রাজস্থানের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে অন্যতম বিকানের (Bikaner)। থর মরুভূমির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এক রঙিন মরূদ্যান। এখানে আধুনিক ও প্রাচীন সংস্কৃতির মনোমুগ্ধকর মিশ্রণ দেখা যায়। এটা একটা ঐতিহাসিক শহর, যেখানে বিশাল দুর্গ, বিশাল প্রাসাদ, বিখ্যাত মন্দির, অবিশ্বাস্য স্থাপত্যে সমৃদ্ধ। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, বিকানের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাও বিকা। তার আগে অঞ্চলটি ছিল নির্জন। বনজঙ্গলে ঘেরা। চিন, ইরান এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য পথে অবস্থানের কারণে বিকানের সমৃদ্ধ হয়েছে। ভ্রমণের সেরা সময় শীতকাল। এই সময় সকাল-সন্ধ্যায় বেশ ঠান্ডা থাকে। আবহাওয়া থাকে মনোরম। ফলে সহজেই বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়। জানুয়ারিতে এখানে আন্তর্জাতিক উট উৎসবের আয়োজন করা হয়, যা সারা বিশ্বের দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম জুনাগড় দুর্গ। ১৪৭৮ সালে রাও বিকা নির্মাণ করেছিলেন। দুর্গকে ঘিরেই বিকানের শহর গড়ে ওঠে। অনেক রাজপুত শাসক দুর্গটি সংস্কার করেছিলেন। ফলস্বরূপ, আজ জুনাগড় দুর্গ রাজস্থানের সবচেয়ে বিখ্যাত দুর্গগুলোর মধ্যে একটি।
ঘুরে আসা যায় গজনার প্রাসাদ। মহারাজা গঙ্গা সিংহের আদেশে নির্মিত। রাজস্থানি এবং ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলী দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত।
অন্যতম দর্শনীয় স্থান লালগড় প্রাসাদ। বিকানেরের (Bikaner) রাজা মহারাজা গঙ্গা সিং ১৯০২ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে তৈরি করেছিলেন। অসাধারণ স্থাপত্য। স্বতন্ত্র ইউরোপীয় প্রভাব রয়েছে।
রামপুরিয়া হাভেলি বিকানেরের দর্শনীয় হাভেলিগুলোর মধ্যে একটি। ধনী বণিকরা প্রায় ৪০০ বছর আগে তৈরি করেছিলেন।
আরও পড়ুন-বিজেপি মুক্ত বাংলা গড়ুন: আর কতদিন এভাবে চালাবেন? আর কতদিন এভাবে জ্বালাবেন?
এখানে রয়েছে উটের উপর জাতীয় গবেষণা কেন্দ্র। বিভিন্ন প্রজাতির উটের প্রজনন করানো হয়। ঘুরে দেখা যায়। রয়েছে উটের পিঠে চড়ার সুযোগ। পাশাপাশি জানা যায় উট সম্পর্কে।
বিকানেরের বিখ্যাত মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি হল ভাদাসার জৈন মন্দির। সুন্দর চিত্রকর্ম এবং লাল বেলেপাথরের উপর ব্যতিক্রমী খোদাই রয়েছে। ষোড়শ শতকে বিকানেরের ধনী জৈন বণিক ভান্ডা শাহ নির্মাণ করেন।
দেখার মতো জায়গা করণী মাতা মন্দির। বিকানেরের কাছে দেশনোকে শহরে অবস্থিত। মন্দিরটি সারা ভারতে ‘ইঁদুর মন্দির’ নামে বিখ্যাত। এখানে নাকি ২৫০০০-এরও বেশি ইঁদুর রয়েছে!
বিকানেরের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি হল দেবী কুণ্ড সাগর। এখানে রাজকীয় স্মৃতিস্তম্ভ এবং সমাধিস্তম্ভ দেখা যায়। রাজপরিবারের সদস্যদের দ্বারা সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত সমস্ত স্মৃতিস্তম্ভের স্থাপত্য সৌন্দর্য অসাধারণ।
বহু দর্শনার্থী ভিড় জমান কোডামদেশ্বর মন্দিরে। এটা ভগবান শিবের এক ভয়ঙ্কর অবতার ভৈরনের মন্দির। বিকানেরের প্রতিষ্ঠাতা রাও বিকা মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরে একটি মেলা বসে, যেখানে অনেক কারিগর আসেন। তাঁদের কাছ থেকে রাজস্থানি হস্তশিল্পের জিনিসপত্র সংগ্রহ করা যায়।
দেখার মতো জায়গা সাদুল সিং জাদুঘর। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। এখানে নানারকম চিত্রকর্ম, পোশাক, অস্ত্র, শিকারের স্মারক এবং অন্যান্য বিরল জিনিসপত্র সুসজ্জিত রয়েছে।
ঘুরে আসা যায় শিব বারী মন্দির। প্রধান দেবতা ভগবান শিব। মন্দিরটি লাল বেলেপাথরে তৈরি। ভিতরে দেওয়ালচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। গোপীদের সঙ্গে নৃত্যরত শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি-সহ অন্য মূর্তিগুলো দুর্দান্ত শৈল্পিক দক্ষতায় খোদাই করা হয়েছে।
গঙ্গা সিং জাদুঘরে রয়েছে হরপ্পা যুগের কিছু সেরা নিদর্শন। প্রদর্শিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে আছে পোড়ামাটির মৃৎশিল্প, চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, কার্পেট, মুদ্রা, অস্ত্র এবং প্রতিকৃতি। এছাড়াও আছে শিকারের ট্রফি, সম্রাট জাহাঙ্গিরের রেশমি পোশাক এবং উটের চামড়ার উপর সোনার পাতাযুক্ত চিত্রকর্ম।
সুরসাগর হ্রদ বিকানেরের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। মহারাজা সুর সিং-এর নামে এই হ্রদের নামকরণ করা হয়েছিল।
অন্যতম দর্শনীয় স্থান লক্ষ্মীনিবাস প্রাসাদ। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী। ১৮৯৮ থেকে ১৯০২ সালের মধ্যে বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি স্যার স্যামুয়েল সুইন্টন জ্যাকব তৈরি করেছিলেন।
লক্ষ্মীনাথ মন্দির বিকানেরের প্রাচীনতম মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি। মহারাজা রাও লুনাকরণ চতুর্দশ শতকে নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরের প্রধান দেবতা ভগবান বিষ্ণু এবং দেবী লক্ষ্মী।
গজনার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘুরতে দারুণ লাগে। এটা গজনের প্রাসাদের কাছে অবস্থিত এবং বিকানেরের মহারাজাদের শিকার-ক্ষেত্র ছিল। কৃষ্ণসার হরিণ, বন্য-শুয়োর, নীলগাই, খরগোশ-সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখার জন্য অন্যতম সেরা জায়গা। এই অভয়ারণ্যে উট সাফারি এবং জিপ সাফারির সুযোগ রয়েছে।

