ঘুরে আসুন কন্যাম

ইলাম জেলার কন্যাম। পূর্ব নেপালের ছোট্ট জনপদ। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঢেউ খেলানো পাহাড়, চা-বাগান, পাইনের জঙ্গল হাতছানি দিয়ে ডাকে। আশপাশেও আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। মন ভাল হয়ে যাবে। সম্প্রতি ঘুরে এসে লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

পূর্ব নেপালের ছোট্ট জনপদ কন্যাম (Nepal_Kanyam)। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্বে ইলাম জেলায় অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। চোখ ফেরানো যায় না। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত কন্যাম ছিল শুধু নেপালিদেরই ছুটি কাটানোর ঠিকানা। আজকাল উত্তরবঙ্গের মানুষেরাও ছুটে যাচ্ছেন। যেসব পর্যটক দার্জিলিং, কালিম্পং বেড়াতে যান, তাঁরাও অনেকেই ঘুরে আসেন এই পাহাড়ি অঞ্চল থেকে। কম খরচে, অল্প সময়ের মধ্যে হয়ে যায় ছিমছাম বিদেশ ভ্রমণ।
কী আছে কন্যামে? ঢেউ খেলানো পাহাড়। চা-বাগান। পাশে পাইনের জঙ্গল। ফুলের বাগান। রাস্তার ধারে ছোট্ট ছোট্ট ক্যাফে। সিঙ্গালিলার অংশ ইলাম। কন্যাম (Nepal_Kanyam) তার-ই ছোট্ট গ্রাম। চা-বাগানের মাঝেই রয়েছে টি ফ্যাক্টরি। বহু মানুষ কাজ করেন। বাগানের সিঁড়িপথ ধরে পাহাড়ের উপর উঠলে, পৌঁছনো যায় ভিউ পয়েন্টে। সেখান থেকে আরও সুন্দরী দেখায় কন্যামকে।

রাস্তার এক পাশে রয়েছে আরও একটি ভিউ পয়েন্ট। এই ভিউ পয়েন্টটি আবার পাহাড়ের খাদের ধারে। ইংরেজিতে লেখা কন্যাম। এখানকার মূল রাস্তার দুই ধারেই বসে ছোট্ট মেলা। মূল বাজার যদিও এটা নয়। পর্যটকদের জন্যই কয়েকটি অস্থায়ী দোকানপাট রয়েছে। পাওয়া যায় থুকপা, মোমো, ম্যাগি-সহ নানারকম খাবার। স্থানীয়দের মুখে সবসময় হাসি লেগেই আছে। খুব সহজেই পর্যটকদের আপন করে নিতে পারেন।
কন্যামে প্যারাগ্লাইডিং করার সুযোগও রয়েছে। কিন্তু মেঘেদের আনাগোনা বেশি থাকলে, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস বন্ধ থাকে। আছে গ্লাস স্কাই ওয়াক। বুকে সাহস নিয়ে টিকিট কেটে বহু মানুষ ওঠেন, কাচের মেঝের উপর পা রেখে ধীরে ধীরে হেঁটে বেড়ান। হাঁটতে হাঁটতে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখেন এবং রোমাঞ্চিত হন। আকাশ পরিষ্কার থাকলে স্কাই ওয়াক থেকে দেখা যায় দূরে দূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সবুজে মোড়া পাহাড়। মেঘ বা কুয়াশা থাকলে পরিবেশ অন্যরকম হয়ে যায়। তখন মনে হয়, এ যেন কোনও এক মায়াজগৎ। স্কাই ওয়াকের কাছেই আছে বড় দোলনা। অনেকেই খুশি মনে দোল খান।

আরও পড়ুন-লজ্জা! ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শীর্ষে বিজেপি রাজ্যই

আশপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। কন্যাম থেকে অনায়াসে ঘুরে নেওয়া যায় শ্রী আন্তু। নেপালের মানুষদের কাছে তো বটেই, জায়গাটা দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের মানুষদের কাছেও ভীষণ পরিচিত এবং প্রিয়। একটা কৃত্রিম লেককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছোট্ট পর্যটন কেন্দ্র। এক ধারে সবুজ চা-বাগান আর এক পাশে পাইনের জঙ্গল। তারই ফাঁকে রয়েছে হোমস্টে এবং ক্যাফে। নেপালের প্রধান খাবার ডাল-ভাতের পাশাপাশি এখানে কন্টিনেন্টাল খাবারও যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়।
ঘুরে আসা যায় জেলা শহর ইলাম। জায়গাটা ‘গরিবের বিদেশ’ নামেও পরিচিত। একটি সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র। এখানেও চা-বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানকার চায়ের স্বাদ অসাধারণ। সবমিলিয়ে মন ভাল হয়ে যাবে।
কন্যাম, শ্রী আন্তু, ইলম ভ্রমণের জন্য ভারত থেকে যাওয়াই সহজ। তবে নেপালে প্রবেশের সময় এবং স্থানীয় ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঙ্গে রাখা জরুরি।

কীভাবে যাবেন?
কন্যাম দু’ভাবে যাওয়া যায়। শিলিগুড়ি থেকে পানিট্যাঙ্কি দিয়ে ভারত-নেপাল সীমান্ত পার করতে হবে। তার পরে ধুলাবাড়ি মার্কেট হয়ে চারালি পৌঁছাতে হবে। এই চারালি থেকে কন্যাম যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। মাথাপিছু ৩০০ নেপালি রুপি নেয়। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৮৮ টাকা। কন্যাম যাওয়ার আর একটি রাস্তা হল পশুপতি ফটক। এখান দিয়ে সীমান্ত পার করলেই চোখে পড়বে শয়ে শয়ে শেয়ার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। মাথাপিছু ৩০০ নেপালি রুপি দিয়ে পৌঁছনো যায়। অনেক সময় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকেও কন্যাম যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো রিজার্ভ করে যেতে হবে। তার ভাড়াও আকাশছোঁয়া।

কোথায় থাকবেন?
কন্যামে হাতেগোনা কয়েকটা হোম-স্টে রয়েছে। ঘরের ভাড়া ১,০০০ নেপালি রুপি থেকে শুরু। এখানে খাওয়ার খরচ আলাদা। নেপালি ভাত-ডাল থালির দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০০ টাকা। তবে এখানে প্রচুর ক্যাফে রয়েছে, যেখানে কন্টিনেন্টাল খাবারের দাম তুলনায় কম। নেপালের এই অঞ্চলে ভারতীয় মুদ্রা চলে। তবে সীমান্ত পার হওয়ার সময় কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করে নেওয়াই ভাল। এতে খরচ কম হয় এবং কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না। হাতে ৭-৮ হাজার টাকা থাকলেই অনায়াসে ঘুরে নেওয়া যায় নেপালের এই ছোট্ট জনপদ। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসার প্রয়োজন নেই। তবে পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড, ভারতীয় পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্য কোনও বৈধ ভ্রমণ-নথি সঙ্গে রাখতে হবে। সীমান্ত পার হওয়ার সময় টোল ফি এবং পরিবহণ পারমিটের জন্য অর্থ প্রদান করতে হতে পারে।

Latest article