ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ঋষিহাট (Rishihat)। দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত। এক অফবিট পর্যটন কেন্দ্র। ভিড় নেই একেবারেই। নির্জন নিরিবিলি পরিবেশ। থাকেন অল্প কয়েকজন পাহাড়ি মানুষ। চিরসবুজ এই গ্রামে রয়েছে ছোট ছোট কাঠের ঘরবাড়ি। হালকা শীতের আমেজ গায়ে মেখে ঘুরে আসতে পারেন। অবশ্যই সপরিবারে। যেতে পারেন বন্ধুদের সঙ্গেও। দলবেঁধে। তবে যাঁরা অকারণে হইহল্লায় মাতেন, তাঁদের এড়িয়ে যাবেন। কারণ হইহল্লায় প্রকৃতিকে যথাযথভাবে উপভোগ করতে পারবেন না।
ঋষিহাটে (Rishihat) সকালে ঘুম ভেঙে উঠে শুনতে পাবেন পাখির কিচিরমিচির। যেন পাঠশালায় নামতা পড়ছে বাধ্য ছাত্ররা। মিঠে নরম রোদ আদর ছড়ায় গাছের পাতায়, ঘাসের ডগায়। নানা রকমের গাছ, নানা রঙের ফুল। বুনোফুলের সৌন্দর্যও দেখার মতো। যদিও খুব বেশি মানুষ তাকান না। তাতে কী? কোনও কিছুর প্রত্যাশায় ফুল ফোটে না। সে ফোটে আপন খেয়ালে। সুবাস ছড়িয়ে যায়, সৌন্দর্য বিলিয়ে যায়। যাঁরা দেখার ঠিক দেখেন। রয়েছে বিভিন্ন রকমের বিরল প্রজাতির অর্কিডও।
খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে এককাপ গরম কফি হাতে চোখ মেলা যায় পাহাড়ের দিকে। অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি ছড়িয়ে পড়বে মনের গভীরে। জন্ম নেবে ভাললাগা। পাহাড়ি পথে হেঁটে বেড়াতে দারুণ লাগবে। তবে একা একা না বেরোনোই ভাল। যে-কোনও সময় পাহাড়ি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বন্যপ্রাণী।
ঋষিহাটে সবটাই অর্গানিক। এখানে যাঁরা বাস করেন তাঁরা প্রায় সকলেই স্থানীয় জনজাতির মানুষ। তাঁদের পেশা মূলত চাষবাস। ঘরের কাছে ধাপ চাষ করেন। ফলান অরগ্যানিক ফসল। ফলে একেবারে খাঁটি জিনিস পাওয়া যায়। সেই কারণেই এখানে খাবারে ভেজাল নেই বললেই চলে। বাতাস তো আরও নির্ভেজাল। সবথেকে বড় কথা, এখানে অরগ্যানিক চা-ও পাওয়া যায়। বাড়ির জন্য কিনতে পারেন।
আরও পড়ুন- হাজিরায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিই গ্রহণযোগ্য, বিজ্ঞপ্তি জারি নবান্নে
ঋষিহাটে দেখার জায়গা বিশেষ কিছু নেই। প্রধান আকর্ষণ মনোরম প্রকৃতি। রয়েছে ছোট ছোট চা-বাগান। আর? অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দু-চোখ ভরে যায়। এখান থেকে দেখা মেলে দার্জিলিংয়ের। অসাধারণ লাগে উপত্যকাটি। সবচেয়ে ভাল দেখা যায় দার্জিলিং শহর। কারণ দার্জিলিং পাহাড়ের ঠিক উল্টোদিকেই অবস্থিত ঋষিহাট। কাজেই ভিউ-এর দিক দিয়ে দেখতে গেলে জায়গাটি অসাধারণ।
এখানে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার একটি মন্দির। বেশিদিন আগের তৈরি নয়। বহু মানুষ যান। দর্শন করেন। এছাড়াও গ্রামের মধ্যে রয়েছে একটি সুন্দর মঠ, যার নাম ‘ধায়চেন পেমালিং গুম্বা’। আশেপাশের গ্রামের লোকেরা এখানে বুদ্ধজয়ন্তী বা বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে উপাসনা করতে আসেন। উৎসবটি জাঁকজমকপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী। ঋষিহাটের আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। হাতে সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বেড়ানোর জায়গা তাকদা ঋষিহাট থেকে মাত্র ৩৬ কিমি দূরে অবস্থিত। ঘুরে নিতে পারেন অর্কিড সেন্টার, ব্রিটিশদের তৈরি বাংলো ইত্যাদি।
ঋষিহাট (Rishihat) থেকে টাইগার হিল খুব একটা দূরে নয়। মাত্র ১৯ কিলোমিটার। চাইলে ঘুরে আসা যায়। টাইগার হিল থেকে দেখে নিতে পারেন কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
সময় নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন লামাহাটা গ্রামটি। ঋষিহাট থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে ইকো-পার্ক। কুয়াশা এবং মেঘমুক্ত থাকলে এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া যায়।
সবুজে মোড়া একটি গ্রাম তিঞ্চুলে। আশ্চর্য রকমের শান্ত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। অবস্থান ঋষিহাট থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে।
সময় বের করে ঘুরে আসতে পারেন ঘুম। ঋষিহাট থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। আছে মনাস্ট্রি। প্রকৃতি এখানে রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছেন।
সারা বছর মেঘ-পাহাড়ের খেলা চললেও, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঋষিহাটের পাহাড় যেন রূপসী হয়ে যায়। ঝকঝকে নীল আকাশ আর কাঞ্চনজঙ্ঘা তখন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। এটাই তো পাহাড় ঘোরার সেরা সময়।
কীভাবে যাবেন?
ঋষিহাট গ্রামটা যেহেতু দার্জিলিংয়ের একেবারে কাছেই, তাই দার্জিলিং থেকেই গাড়ি করে যেতে হবে। জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দার্জিলিং যাওয়ার গাড়ি, ট্রেকার বা বাস রয়েছে। সেখান থেকে আবার গাড়িতে যেতে হবে ঋষিহাটে।
কোথায় থাকবেন?
বিলাসবহুল হোটেল নেই ঋষিহাটে। রয়েছে খানকতক হোম-স্টে। ঘরোয়া পরিবেশ। থাকা-খাওয়ার অসুবিধা হবে না। যদি আগে থেকে হোম-স্টেতে জানিয়ে দেওয়া থাকে, তাহলে তারাই গাড়ি পাঠিয়ে দেবে জলপাইগুড়ি স্টেশনে। নিয়ে আসার জন্য। তাহলে আর যাওয়ার ঝঞ্ঝাট থাকবে না। এখানকার মানুষজনও খুব ভাল। অতিথিদের আপন করে নিতে বেশি সময় নেন না।