মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার একটি জনপ্রিয় শৈলশহর লোনাভালা (Lonavala)। সহ্যাদ্রি পর্বতমালায় অবস্থিত এবং এর যমজ শহর খান্ডালার সঙ্গে মিলে একটি শান্ত ও সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। পুনে থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এবং মুম্বই থেকে প্রায় ৮৩ কিলোমিটার দূরে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। পাশাপাশি রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। কুয়াশা-মাখা ছোট-বড় পাহাড়, স্বাস্থ্যকর জলবায়ু, মনোরম জলপ্রপাত, প্রাচীন গুহা, নির্মল হ্রদ এবং দুর্দান্ত দৃশ্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
লোনাভালা (Lonavala) এবং আশেপাশের অঞ্চলটি খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে একটি বিশিষ্ট বৌদ্ধ কেন্দ্র ছিল। ফলে বেড়াতে গেলে বেশ কয়েকটি প্রাচীন বৌদ্ধ পাথর-কাটা গুহা এবং মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। জানা যায়, জায়গাটা প্রথমে মারাঠা সাম্রাজ্যের অধিপতি ছত্রপতি শিবাজি শাসন করেছিলেন। যদিও পরবর্তী সময়ে এটি পেশোয়া শাসকদের নিয়ন্ত্রণে আসে, যাঁরা দ্বিতীয় মারাঠা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারপর ব্রিটিশরা পেশোয়াদের পরাজিত করার পরে এটি দখল করে নেয়। লোনাভালার কাছেপিঠে আছে বেশ কয়েকটি বেড়ানোর জায়গা। শীতের মরশুমে সপরিবার ঘুরে আসা যায়।
অন্যতম দর্শনীয় স্থান লোনাভালা (Lonavala) হ্রদ। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পরিবেশ শান্ত ও মনোরম। এই হ্রদ ইন্দ্রায়ণী নদীর উৎসস্থল। হ্রদের তীরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। পাশাপাশি দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। সারা বছর বহু পর্যটক আসেন। সময় কাটিয়ে যান। ঘুরে বেড়ান হ্রদের চারধারে।
বহু মানুষ ঘুরে দেখেন ভূশি জলাধার। লোনাভালা রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিশাল এই জলাধার পর্যটকদের জন্য এবং মুম্বই এবং পুনেতে বসবাসকারী লোকদের জন্য সপ্তাহান্তে বেড়ানোর অন্যতম সেরা গন্তব্য। দর্শকদের বিস্মিত করে। সারা বছর বহু পর্যটক ভূশি জলাধার দেখার জন্য আসেন।
আরও পড়ুন-উঃ! এবার কি তবে কাদম্বিনী হতে হবে?
মারাঠা সাম্রাজ্যের আরেকটি জনপ্রিয় ঐতিহাসিক স্থান তিকোনা ফোর্ট। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০৬৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। দুর্গটি ত্রিভুজাকার হওয়ার কারণে এমন নামকরণ। মুঘল যুগে দুর্গটি সম্রাটের দখলে চলে যায়। কিন্তু শিবাজি মহারাজ ১৬৭০ সালে পুনরুদ্ধার করেন এবং তারপরে তিকোনা ফোর্ট সম্ভাজি মহারাজের রাজত্বকাল পর্যন্ত মারাঠাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
ঘুরে দেখা যায় টাইগারস লিপ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। সারা বছর বহু পর্যটক জায়গাটা দেখার জন্য আসেন। টাইগারস লিপ নামকরণের কারণ পাহাড়ের আকৃতি অনেকটা লাফ দেওয়া বাঘের মতো। অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন যাঁরা, তাঁদের জন্য আদর্শ জায়গা। অনেকেই ট্রেকিং এবং হাইকিংয়ের জন্য আসেন। এখানে আছে একটি ইকো পয়েন্ট এবং একটি ছোট জলের স্রোত। সবুজ প্রকৃতির কোলে নানা সময় জমে ওঠে পিকনিক।
দারুণ জায়গা ডিউকের নোজ। এই পয়েন্ট থেকে দেখা যায় খান্দালা ঘাটের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য। স্থানীয়ভাবে নাগফানি নামে পরিচিত। যার অর্থ কোবরা হুড। মনে করা হয়, ডিউকের নোজ নাম হয়েছে ডিউক অফ ওয়েলিংটন থেকে। মনোরম দৃশ্য, শান্ত পরিবেশ, চারপাশে সবুজ প্রকৃতি জায়গাটিকে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে করে তুলেছে। পাথুরে ভূখণ্ড এবং সরু ট্রেইলের কারণে এখানে অনেকেই ট্রেকিং, রক ক্লাইম্বিং এবং হাইকিংয়ের জন্য যান।
লোনাভালার ভাজা গুহা জায়গাটা ইতিহাসপ্রেমীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। একটি জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে চিহ্নিত। ভাজা গুহা পাথর-কাটা গুহাগুলোর একটি সেট। ভারতের প্রাচীনতম গুহার মধ্যে একটি। মনে করা হয়, গুহাগুলো খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় থেকে প্রথম শতাব্দীর। বৌদ্ধধর্মের হীনযান পর্বের অন্তর্গত। কাছেই আছে জলপ্রপাত। অনেকেই স্নান করেন। এই জায়গায় কিছুক্ষণ বেড়ালে মনের মধ্যে অদ্ভুত এক ভাললাগার জন্ম দেয়।
কীভাবে যাবেন?
মুম্বই থেকে লোনাভালা যাওয়ার অজস্র ট্রেন রয়েছে। এসি চেয়ার কারের ভাড়া ৩০৫ টাকা থেকে শুরু। এ-ছাড়া বাসেও যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে মোটামুটি ৩৮০ টাকা। পুণে থেকেও যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
এখানে বেশ কয়েকটি হোটেল এবং রিসর্ট রয়েছে। থাকা- খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। কয়েকদিন থাকার পরিকল্পনা করলে হোটেল রুম বুক করে যাওয়াই ভাল। মহারাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় হিল স্টেশন হওয়ার কারণে লোনাভালা সারা বছরই অসংখ্য পর্যটকেদের আকর্ষণ করে। সপ্তাহান্তে অত্যন্ত জমজমাট থাকে। মুম্বই এবং পুণে শহর থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। আসেন দূরের মানুষেরাও।

