ঘুরে আসুন খুরপাতাল

খুরপাতাল এক রহস্যময় হ্রদ। মূলত জলের রং পরিবর্তনের কারণে জনপ্রিয়। যাঁরা শহুরে কোলাহল থেকে দূরে, কিছুটা নির্জন মুহূর্ত কাটাতে চান, তাঁদের জন্য সেরা পর্যটন গন্তব্য। শীতের মরশুমে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। এইসময় প্রকৃতি সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

আমাদের দেশের কিছু কিছু শহরকে বলা হয় হ্রদের শহর। নৈনিতাল তার মধ্যে অন্যতম। নৈনিতালে মোট সাতটি তাল অর্থাৎ হ্রদ রয়েছে। ভীমতাল, সাততাল, নাউকুচিয়াতাল, খুরপাতাল, মালয়াতাল, হরিশতাল এবং লোখাতাল। তবে, নৈনিতাল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে খুরপাতালে (Khurpatal)।
জায়গাটা নৈনিতাল থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে, উত্তরাখণ্ডের বাজপুর কালাদগুঙ্গি রোডের উপর অবস্থিত। সেখানে আছে এমন একটি হ্রদ, যা দেখে রীতিমতো অবাক হতে হয়। এই হ্রদের নাম খুরপাতাল হ্রদ। বলা হয়ে থাকে, এই হ্রদের জলের রং নাকি আপনা আপনিই বদলে যায়। মূলত জলের রং পরিবর্তনের কারণেই হ্রদটি সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। একে আবার রহস্যময় হ্রদও বলা হয়।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬৩৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত খুরপাতাল (Khurpatal) হ্রদ। বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত। হ্রদটি ঢেউখেলানো পাহাড় এবং ঘন দেবদারু গাছে ঘেরা। দিনের বেলায় একরকম পরিবেশ, রাতের বেলায় আরেকরকম। লম্বা পাইন গাছ খুরপাতালের সৌন্দর্যকে আরও লোভনীয় করে তুলেছে। ঘটনা হল, আবহাওয়া ঠিকমতো পরিষ্কার না থাকলে খুরপাতালের সৌন্দর্য কিন্তু সেই ভাবে উপভোগ করা যায় না।

হ্রদটি স্ফটিক স্বচ্ছ জলের জন্যও বিখ্যাত। যাঁরা নৈনিতাল বেড়াতে যেতে চান, অথচ সেখানকার শহুরে কোলাহল থেকে দূরে থাকতে এবং নির্জন নিরিবিলি প্রকৃতির মাঝে কিছু শান্ত মুহূর্ত কাটাতে চান, তাঁদের জন্য খুরপাতাল সেরা পর্যটন গন্তব্য। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায়শই বলেন যে, খুরপাতাল হ্রদের জলের রং কখনও লাল, কখনও বদলে নীল হয়ে যায়। আবার কখনও জলের রং হয়ে যায় সবুজ। মানুষের বিশ্বাস, হ্রদের জলের রঙের এই পরিবর্তন নাকি আদতে ভবিষ্যতেরই ইঙ্গিত দেয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যখন খুরপাতালের জলের রং হালকা লাল হয়, তখন নাকি কোনও বিপর্যয়ের আগমনের লক্ষণই দর্শাচ্ছে। আবার একই ভাবে মার্চ-এপ্রিল মাসে জলের রং সোনালি হলদেটেতে পরিণত হয়, যা কিনা সমৃদ্ধির প্রতীক। এই সময় পাইন ফুল খুরপাতালের জলের উপর পড়ে। সেই কারণেই সম্ভবত হ্রদের জলের রঙে কিছুটা পরিবর্তন হয়। অনেক সময় গাছের ছায়ার কারণেও খুরপাতালের জলের রং সবুজ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন- কেন্দ্রের নাটক, মিড-ডে মিলে লোকদেখানো বরাদ্দবৃদ্ধি, ক্ষুব্ধ ব্রাত্যর প্রতিবাদ

স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন যে, খুরপাতাল (Khurpatal) হ্রদের অভ্যন্তরে প্রায় ৪০টিরও বেশি নানা ধরনের শৈবাল প্রজাতি রয়েছে। শৈবালের উপরে সূর্যের রশ্মি পড়ে, তাতেই তৈরি হয় নানা রঙের খেলা। কারণ যা-ই হোক, এই রং বদল দেখার জন্য দূরদূরান্তের পর্যটকরা ছুটে যান এবং দারুণভাবে উপভোগ করেন। আরও একটি কারণ আছে। এই হ্রদে বেড়াতে বেড়াতে পর্যটকদের প্রচুর মাছ দেখার সুযোগ রয়েছে। নানা ধরনের মাছ। জায়গাটা মাছ ধরার জন্যও বেশ উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।
খুরপাতাল হ্রদের সঙ্গে জুড়ে আছে পৌরাণিক গাথাও। শোনা যায়, এখান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দ্রোণ সাগর। কথিত আছে যে, এই দ্রোণ সাগরেই গুরু দ্রোণাচার্য এসে পাণ্ডবদের ধনুর্বিদ্যার পাঠ শিখিয়েছিলেন। তার প্রতীক হিসাবে এখানে গুরু দ্রোণের মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছে।
চাইলে বছরের যে কোনও সময়ই খুরপাতাল হ্রদ ঘুরে আসা যায়। তবে বেড়ানোর জন্য আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে মে মাস। শীতকালে তুষারপাতের কারণে এখানকার তাপমাত্রা খুব কমে যায়। তখন প্রকৃতি অন্য রূপে সেজে ওঠে। মেঘ কুয়াশার রাজ্য। স্বপ্নের মতো জায়গা। সময় বের করে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন।

কীভাবে যাবেন?
খুরপাতালের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন কাঠগোদাম। ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। খুরপাতাল পৌঁছানোর জন্য স্টেশন থেকে স্থানীয় ট্যাক্সি ক্যাব পাওয়া যায়। পন্তনগর বিমানবন্দর হল খুরপাতালের নিকটতম বিমানবন্দর। ৬৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানবন্দরে নেমে এনএইচ ১০৯ হয়ে খুরপাতাল পর্যন্ত একটি ক্যাব নিতে পারেন। নৈনিতাল দিয়েও যেতে পারেন। নৈনিতাল মল রোড থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে যাওয়া যায়। ঘন সবুজ বনের মধ্য দিয়ে খুরপাতাল ট্রেক করা যায়। খুরপাতালের নিকটতম বাসস্ট্যান্ড তালিতাল। ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখান থেকে খুরপাতাল পৌঁছানোর জন্য অটোরিকশা বা ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া করতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?
খুরপাতালে আছে বেশকিছু হোটেল, গেস্ট হাউস। থাকা- খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। তবে আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল। গুগল সার্চ করে নিতে পারেন। থাকা যায় নৈনিতালেও। আছে প্রচুর হোটেল। খরচ মোটামুটি নাগালের মধ্যে। আশপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। বেরনোর আগে হোটেল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন। পাবেন সহযোগিতা। বাজার ঘুরে নানান রঙের শীতের পোশাক কিনতে পারেন।

Latest article