প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । আছে সমুদ্র, পাহাড়, নদী, জঙ্গল। বহু মানুষ ছুটে যান। কয়েকদিন সময় কাটিয়ে আসেন। ওড়িশায় আছে কয়েকটি নেচার ক্যাম্প। অফবিট বলা যায়। কারণ খুব বেশি মানুষ জানেন না। তাই চোখে পড়ে না অতিরিক্ত ভিড়। যাঁরা একটু অন্যরকমভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটিয়ে মনকে তরতাজা করে নিতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ বেড়ানোর জায়গা এই নেচার ক্যাম্প। প্রথমেই মাথায় আসে টেনশা নেচার ক্যাম্পের (Tensa Nature Camp) কথা। এই ক্যাম্প সুন্দরগড়ে অবস্থিত। ছোট্ট ঢেউ-খেলানো গ্রাম। একটি প্রকৃতি শিবির। চারিদিকে পাহাড় আর জঙ্গল। সবুজে ঘেরা। ঘন বনের মধ্যে এই শিবির অ্যাডভেঞ্চার এবং বিশ্রাম-উপযোগী। মন ভাল করা পরিবেশ।
টেনশা নেচার ক্যাম্পের (Tensa Nature Camp) আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম তাহেরিয়া ফলস। ক্যাম্প থেকে এক ঘণ্টার দূরত্ব। গভীর জঙ্গলের মধ্যে। সেল আর মাইনিং এরিয়াও ঘুরে নেওয়া যায়। এটা ফলস যাওয়ার পথেই পড়বে। প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হয়। সেটা করিয়ে দেন ক্যাম্পের ম্যানেজার। করা যায় জঙ্গল ট্রেকিং। সকাল বেলা চা খেয়েই বেরিয়ে পড়তে হয়। সঙ্গে নিতে হয় ক্যাম্পের কাউকে। একা একা না যাওয়াই ভাল।
সকালবেলা ঘুরে আসা যায় রাউরকেল্লা থেকে। দু ঘণ্টার পথ। দেখে আসা যায় খণ্ডধরা ফলস। অপূর্ব দৃশ্য। ৭০০টি সিঁড়ি উঠতে হয় ফলস দেখতে। কষ্ট হলেও ওঠা যায়। চিন্তা নেই, মাঝে আছে জঙ্গলের ছাওয়ায় বসার জায়গা। ফলসের নিচে ওঠার মুখে রয়েছে পিকনিক স্পট। প্রচুর মানুষের ভিড়। এখানে আছে থাকার রুম। ফলসে ঢুকতে টিকিট লাগে। ২৫ টাকা। তবে আধার কার্ড দেখালে ১০ টাকা! দার্জিং ভিউ পয়েন্ট ও বাবা বীরেশ্বর মন্দির ঘুরে আসা যায়। এন্ট্রি ফ্রি গাড়ি সমেত ৩৫০ টাকা। রাস্তার ধারে দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে নেওয়া যায়। যাওয়া যায় বেদব্যাস টেম্পল এবং ওড়িশার সবচেয়ে বড় হনুমান মন্দির। অনেকেই ঘুরে দেখেন রাউরকেল্লা চিড়িয়াখানা। টিকিট ২০ টাকা। আছে পার্ক। ঘোরা যায় টয়ট্রেনে চড়ে। টয় ট্রেনের ভাড়া ২৫ টাকা। সবমিলিয়ে এক আনন্দ-ভ্রমণ।
আরও পড়ুন- ‘বুঝতে একটু দেরি হয়, কোনটা পথ, কোথায় বা যাব’
টেনশা নেচার ক্যাম্প (Tensa Nature Camp) থেকে এক দিনের জন্য ঘুরে আসা যায় দেরাস নেচার ক্যাম্প থেকে। ৬ ঘণ্টার পথ। বিস্তীর্ণ ঘন সবুজ অরণ্য। সুনীল জলরাশি। অদূরে ছোট ছোট পাহাড়। পাখির কিচিরমিচির। দূষণমুক্ত বাতাস। ভ্রমণপিপাসুদের পক্ষে এমন অমোঘ আকর্ষণ উপেক্ষা করা কঠিন। উপেক্ষা করা উচিতও নয়। দেরাস নেচার ক্যাম্পে প্রকৃতি যেন রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছে। এখানে আছে চান্দাকা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি। ভুবনেশ্বর থেকে চান্দাকা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙ্কচুয়ারির দূরত্ব ৪৪ কিলোমিটার এবং কটক থেকে ৩৬ কিলোমিটার। পারাদীপ থেকে ১১৯ কিলোমিটার। সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। রাস্তা খুব ভাল। কোনও টোল গেট পার করতে হয় না। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের সুব্যাবস্থা না থাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে অথবা গাড়ি ভাড়া করে যেতে হয়। যাত্রাপথে পেট্রোল পাম্প এবং খাবার জায়গা— দুটোরই অভাব। তাই রওনা হবার আগে গাড়ির ট্যাঙ্ক ভরে নিতে হবে আর খাবার, পানীয় জল সঙ্গে নিয়ে নিতে হবে।
ফরেস্টে প্রবেশের দুটি দ্বার আছে—দেরাস এবং গোদিবারি। রিজার্ভেশন রিসিপ্টের ফটোকপি দেখাতেই খুলে দেওয়া হয় ফরেস্ট গেট। ভিতরে প্রবেশ করা মাত্র মন চলে যায় অন্য জগতে। জঙ্গলের ভিতরের মাটির রাস্তা। আর তার দুইৃ-ধারে সারিবদ্ধ গাছ। রাস্তাটি গিয়েছে দেরাস ড্যামের পাশ দিয়ে। বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে ক্যাম্পটি। চারদিক সুন্দর, প্রশস্ত এবং পরিচ্ছন্ন। নিজস্ব গাড়িতে জঙ্গল পরিভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয় না। বন দফতরের নির্ধারিত সাফারিতেই একমাত্র জঙ্গল ঘোরা যায়। আড়াই ঘণ্টার সাফারির খরচ ১৬০০ টাকা। গাড়িতে মোট ৮ জন বসতে পারেন। সকাল ৬টা থেকে সাফারি শুরু হয়। এখানে রয়েছে একটি ওয়াচটাওয়ার, যেখান থেকে দেখা যায় সুবিস্তৃত ঘন সবুজের সঙ্গে ড্যামের নীল জলরাশি। একটি মন মাতানো দৃশ্য। ১৭৬ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই জঙ্গল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই জঙ্গলে রয়েছে হাতি, চিতাবাঘ, হরিণ, বুনো শুয়োর প্রভৃতি বন্যপ্রাণী এবং বিভিন্ন পাখির দল। ঘোরা শেষ হলে ফিরে আসা যায় টেনশা নেচার ক্যাম্পে। নাহলে সরাসরিও ফেরা যায়। যাই হোক, হালকা শীতের মরশুমে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন।