয়া আসা খুব একটা কঠিন নয়। কুলু শহর থেকে দূরত্ব মোটামুটি ৬০ কিলোমিটার। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। এই গ্রামটিকে কেন্দ্র করেই বর্তমানে বিকাশ হয়েছে পর্যটনের।
জিভির (Jibhi) আশেপাশে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। জঙ্গলের মধ্যে হাঁটাপথে কিছুটা গেলেই দেখতে পাওয়া যায় জিভি জলপ্রপাত। পাতা ঝরার শব্দ, পাখির ডাক ছাড়া বলা যায় সেখানে আর কোনও শব্দ নেই। জিভি জলপ্রপাতে যাওয়ার একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। তার আগে পর্যন্ত গাড়ি যায়। সেই প্রবেশদ্বার দিয়ে চড়াই পথে মিনিট ১৫ হেঁটে জলপ্রপাতের খুব কাছে পৌঁছনো যায়। পথে পড়ে কাঠের ছোট্ট সেতু। সেইসব পার জলের শব্দ শুনতে শুনতে এগিয়ে গেলে পৌঁছনো যায় জলপ্রাপাতের সামনে। পাথরের ফাটল দিয়ে সশব্দে ঝরে পড়ছে তুমুল জলধারা। সেখানে চুপটি করে বসে প্রকৃতিকে উপভোগ করা যায়। অজান্তেই কেটে যাবে দীর্ঘ সময়।
সারা বছরই বেড়ানো যায়। তবে শীতকালে জিভি আশ্চর্য রকমের সুন্দর হয়ে ওঠে। এখানকার গ্রাম্যজীবন নিমেষে ভুলিয়ে দেবে নাগরিক ক্লান্তি। জিভি থেকে ঘুরে আসা যায় জালোরি পাস। মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জলোরি পাস নির্জন নিরিবিলি একটি জায়গা। এর উপরে রয়েছে মহাকালী মন্দির। জালোরি পাসে ট্রেকিংয়ের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে।
যাওয়া যায় সরলসার হ্রদ ও রঘুপুর গড়। জালোরি পাস থেকে সরলসার হ্রদের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার এবং রঘুপুর গড় হাঁটাপথে মোটামুটি ৫ কিলোমিটার। চড়াই-উতরাই বেয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। শরীর ফিট থাকলে, ঘণ্টা দুই-তিনেকের মধ্যেই পাহাড় ঘেরা ছোট্ট হ্রদের ধারে পৌঁছনো যায়। এখানে জল কাচের মতো স্বচ্ছ। নিসর্গের সামনে দাঁড়ালে মনে হবে এতটা পথ হাঁটা সার্থক। সময় নিয়ে গেলে, এখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায়। হ্রদের চারপাশে নানা রকমের গাছ থাকলেও, কোনও পাতা জলে পড়ে থাকে না। বলা হয়, সাধারণ মানুষ তো বটেই এখানকার পাখিরাও নাকি সেই পাতা ঠোঁটে তুলে বাইরে ফেলে দেয়। আসলে সরলসার হ্রদকে ভীষণ পবিত্র বলেই মনে করেন স্থানীয়রা। হ্রদের খুব কাছেই রয়েছে বুড়ি নাগিনের মন্দির। ছোট্ট সেই মন্দিরও যেন প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই।
এছাড়াও এখানে রয়েছে ভাঙা দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। জায়গাটি মানুষের মনে জায়গা করে নিচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এখানে রয়েছে বিস্তৃত একটি উপত্যকা। সেখানেই রয়েছে ভিউ পয়েন্ট। দেখা যায় বহু দূরের শ্বেতশুভ্র পাহাড়চূড়া এবং আশপাশ। এখান থেকে হেঁটে চলে যাওয়া যায় রঘুপুর হ্রদ। দূরত্ব সামান্যই। সবুজ উপত্যকায় ছোট্ট একটি জলাশয়। সেখান থেকে আরও কিছুক্ষণ হাঁটলে পৌঁছনো যায় আরও একটি জায়গায়। তার নাম পান্ডুরোপা। পাণ্ডবদের থেকে হয়েছে এই জায়গার নামকরণ। জায়গাটি একেবারে সবুজ। সাধারণ পর্যটকদের তো বটেই, মন ভরে যাবে ফটোগ্রাফারদেরও।
আরও পড়ুন: রেশনের ভর্তুকিতেও রাজ্যকে বঞ্চনা, কেন্দ্রের তথ্যেই পর্দাফাঁস
জিভিতে (Jibhi) গিয়ে মাছ ধরা যায়। তীর্থন নদী ট্রাউট মাছের জন্য বিখ্যাত। এটা হিমালয় গ্রিফন শকুন, মোনাল ফিজেন্ট, কোকলাস ফিজেন্ট ইত্যাদি বিদেশি এবং বিরল পাখির আবাসস্থল। এই পাখিগুলো দেখার জন্য স্থানীয় গাইডের সাহায্যে বার্ডওয়াচিং ট্যুর করা যায়। আশেপাশে ফোটে নানা রঙের ফুল। তাকালেই চোখের আরাম। বলা যায়, জিভি যেন এক রূপকথার রাজ্য। হিমালয়ের অরণ্যে রোদ-ছায়ার এক মায়াবী খেলা দেখার জন্য শীতের মরশুমে সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে বিমানে বা ট্রেনে দিল্লি পৌঁছে যান। সেখান থেকে গাড়িতে হিমাচলপ্রদেশ পৌঁছতে পারেন। কুলু যাওয়ার জন্য দিল্লি বা চণ্ডীগড় থেকে বাস পাওয়া যায়। চণ্ডীগড়-মানালি হাইওয়ে ধরে পৌঁছনো যায় জিভিতে। বিমানে অথবা ট্রেনে বা গাড়িতে চণ্ডীগড় পৌঁছে সেখান থেকেও সড়কপথে হিমাচলের যে কোনও প্রান্তে পৌঁছনো যায়। হাওড়া থেকে ট্রেনে কালকা গিয়ে, সেখান থেকে টয় ট্রেনে পৌঁছনো যায় শিমলা। শিমলা ঘুরে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে জিভি পৌঁছতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
জিভিতে তেমন একটা বিলাসবহুল হোটেল নেই। তবে এখানে বেশকিছু অতিথিশালা ও হোমস্টে রয়েছে। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। চেখে দেখতে পারেন স্থানীয় খাবার। এর স্বাদ এককথায় অতুলনীয়।