হাতছানি দেয় ভাগামন

কেরলের এক পরিচ্ছন্ন হিল স্টেশন ভাগামন। রয়েছে ঢেউখেলানো পাহাড়, নদী, ঝরনা, জলপ্রপাত, চা-বাগান, পাইনের বন। শীতের মরশুমে বেড়ানোর আদর্শ জায়গা। সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

এক-পা দু-পা করে এগিয়ে আসছে শীত। এইসময় মনের ডানা উড়ান চাইছে। ইচ্ছে করছে বেরিয়ে পড়তে। কোথায় যাওয়া যায়? ঘুরে আসা যায় ভাগামন। কেরলের (Kerala_Vagamon) হিল স্টেশনগুলির মধ্যে অন্যতম। ইদুক্কির পাশে ইদুক্কি-কোট্টায়াম জেলার সীমান্তে অবস্থিত জায়গাটা। একটি পরিচ্ছন্ন শহর। এখানকার জলবায়ু অতি মনোরম। পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সারা বছর ভিড় দেখা যায়। তবে শীতের মরশুমে জনসমাগম তুলনায় বেশিই চোখে পড়ে। রোম্যান্টিক পরিবেশ। নবদম্পতিদের মধুচন্দ্রিমার আদর্শ জায়গা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই পাহাড়ি গন্তব্যটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ট্রাভেলরের তৈরি করা ভারতে সব চেয়ে আকর্ষণীয় ৫০টি গন্তব্যের তালিকায় রয়েছে।

ভাগামনে (Kerala_Vagamon) রয়েছে এমন কিছু ভিউ পয়েন্ট, যেখান থেকে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। দেখা যায় সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত। আছে বিস্তীর্ণ উপত্যকা, টিলা, ঘন বন এবং জলপ্রপাত। জানা যায়, চায়ের চাষ শুরু করার জন্য ব্রিটিশরা এখানে প্রথম আসেন। পত্তন করেন চা-বাগানের। কিন্তু আজও, এই একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষেও ভাগামনের গায়ে এতটুকু বাণিজ্যিক গন্ধ লাগেনি। বলা যায়, আজও কার্যত অনাঘ্রাতা। চা-বাগান, সবুজ তৃণভূমি আচ্ছাদিত ঢেউখেলানো পাহাড়, গিরিসংকট, এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পাহাড়ি নদী, পাইনের বন, প্রাণোচ্ছল ঝরনা, নানা ধরনের অর্কিড, হরেক রকমের ফুলের সমাবেশ— দুটো দিন প্রকৃতির কোলে থেকে অপার শান্তিতে কাটানো যায়।

আরও পড়ুন- বিএলও-র হাত থেকে ফর্ম নিলেন ভোটার মুখ্যমন্ত্রী

আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। ভাগামন (Kerala_Vagamon) জলপ্রপাত অবশ্যই দেখতে হবে। এর আরও একটি নাম পালারুবি। মন ভাল হয়ে যাবে সবুজ পাহাড়ের কোলে ভাগামন লেক দেখলে। লেকে বোটিং করা যায়। ভাল লাগবে। মারমালা হল এরাত্তুপেট্টা যাওয়ার পথে ১৩১ ফুট উঁচু জলপ্রপাত। ঝরনার জলপতনের শব্দ, পাখির কলতান, দূর থেকে ভেসে আসা বন্যজন্তুর ডাক— মোহাবিষ্ট করবেই। দেখা যায় ব্রিটিশদের হাতে তৈরি পাইনের বন। ঘন সবুজ এই বন এখানকার প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। পাইনের বনে হেঁটে বেড়ালে অন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হবে। ভাগামন শৈলশহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে তঙ্গল পারা। কিছুটা ট্রেক করতে হয়। পাহাড়ের একেবারে ধারে এক বিশাল পাথর। কথিত আছে, এখানে হসরত শেখ ফরিদুদ্দিন বাবা নামে এক সুফি সাধক বিশ্রাম নিতেন। তাঁর স্মৃতিতে এখানে রয়েছে এক দরগা। মুণ্ডকায়াম ঘাটের সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। অনুভব করতে হয়। এখান থেকে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত। কুরিসুমালা হল খ্রিস্টানদের জনপ্রিয় তীর্থস্থান। ভাগামনের গ্রামীণ জীবন দেখতে হলে এখানে আসতেই হবে। এখানে একটি আশ্রম ও একটি ডেয়ারি ফার্ম আছে। কুরিসুমালা আশ্রম সায়রো-মলাঙ্করা ক্যাথলিক চার্চের অধীন। শৈলশহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মুরুগানমালা পাহাড়। সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে রয়েছে ভগবান মুরুগান তথা কার্তিকের মন্দির। অর্থাৎ ভাগামন হল সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের জায়গা। ব্যারেন হিলস রয়েছে শৈলশহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই পাহাড়ের চেহারারও বদলে যায়। বর্ষা আর শীতে যে পাহাড় সবুজে মোড়া থাকে, সেই পাহাড়ই গ্রীষ্মে হয়ে যায় ন্যাড়া। বৃষ্টির জল পেলেই তৈরি হয়ে যায় সবুজ তৃণভূমি। পেরিয়ার নদীর উপরে নির্মিত হয়েছে ইদুক্কি ড্যাম। নির্মাণশিল্পের এক অনন্য নজির। হাতছানি দেয় ভাগামন? ঘুরে আসুন। এই ভ্রমণ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে।

Latest article