হাতছানি দেয় সোলাং ভ্যালি

হিমাচলপ্রদেশের আকর্ষণীয় জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম সোলাং ভ্যালি। সবুজ মাঠ এবং তুষার-শুভ্র পর্বতশৃঙ্গ দিয়ে ঘেরা। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। এখানে রয়েছে প্যারাগ্লাইডিং, স্কিইং, স্নোবোর্ডিং, জোর্বিং, ট্রেকিং, ক্যাম্পিং করার সুযোগ। আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। গরমের মরশুমে ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

বাঙালির পায়ের নিচে সর্ষে। সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে। ঘুরে আসে দূরে কোথাও, নাহলে কাছেপিঠে। যদিও গরমের মরশুমে বহু মানুষ বেড়াতে যেতে সাহস পায় না। তবে আমাদের দেশে এমন কিছু জায়গা আছে, যেসব জায়গায় গরমে বেড়াতে গেলে আরাম পাওয়া যায়। শরীরে ও মনে। তেমনই একটি জায়গা সোলাং ভ্যালি (solang valley)। কেউ কেউ বলেন সোলাং উপত্যকা। সোলাং ভ্যালি সোলাং নালা নামেও পরিচিত। এর নাম দুটি শব্দের সংমিশ্রণ থেকে এসেছে। সোলাং এবং নাল্লা। সোলাং মানে ‘কাছাকাছি গ্রাম’ এবং নাল্লা মানে ‘জলের স্রোত’।

মানালি থেকে লেহ-মানালি হাইওয়ে ধরে রোটাং পাস যাওয়ার পথে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সোলাং ভ্যালি হিমাচল প্রদেশের আকর্ষণীয় জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম। সমুদ্রতল থেকে ৮ হাজার ৪০০ ফুট উঁচুতে এর অবস্থান। সব সময়ে জমজমাট থাকে। কুলু জেলার সোলাং ভ্যালি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। বছরের পর বছর ধরে উত্তর ভারতের স্কি স্বর্গ হিসেবে পর্যটকদের কাছে খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানে অনেক স্কি এজেন্সি দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে ঘন জঙ্গলের মাথার উপর দিয়ে প্যারাগ্লাইডিং করে ডানা মেলে পাখির মতো ওড়ার মজাই আলাদা। পাশাপাশি করা যায় স্নোবোর্ডিং, জোর্বিং। সেইসঙ্গে রয়েছে ট্রেকিং, ক্যাম্পিং করার সুযোগ।

আরও পড়ুন- সোনার ঝাঁটা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী উপার্জন থেকে

সোলাং ভ্যালি (solang valley) সবুজ মাঠ এবং তুষার-শুভ্র পর্বতশৃঙ্গ দিয়ে ঘেরা। এখানে প্রাকৃতিক দৃশ্যের মুগ্ধতা উপভোগ করতে হয়। ভ্রমণের জন্য সেরা সময় এপ্রিল থেকে অক্টোবর। এই সময়ে আবহাওয়া মনোরম থাকে।
সোলাং ভ্যালি এবং আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। কাছেই আছে একটি আকর্ষণীয় টানেল। যা হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত। এই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। সোলাং ভ্যালি থেকে সিসু হ্রদও একটি আকর্ষণীয় জায়গা। এখানে সুন্দর পরিবেশে সময় কাটানো যায়। ঘুরে আসা যায় মানালি। এখানে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। তারমধ্যে অন্যতম রোহতাং পাস। পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে রোহতাং পাসে যেতে হয়। এখানে এলে দেখা যায় শ্বেতশুভ্র সুবিশাল পাহাড়ের সারি আর বিশাল বিশাল প্রস্থর খণ্ড। যারা আইস স্কেটিং, টবগ্যানিং ইত্যাদি ভালবাসেন তাঁদের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা আছে। যেহেতু সেখানকার আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা তাই সেখানে ওভারকোট, বুট ইত্যাদি ভাড়ায় পাওয়া যায়।
রাহালা জলপ্রপাত দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না। এটা রোহতাং পাস থেকে ফেরার পথে পড়বে। দেখা যায় কীভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে কুলকুল শব্দ করে জলরাশি নেমে বিপাশা বা বিয়াস নদীতে গিয়ে মিশছে।
যাওয়া যায় ডেট গুলাবা। এখান থেকে চমৎকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। রেহালা জলপ্রপাত থেকে খানিকটা দূরে ডেট গুলাবার অবস্থান।

দেখতে হবে বিয়াস নদীর সৌন্দর্য। বলা যায়, এই নদী আসলে প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়। দৈর্ঘ্য ৪৭০ কিলোমিটার। পাঞ্জাবের সুটলেজ নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই নদীর জল ভীষণ ঠাণ্ডা আর এর স্রোত বেশ বিপজ্জনক। যারা রিভার রাফটিং করতে ভালবাসেন, তাঁদের জন্য এখানে রাফটিং-এর ভাল ব্যবস্থা আছে।
মানালি ম্যাল থেকে ওল্ড মানালি দুই কিলোমিটার, সেখান থেকে আবার মনু মন্দির এক দেড় কিলোমিটার চড়াই। আর আছে ক্লাব হাউস। এখানে দোকানপাট আর বাচ্চাদের নানান অ্যাকটিভিটি গেমস। সাধারণ টুরিস্ট দিনের বেলা সাইটসিয়িংয়ে এসে মনু মন্দির আর ক্লাব হাউস দেখে ফিরে যান। সন্ধ্যাবেলায় ক্যাফেগুলোয় লাইভ মিউজিক হয়। তখন পরিবেশটা পাল্টে যায়।

মানালসু নদীর ধারে ক্যাফেতে বসতে ভালই লাগবে। নদীর ধার বরাবর দিয়ে একটি হাইকিং ট্রেলও আছে। মানালি সাইটসিইংয়ের অন্যতম আকর্ষণ হল বশিষ্ঠ মন্দির। এই মন্দিরের পাশে বশিষ্ঠ গ্রাম। মন্দিরের সামনের দিকে দোকানপাট, গাড়ি পার্কিং। কিন্তু পিছন দিকটা শান্ত নিরিবিলি। অনেক বিদেশি এখানে এসে থাকেন। লম্বা ছুটি কাটিয়ে যান। সামনের পাহাড়ের ভিউ অসাধারণ। মানালি ঘুরে ট্যাক্সি বা অটো রিকশার মাধ্যমে সোলাং ভ্যালি ফিরে আসা যায়। চাইলে প্রথমে সোলাং ভ্যালি (solang valley), পরে মানালি ঘুরে বাড়ি ফেরা যায়। আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। এটুকু বলা যায়, এই ভ্রমণ মনকে অন্যরকম আনন্দ দেবে। সোলাং ভ্যালিতে বিভিন্ন ধরনের পর্যটন প্যাকেজ পাওয়া যায়। বাজেট এবং ইচ্ছামতো একটি প্যাকেজ বেছে নিতে পারেন।

Latest article