ঘুরে আসুন যোশীমঠ

উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠ। এক শান্ত হিমালয় শহর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধ্যাত্মিক তাৎপর্য এবং অ্যাডভেঞ্চারের এক অফুরান ভাণ্ডার। বসন্তে ফোটে নানা রঙের ফুল। হালকা আবহাওয়ায় পরিদর্শন করা যায় দর্শনীয় স্থান। সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

উত্তরাখণ্ডে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম শান্ত হিমালয় শহর যোশীমঠ। পর্যটকদের খুব প্রিয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধ্যাত্মিক তাৎপর্য এবং অ্যাডভেঞ্চারের এক অফুরান ভাণ্ডার। প্রকৃতিপ্রেমী, আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানকারী এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের বারবার আকর্ষণ করে।
যোশীমঠ ঘুরে দেখার জন্য আদর্শ ঋতু বসন্ত। মার্চ এবং এপ্রিল সেরা সময়। এই সময়ে যোশীমঠে নানা রঙের ফুল ফোটে। হালকা আবহাওয়ায় আনন্দের সঙ্গে দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করা যায় এবং অবসর সময়ে হেঁটে বেড়ানো যায়। মে-জুন মাসেও চোখে পড়ে পর্যটকের ভিড়। সমতলভূমির তীব্র তাপ থেকে বাঁচতে এবং হিমালয়ের শীতল জলবায়ু উপভোগ করতে বহু মানুষ ছুটে যান। এই ঋতু পরিবার এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য দুর্দান্ত।
যোশীমঠে এবং কাছেপিঠে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান, বেড়ানোর জায়গা। ঘুরে দেখা যায় নৃসিংহ মন্দির। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। এই মন্দিরটি ভগবান বদ্রীনাথের শীতকালীন বাসস্থান বলে মনে করা হয়। এর অসাধারণ স্থাপত্য এবং আধ্যাত্মিক পরিবেশ মোটামুটি সারা বছর ভক্তদের আকর্ষণ করে।
নন্দপ্রয়াগ থেকে যোশীমঠ যাওয়ার পথে হেলং বলে একটি জায়গা পড়ে। সেখান থেকে প্রায় ২০-৩০ কিলোমিটার গেলেই দর্শন পাওয়া যায় কল্পেশ্বর মহাদেবের। কল্পেশ্বর উর্গম গ্রামে অবস্থিত। ছবির মতো সুন্দর এই গ্রাম। এখানেই আছে সপ্তবদ্রীর অন্যতম দুর্গমবদ্রী ধ্যানবদ্রী। জায়গাটা নীরবতা দিয়ে আঁকা। খুব বেশি মানুষের ভিড় চোখে পড়ে না।

আরও পড়ুন: বৃথা গেল বিভাজনের নীতি জিতে গেল বঙ্গের সম্প্রীতি

স্কিইং ঢালের জন্য বিখ্যাত আউলি। যোশীমঠ থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তুষারাবৃত হিমালয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে কেবল-কারে ভ্রমণ করা যায়। আউলিতে নবদম্পতিরা মধুচন্দ্রিমার জন্য যান।
অলকানন্দা এবং ধৌলিগঙ্গা নদীর শান্ত সঙ্গমস্থল উপভোগ করা যায় বিষ্ণুপ্রয়াগে। সবুজে ঘেরা। ফটোগ্রাফি এবং বিশ্রামের জন্য একটি আদর্শ স্থান।
ঘন বনের মাঝে লুকিয়ে থাকা চেনাব হ্রদ প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি নির্মল স্থান। মনোরম পরিবেশ পিকনিক এবং ফটোগ্রাফির জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
উষ্ণ প্রস্রবণ এবং ট্রেকিং সুযোগের জন্য বিখ্যাত তপোবন। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের এবং নবজীবনের সন্ধানকারীদের জন্য উপযুক্ত।
কল্পবৃক্ষ একটি বটবৃক্ষ। ১,২০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এই প্রাচীন বৃক্ষের আধ্যাত্মিক মূল্য অপরিসীম। প্রকৃতি এবং ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য এটা একটা শান্তিপূর্ণ স্থান।
পঞ্চবদ্রী সার্কিটের অংশ হিসেবে ভবিষ্যবদ্রী হল যোশীমঠের কাছে একটি কম পরিচিত জায়গা। এই মন্দিরের পথে ট্রেকিং রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেয়। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ।
অবশ্যই ঘুরে দেখতে হবে ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার। ফুলের উপত্যকা। এটা একটা জাতীয় উদ্যান। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। স্বর্গরাজ্যটি বিচিত্র ফুল এবং বিদেশি প্রাণীর স্বর্গরাজ্য।
হেমকুণ্ড সাহেব যোশীমঠের কাছে অবস্থিত পবিত্র শিখ তীর্থস্থান। হিমবাহের হ্রদ এবং সুউচ্চ শৃঙ্গ দিয়ে ঘেরা। এই জায়গায় বেড়ালে শরীর এবং মন ভাল হয়ে যাবে।
নন্দাদেবী জাতীয় উদ্যান একটি অসাধারণ জায়গা। অতুলনীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এখানকার অত্যাশ্চর্য ট্রেকিং রুট পরিবেশ-পর্যটক এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য উপযুক্ত।
যোশীমঠ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অনিমঠ থেকে ট্রেক করে যাওয়া যায় বৃদ্ধবদ্রী। যাত্রাপথে খেত-খামার ও ফুলের সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দেয়। বৃদ্ধবদ্রী মন্দিরটি দেখার মতো। মানুষের বিশ্বাস, এখানে নারায়ণ বৃদ্ধ বেশে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই বৃদ্ধবদ্রী। এছাড়াও নারদ নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প। আছে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। বসন্তদিনে বা গরমের সময় সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। এই ভ্রমণ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে।

Latest article