ঘুরে আসুন মহাবালেশ্বর

মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় অবস্থিত মহাবালেশ্বর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য সুপ্রসিদ্ধ। এই পাহাড়ি এলাকায় আছে মন্দির, দুর্গ, জলপ্রপাত ইত্যাদি। শীতের মরশুমে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি এই ভ্রমণ অজানাকে জানতে সাহায্য করবে। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ছড়িয়ে পড়েছে হালকা শীতের আমেজ। উপভোগ্য সময়। এইসময় মন ঘরবন্দি থাকতে চায় না। অনেকেরই বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। কোথায় যেতে চান? একটু দূরে কোথাও? তাঁদের জন্য পরামর্শ— ঘুরে আসুন শৈলশহর মহাবালেশ্বর (Mahabaleshwar)। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় অবস্থিত এটা একটা খুবই জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যস্থল। স্থানটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য সুপ্রসিদ্ধ। এখানে প্রচুর পর্যটন-আকর্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, এছাড়াও মহাবালেশ্বরে রয়েছে বেশ কিছু মন্দির ও মহত্ত্বপূর্ণ ভবনও। জানা যায়, মহাবালেশ্বর শিবের নামেই নামকরণ এই শৈলশহরের৷ মিথও আছে এই সম্পর্কে৷ মহাবল ও অতিবল নামে দুই পরাক্রমশালী দৈত্যভ্রাতাকে নিয়ে৷ অত্যাচারে শিকার-দেবতাদের তখন নাজেহাল অবস্থা৷ শেষে মহাদেবের মধ্যস্থতায়, তাদের ইচ্ছা মৃত্যু প্রার্থনার মধ্যে মুড়োয় দৈত্যনিধন গল্পের নটে গাছ৷ পাশাপাশি দুটি মন্দির৷ মহাবালেশ্বর ও অতিবালেশ্বর৷ দুটি মন্দিরই দেখার মতো। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী। যদিও কিছু অংশ সময়ের চাপে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিন অগণিত মানুষ যান। ঘুরে দেখেন। সবথেকে বড় কথা, এখানে পান্ডা ছাড়াই স্বয়ম্ভূকে স্পর্শ করে পুজো দেওয়া যায়।

কাছেই রয়েছে পাঁচনদীর উৎসস্থল পঞ্চগঙ্গা মন্দির। এই মন্দিরের নির্মাণশৈলীও দেখার মতো। ঘুরে দেখা যায়। কাটানো যায় বেশ কিছুটা সময়। শহর থেকে সাড়ে বারো কিলোমিটার দূরে রয়েছে আর্থার সিটি পয়েন্ট৷ লাগোয়া রয়েছে আরও কয়েকটি পয়েন্টও৷ এখানে দাঁড়িয়ে মেঘে-কুয়াশার নৃত্যনাট্য দেখে মন ভরে যায়৷ বেশ সাজানো-গোছানো জায়গা৷ একই পাহাড়ি চত্বরের ভিন্ন-ভিন্ন প্রান্তসীমায় বিভিন্ন পয়েন্ট৷ ইকোপয়েন্ট, আর্থার সিট পয়েন্ট, উইন্ডো পয়েন্ট, হান্টিং পয়েন্ট, টাইগার স্প্রিং পয়েন্ট ইত্যাদি৷ এখানে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সহ্যাদ্রি পর্বতমালার সঙ্গে কোঙ্কণ উপত্যকার চমৎকার ল্যান্ডস্কেপ লক্ষ্য করা যায়৷ রোম্যান্টিক পরিবেশ। নবদম্পতিদের জন্য আদর্শ। চাইলে জায়গাটি নির্বাচন করা যায় মধুচন্দ্রিমার জন্য। শীতের মরশুমে চোখে পড়ে পর্যটকের ভিড়। নানা রঙের পোশাক। ওঠে দেদার সেলফি। এখানকার মাঙ্কি পয়েন্টটি দেখার মতো। ঝিমধরা প্রকৃতি৷ নেশা জাগায়। মার্জার পয়েন্টে হুজুগে মানুষজনের হইহল্লা বেশি। সাজু-গুজু ঘোড়া আর গুচ্ছের গাড়ির জটলা৷

আরও পড়ুন- সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় কী পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র? সংসদে প্রশ্ন তুললেন মালা

নির্জনতাপ্রেমীরা এড়িয়ে চলতে পারেন। বেড়াতে বেড়িয়ে শৈলশহরের কাছাকাছি অবস্থিত জলপ্রপাত দেখতে ভুলবেন না। সবুজ পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসছে জলধারা। দেখে মন ভাল হয়ে যাবে। দূর হয়ে যাবে সমস্ত ক্লান্তি। এছাড়াও আছে নানারকম ফল ও ফুলের বাগান।

আছে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। সেগুলো অবশ্যই ঘুরে দেখবেন। তারমধ্যে অন্যতম মাউন্ট ম্যালকম। ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন ম্যালকমের নামানুসারে তাঁর কার্যকালে ১৮২৯ সালে এই বাংলো নির্মিত হয়। কারণ এই জায়গাটির প্রতি তিনি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ভবনটির স্থাপত্য ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের একটি সূক্ষ্ম উদাহরণ। এখান থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ইতিহাস-সমৃদ্ধ জায়গার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে যাঁদের, তাঁরা অবশ্যই ঘুরে দেখবেন বাংলোটি।

ঘুরে দেখা যায় হোলি ক্রস চার্চ। এটা এই অঞ্চলের একমাত্র ক্যাথলিক চার্চ। ১৮৩১ সালে নির্মিত। সাধারণত ‘চার্চ ইন দ্য হিলস’ বা ‘পাহাড়ি গির্জা’ নামে সুপরিচিত। আকারে খুবই ছোট। সুন্দর নকশা, কাচের জানালা এবং স্থাপত্যের জন্য সুপরিচিত।

মহাবালেশ্বর (Mahabaleshwar) থেকে কিছু দূরে অবস্থিত প্রতাপগড় দুর্গ। এটা ভেলার বা বিক্রম দুর্গ নামেও পরিচিত। এটা মারাঠা সাম্রাজ্যের আমলে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল। ছত্রপতি শিবাজি নির্মাণ করেছিলেন। দুর্গটি ছত্রপতি শিবাজি এবং আফজাল খাঁর যুদ্ধের সাক্ষী। আফজাল খাঁ ছিলেন বিজাপুরের আদিল শাহি রাজবংশের একজন সেবাইত। মধ্যযুগীয় ভারতীয় সেনাপতি। ভবানী মন্দির এবং আফজাল খাঁর সমাধি এই ভবনের ভিতরেই অবস্থিত এবং পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে প্রতাপগড় দুর্গটি সাতারা দেশীয় রাজ্য, উদয়নরাজে ভোসলের উত্তরাধিকারির অধিকরণের আওতায় রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য মহাবালেশ্বর ভ্রমণ আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি অজানাকে জানতে সাহায্য করবে।

কীভাবে যাবেন?
বিমানমাধ্যমে মহাবালেশ্বরের (Mahabaleshwar) নিকটবর্তী বিমানবন্দর হল পুণে বিমানবন্দর। যা এখান থেকে প্রায় ১৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখান থেকে গাড়ির মাধ্যমে শহরে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। রেলমাধ্যমে মহাবালেশ্বরের নিকটবর্তী প্রধান রেলওয়ে স্টেশন হল পুণে জংশন রেলওয়ে স্টেশন, যা এখান থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখান থেকে গাড়ির মাধ্যমে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। সড়কমাধ্যমে এখানে বেশ কিছু বাস রয়েছে, যা প্রধান প্রধান নিকটবর্তী শহর, যেমন পুণে ও মুম্বইয়ের মধ্যে যাতায়াত করে।

কোথায় থাকবেন?
রয়েছে মহারাষ্ট্র পর্যটন বিকাশ নিগমের হলিডে রিসর্ট৷ এছাড়াও আছে বেসরকারি হোটেল। এখানে হোটেল-ভাড়া অত্যন্ত বেশি৷ মহাবালেশ্বর যাওয়া যায় সারা বছরই৷ তবে অক্টোবর থেকে মার্চ সেরা সময়৷ শীতের মরশুমে প্রকৃতি সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে। প্রতিটা পয়েন্ট ঘোরার সময় এবং লেকে বোটিং-এর ফাঁকে পলিব্যাগ বা প্লাস্টিক বোতল ছুঁড়ে ফেলবেন না৷ শৈলশহরকে সুন্দর রাখতে অবশ্যই পর্যটকসুলভ ব্যবহার করবেন।

Latest article