শ্রীলঙ্কার হাতছানি

পুজোর ছুটিতে বিদেশ ভ্রমণে যেতে চান? ঘুরে আসুন শ্রীলঙ্কা। সমুদ্রে ঘেরা ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। আছে পাহাড়, জঙ্গল। এছাড়াও আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। প্রতিবেশী দেশটি বয়ে নিয়ে চলেছে সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারা। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

সমুদ্রে ঘেরা দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। প্রাকৃতিক বৈচিত্রে ভরা। এশিয়ার অন্যতম সুন্দর দেশ। বয়ে নিয়ে চলেছে সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারা। সারা বছরই বিশ্বের অসংখ্য পর্যটক ভ্রমণে যান। ভারতীয় পর্যটকদের কাছেও পছন্দের গন্তব্য। বহু মানুষ মিটিয়ে নেন বিদেশ ভ্রমণের সাধ। ভ্রমণ নিজে আলাদা ভাবে করা যায়, আবার কোনও ট্যুর সংস্থার সঙ্গেও করা যায়। অনলাইনে সুবিধা থাকায় ভিসার ঝামেলা কম। শ্রীলঙ্কাকে বলা হয় ‘ভারত মহাসাগরের মুক্তো’। আছে পাহাড়, জঙ্গল। এ ছাড়াও আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান।

কলম্বো
শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) সবচেয়ে বড় শহর কলম্বো। শহরটি যেন ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক প্রদর্শনীকেন্দ্র। পর্যটকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। স্থাপত্যকলায় রয়েছে ডাচ, পর্তুগিজ ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ছাপ। ডাচ জাদুঘর এবং স্বাধীনতা চত্বরে দাঁড়ালে দেশটির ঔপনিবেশিক ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। কলম্বোর জাতীয় জাদুঘরে গেলেও দেশটির সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে পাওয়া যায় ধারণা। দেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্য দেখার জন্য গঙ্গারাময় মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির, হিন্দু মন্দির, জামে উল-আলফার মসজিদ ঘুরে আসতে পারেন। কলম্বোর ঐতিহাসিক ডাচ হাসপাতাল, পোর্ট কলম্বো এলাকা ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে উঁচু ভবন কলম্বো লোটাস টাওয়ার। ৩৫০ মিটার উঁচু এই টাওয়ার থেকে পুরো কলম্বোর নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বেইরা লেকে নৌকাভ্রমণ করা যায়। সময় থাকলে ঘুরে আসা যায় শহরের সবচেয়ে বড় পার্ক বিহারামহাদেবীও। আছে বেশকিছু রেস্তোরাঁ। স্থানীয় খাবারের স্বাদ পেতে হলে যেতে হবে পেত্তাহ মার্কেটে। কলম্বো শহরের দুর্গাপুজো দেখতে ভুলবেন না।

সিগিরিয়া
১৮০ মিটার উঁচু এক বিশাল পাথরখণ্ডের চূড়ায় অবস্থিত সিগিরিয়া। ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। অনেকে রকটিকে ‘মেঘের প্রাসাদ’ বলেন। পাথর বেয়ে উঠতে ও নামতে হয়। অনেক সময় লাগে। তবে উপর থেকে যে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়, তাতে পরিশ্রম সার্থক মনে হয়। এছাড়া দেখতে পারেন পিডুরাঙ্গালা রয়্যাল কেভ টেম্পল, প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির, বিশালাকার পিডুরাঙ্গালা পাথরখণ্ড এবং রয়্যাল কেভ টেম্পল, যেটি আরেকটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। বন্য এশিয়ান হাতি দেখতে চাইলে ও জিপ সাফারি উপভোগ করতে হলে মিনেরিয়া ন্যাশনাল পার্কে যেতে পারেন।

অনুরাধাপুরা
অনুরাধাপুরা শ্রীলঙ্কার উত্তরপ্রদেশের একটি পুরানো শহর। গোড়াপত্তন হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে। কথিত আছে, বোধিগাছ কেটে এই শহরটি তৈরি করা হয়েছিল। এই বোধিগাছের নিচে বসেই গৌতম বুদ্ধ নাকি জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। শহরটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়। বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে উইলপাত্তু জাতীয় উদ্যানে যেতে পারেন। ভাগ্য সহায় থাকলে মিলতে পারে শ্রীলঙ্কান চিতাবাঘের দেখা।

ক্যান্ডি
অন্যতম সুন্দর শহর ক্যান্ডি। পাহাড়বেষ্টিত। দেখা যায় অসংখ্য চা-বাগান। ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ শ্রীদালাদা মালিগাওয়া এবং শ্রীমহাবোধি দেখার মাধ্যমে ক্যান্ডি-দর্শন শুরু করা যায়। শহরে আছে ‘টেম্পল অব টুথ’, যেখানে বুদ্ধের দাঁতের অংশবিশেষ সংরক্ষিত আছে। ক্যান্ডির রাজাদের সম্পর্কে জানা যায় ক্যান্ডি জাতীয় জাদুঘর এবং ক্যান্ডি রয়্যাল প্যালেসে গেলে। শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) ঔপনিবেশিক ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে ব্রিটিশ গ্যারিসন সেমিটারি এবং কমনওয়েলথ ওয়ার সেমিটারিতে যেতে পারেন। ক্যান্ডির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সেরা জায়গা উদায়াত্তাকেলে স্যাংচুয়ারি এবং রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন। শ্রীলঙ্কার চা-সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে যেতে হবে সিলন টি মিউজিয়ামে। আছে বেশকিছু হোটেল, রেস্টুরেন্ট। স্থানীয় খাবারের স্বাদ উপভোগ করা যায়।

আরও পড়ুন- কত কী সব মিছিল হায়, বিচার বিচার বিচার চায়…

গল
শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল পর্তুগিজরা। পরবর্তীতে ডাচ ও ব্রিটিশদের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ ছিল। শহরের সর্বত্র ইউরোপীয় স্থাপত্যকলার উপস্থিতি চোখে পড়ে। গল ফোর্ট এখন ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। গল ফোর্ট ও গল লাইটহাউজ ঘুরে দেখা যায়। এখানকার সমুদ্র সৈকত সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা।

নুয়ারা এলিয়া
স্থানীয়ভাবে ‘লিটল ইংল্যান্ড’ নামে পরিচিত। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ১২৮ ফিট উঁচুতে পাহাড়ের উপর অবস্থিত। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তাই শহরটিকে প্রকৃতির স্বর্গ বলা হয়। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে হর্টন প্লেইনস ন্যাশনাল পার্ক, পেড্রো টি স্টেট, মুন প্লেইন, গ্রেগরি লেক, গালওয়’স ল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক।

জাফনা
পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। তামিল ও শ্রীলঙ্কান-উভয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন দেখা যায়। ডাচ ও পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। ১৬১৯ সালে পর্তুগিজরা তৈরি করেছিল দুর্গ। ৪০ বছর পরে ডাচরা করেছিল সংস্কার। শহরটি সম্পর্কে আরও ভালভাবে জানতে হলে জাফনা পাবলিক লাইব্রেরি ও জাফনা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে যেতে পারেন। পুরোনো মন্দিরগুলো ঘুরে দেখা যায়।

Latest article