থাইল্যান্ড (Thailand) অনেকের পছন্দের দেশ। বহু মানুষ বেড়াতে যান। ভ্রমণ এখন অনেক সহজ। কারণ থাই সরকার ভারতীয়দের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের মেয়াদ ১১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ওই দেশের দুটি শহর পর্যটকদের বেশি প্রিয়। ব্যাংকক এবং পাটায়া। নিজেদের সুবিধামতো ঘোরা যায়। অথবা নেওয়া যায় প্যাকেজ ট্যুরের সুবিধা। পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন। সফর শুরু হোক ব্যাংকক দিয়ে।
ব্যাংকক
রঙিন শহর ব্যাংকক। থাইল্যান্ডের (Thailand) রাজধানী। চাও ফ্রায়া নদীর তীরে অবস্থিত। অদূরেই সমুদ্র। শহরের মধ্যেই আছে দর্শনীয় অনেক কিছু। জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম গ্র্যান্ড প্যালেস। ১৭৮২ সাল থেকে এই প্যালেস থাইল্যান্ডের রাজা ও রয়্যাল কোর্টের সরকারি ভবন। দেখা যায় বৌদ্ধ মন্দির ওয়াট অরুণ। ‘দ্যা টেম্পল অফ ডন’ নামেও পরিচিত। গ্র্যান্ড প্যালেসের বিপরীতে চাও ফ্রায়া নদী জুড়ে এই মন্দিরের বিস্তৃতি। ওয়াট ফ্রা কাইয়ো একটি বৌদ্ধ মন্দির। গ্র্যান্ড প্যালেসের ভিতরে অবস্থিত। ব্যাংককের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ফ্লোটিং মার্কেট। কাঠের নৌকায় সাজানো থাকে নানান পণ্য। জলের উপর চলে কেনাবেচা। আকর্ষণীয় বৌদ্ধ মন্দির ওয়াট ফো। এই মন্দিরকেই ব্যাংককের ঐতিহ্যবাহী থাই ম্যাসাজের জন্মস্থান মনে করা হয়। অবশ্যই যাবেন লুম্ফিনি পার্ক। শান্ত পরিবেশ। আছে কৃত্রিম লেক। শহরের মধ্যে আরেক শহর চায়না টাউন। আনন্দ ও মজা করার জন্য রয়েছে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা। থাইল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম। সংগ্রহশালা এতই বিশাল যে, ঘুরে ঘুরে দেখলে অর্ধেক দিন কেটে যাবে। সাফারি ওয়ার্ল্ড হল মুক্ত পরিবেশে বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য। ভালভাবে ঘুরে দেখার জন্য হাতে সময় নিয়ে যেতে হয়। এছাড়াও ঘুরে দেখা যায় ব্যাংকক ড্রিম ওয়ার্ল্ড, ওসান ওয়ার্ল্ড, মাদাম তুসো মিউজিয়ামের মতো জায়গাগুলো।
ব্যাংককে মেলে অরিজিনাল চাইনিজ ও থাই খাবার। পাওয়া যায় নানা ধরনের স্ট্রিট ফুড। পর্যটকদের জন্য বিশেষ স্পা-য়ের ব্যবস্থা আছে। রাতের ব্যাংককের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন চায়না টাউন, বাংলা রোড ও খাও সান রোড। মোটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘোরার ব্যবস্থাও রয়েছে। ব্যাংকক ভ্রমণ শেষে চলে যান পাটায়া। দূরত্ব ১৫৮ কিলোমিটার। আছে থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ বিমান এবং বাস।
আরও পড়ুন- অস্ত্রোপচার কমেছে ৫০%, রোগী ভর্তি ২৫%, রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে
পাটায়া
সমুদ্র সৈকত-ঘেঁষা শহর পাটায়া। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সি বিচের পাশাপাশি আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। ছোট-বড় সবারই ভাল লাগবে নং নুচ ট্রপিক্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন। এখানে আছে সপ্তদশ শতকের ফরাসি বাগান, ইউরোপিয়ান রেনেসাঁস— বাগান, অর্কিড ফুলের বাগান। এছাড়াও আছে লাইভ শো। তলোয়ার যুদ্ধ, ঐতিহ্যবাহী থাই নাচ ও থাই কিক বক্সিং উপভোগ করেন অনেকেই। শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জোমতিয়েন বিচ। সান বাথ করার সঙ্গে সঙ্গে জেট স্কিইং, কিইটস সার্ফিং, প্যারা সেলিং ও উইন্ড সার্ফিংকরার মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়। পাটায়া শহরের ধর্মপ্রাণদের জন্য এক ধর্মীয় প্রতীক খাও চি সায়ান পর্বত। এখানে গৌতম বুদ্ধের ছবি খোদাই করা আছে। দক্ষিণ পাতায়ার প্রতুম্নক পাহাড়ের উপর নির্মিত হয়েছে ১৮ মিটার লম্বা বিরাট আকারের বুদ্ধ মুর্তি। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১০০ মিটার উচুতে অবস্থিত। এই পাহাড় চূড়ায় রয়েছে পাটায়া ভিউ পয়েন্ট। পাটায়া শহর এবং সাগরের ভিউ দেখা যায়। থাইল্যান্ডের (Thailand) প্রথম জলের নিচে অবস্থিত আধুনিক অ্যাকুরিয়াম আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ড। কার্প জাতীয় কৈ মাছ, শার্ক ও হাঙ্গর খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে। সুন্দর বিচ কোরাল আইল্যান্ড। ভালভাবে দেখার জন্য সকাল সকাল পৌঁছতে হয়। ওয়াকিং স্ট্রিটের শেষ প্রান্ত থেকে ফেরি ছাড়ে। পাটায়া বিচ থেকে স্পিড বোটেও যাওয়া যায়। পাটায়া শহরের বিনোদনের কেন্দ্রস্থল ওয়াকিং স্ট্রিট। দিনেরবেলা শান্ত। রাতে অন্য রূপ। পাওয়া যায় বিনোদনের রকমারি উপকরণ। এছাড়াও ঘুরে দেখা যায় ফ্লোটিং মার্কেট, ওয়াকিং স্ট্রিট, টাইগার পার্ক ইত্যাদি।
পাটায়ার চাইনিজ ও থাই খাবার অবশ্যই টেস্ট করবেন। আছে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ। পাওয়া যায় নানা রকমের সি ফুড। ওয়াকিং স্ট্রিট বা বিচ রোডের পাশে বেশ কিছু বাঙালি রেস্তোরাঁ আছে। পাটায়া থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্প, সিল্কের জামা-কাপড়, গয়না, ব্যাগ, জুতো ও নানা ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স কেনা যায়। নাইট বাজারে পাওয়া যায় থাইল্যান্ডের নানা ধরনের জিনিস। যেমন সুভেনিয়র বা গরমের কাপড়। সবমিলিয়ে এই ভ্রমণে মনের মধ্যে জন্ম নেবে অফুরান আনন্দ।